আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে ছলুল মদীনার মসজিদে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর পিছনে জামাতে নামাজ পড়েছিল। তার মৃত্যুর পর রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নিজের জামা মুবারক তার কাফনের কাপড়ে দান করেন। নিজে তার জানাজাও পড়েন। বোখারী শরীফে হযরত যাবের রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- বদরের যুদ্ধের সময় কিছু কুরাইশ সর্দার বন্দী হয়। তাদের মধ্যে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর চাচা হযরত আব্বাছও ছিলেন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম দেখলেন তার গায়ে জামা নেই। তখন তিনি ছাহাবাদের বললেন- তার গায়ে একটি জামা পরিয়ে দেয়া হোক। হযরত আব্বাছ রাদিআল্লাহু আনহু লম্বা ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ছাড়া অন্য কারো জামা তার গায়ে ঠিকমত লাগছিল না। ফলে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর জামা নিয়েই রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নিজের চাচা হযরত আব্বাছকে পরিয়ে দিয়েছিলেন। তার এ এহছানের বদলা হিসেবেই রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নিজের জামা মুবারক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর কাফনের কাপড়ের জন্যে দিয়েদেন। তার জানাযার নামাজ পড়ার পরেই এ আয়াত নাজিল হয়-
অলা তুছল্লি আলা আহাদিম মিনহুম মা-তা আবাদা। অলা তাক্কুম আলা ক্কবরিহি, ইন্নাহুম কাফারু বিল্লাহি অরাছুলিহি অ মাতু অহুম ফাছিক্কুন’।
আর তাদের মধ্য হতে কারো মৃত্যু হলে তার উপর কখনো নামাজ পড়োনা। আর তার কবরেও (মাগফিরাত কামনার জন্যে) দাঁড়িও না। তারাতো আল্লাহ ও তার রাছুলের সাথে কুফরী করেছে। আর ফাছিক অবস্থায় মারা গেছে।
— ছুরা তওবাহ, আয়াত ৮৪, তাফছীরে মাআ’রিফুল কোরআন- ৪র্থ- ৫৩৫ পৃঃ
কোরআন মাজীদে এ মুনাফিকদের অনেক আলামত বলা হয়েছে। এর মধ্যে তাদের নামাজের আলামত সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেছেন-
إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ، وَإِذَا قَامُوْا إِلَى الصَّلَوةِ قَامُوا كُسَالَى يُرَاءُ ونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلَّا قَلِيلاً -
নিশ্চয় মোনাফিকরা আল্লাহকে ধোকা দিচ্ছে। অথচ তারা নিজেরা নিজেদের ধোকায় পড়ে যাচ্ছে। আর তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন (নামাজের নিয়ম কানুন না মেনে) অলসভাবে দাড়ায়, লোক দেখান নামাজ পড়ে, আর নামাজের মধ্যে আল্লাহকে খুব কম স্মরন করে।
— ছুরা নিছা, আয়াত ১৪২
উপরে দু’আয়াতে জানা যায় যারা নামাজের ওয়াক্তের প্রতি লক্ষ্য রাখেনা, যারা নামাজের ওয়াক্তের মধ্যে নামাজ না পড়ে অন্য ওয়াক্তে নামাজ পড়ে, যারা নামাজের মধ্যে রুকু সেজদা পূর্নরূপে আদায় করেনা, নামাজের পরিনাম শান্তি অথবা শাস্তির ভয় করেনা, যারা লোকের সামনে নামাজ পড়ে কিন্তু একাকী হলে নামাজ পড়েনা, যারা আল্লাহকে কম স্মরণ করে এরা সকলেই মুনাফিক পর্যায়ভুক্ত। কাফির মুশরিকদের শাস্তির মত এ মুনাফিকদের শাস্তিও কঠিন এবং ভয়াবহ হবে। আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেছেন-
إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَحِدَ لَهُمْ نَصِيرًا -
নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে। আর তুমি তাদের জন্যে সেখানে কোন সাহায্যকারীও পাবেনা।
— ছুরা নিছা, আয়াত ১৪৫
إِنَّ اللَّهَ جَامِعُ الْمُنَفِقِينَ وَالْكَافِرِيْنَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعاً -
আল্লাহ তাআ’লা জাহান্নামের মধ্যে মুনাফিক ও কাফিরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।
— ছুরা নিছা, আয়াত ১৪০
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম একদিন নামাজের আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন-
انَّهُ ذَكَرَ الصَّلاَةَ يَوْماً فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَحَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ وَمَنْ لَمَّ يُحَافِظٌ عَلَيْهَا لَمَّ يَكُنْ لَهُ نُوْرٌ وَلا بُرْهَانٌ وَلاَ نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَ أَبِي بْنِ خَلْفٍ
যে নামাজের হেফাজাত করবে, উক্ত নামাজ তার জন্যে নূর, ইসলামের দলীল এবং কেয়ামতে মুক্তির অছিলা হবে। আর যে ব্যক্তি উক্ত নামাজের হেফাজাত না করবে, নামাজ তার জন্যে নূর, দলীল এবং মুক্তির অছিলা হবেনা আর কিয়ামতে কারুন, ফেরাউন, হামান এবং উবাই এবনে খালফের সঙ্গে তার হাশর হবে।
— আহমদ, তিবরানী ও ইবনে হাব্বান, আততারগীব ১ম - ৩৮৬ পৃঃ
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এরশাদ করেন-
وَمَنْ صَلَاهَا لِغَيْرِ وَقْتِهَا وَلَمْ يُسْبِغْ لَهَا وُضُوْءَهَا وَلَمْ يُتِمَّ لَهَا حُشُوْعَهَا وَلَا رُكُوْعَهَا وَلاَ سُجُوْدَهَا خَرَجَتْ وَهِيَ سَوْدَاءٌ مُظْلِمَةٌ تَقُوْلُ ضَيْعَكَ اللهُ كَمَا ضَيَّعْتَنِيْ حَتَّى إِذَا كَا نَتْ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ لُفَّتْ كَمَا يُلَفُ الثَّوْبُ الْخَلَقُ ثُمَّ ضُرِبَ بِمَا وَجْهُهُ -
এবং যে ব্যক্তি ওয়াক্ত ব্যতীত অন্য ওয়াক্তে নামাজ পড়লো, আর পুর্নরূপে অজু করলো না, নামাজের মধ্যে পুর্নভাবে খুশু আদায় করলো না, রুকু এবং ছেজদা সঠিকভাবে আদায় করলো না, তার নামাজ কালো অন্ধকার অবস্থায় উঠে যায় এবং তার নামাজ বলতে থাকে আল্লাহ তোমাকে ধ্বংশ করুক যেমন তুমি আমাকে ধ্বংস করেছ, এরপর উক্ত নামাজ ছেড়া কাপড়ের পুটলীর ন্যায় নামাজীর মুখে ছুড়ে মারা হয়।
— তিবরানী এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আততারগীব ১ম - ২৫৮ পৃঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার দলের লোকজন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর পিছনে মছজিদে নববীতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েছে। কিন্তু নামাজ কায়েমের মাধ্যমে নিজেরা লজ্জাহীন খারাপ স্বভাব ও অসৎ চরিত্র দূর না করার ফলে কারুন, ফিরআউন, হামান এবং উবাই এবনে খালফের মতো অভিশপ্ত কাফিরদের সঙ্গে জাহান্নামে শাস্তিভোগ করবে।
যে মছজিদের এক রাকআত নামাজ পড়া পৃথিবীর অন্যান্য মছজিদের পঞ্চাশ হাজার রাকআত নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। আর রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এমন রাছুল যার উম্মত হওয়ার জন্যে সকল নবী-রাছুলগণ আকাংখা পেশ করেছেন, সেই মর্যাদা সম্পন্ন রাছুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর মছজিদে বছরের পর বছর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পরেও রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর নামাজ অনুযায়ী নামাজ আদায় না করার কারণে কাফিরদের সাথে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন-
আমার জামা তাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারবেনা।
— মুছলিম, মাআ’রেফুল কোরআন ৪র্থ খন্ড ৫৩৭ পৃঃ
রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাহি অছাল্লাম বলেন-
فَقَالَ له - وَمَا يُغْنِي عَنْهُ قَمِيصِي وَ صَلَاتِي مِنَ اللَّهِ وَاللَّهِ إِنِّي كُنتُ أَرْجُوا أَنْ يُسْلِمَ بِهِ أَلْفُ مِنْ قَوْمِهِ -
আমার জামা দেয়া ও আমার জানাজা পড়া তাকে (আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে) আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারবে না...।
— মাজহারী ৪র্থ ২৭৭ পৃঃ
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৪) নামাজী কোন নামাজে জাহান্নামে যাবে | (০১৬) রাছুলুল্লাহ (সঃ) এর নামাজ শিক্ষা দান |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |