الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيمًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِي خَلْقِ السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحْنَكَ
فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ -
(যাহারা দাঁড়াইয়া, বসিয়া ও শুইয়া আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে, 'হে আমাদের প্রভুপালক! তুমি ইহা নিরর্থক সৃষ্টি কর নাই, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদিগকে অগ্নিশাস্তি হইতে রক্ষা কর)।
সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৯১
ব্যাখ্যাঃ যাঁরা প্রকৃত আলেম, তাঁরা দাঁড়িয়ে বসে শুয়ে- সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ জিকিরে মগ্ন থাকেন। জ্ঞানীগণের এটাই প্রধান বৈশিষ্ট্য। সার্বক্ষণিক জিকির, তসবীহ, ইস্তেগফার, দোয়া, বিনয়- ইমান ও জ্ঞানের পরিচয়। যারা এই বৈশিষ্ট্যাবলীমুক্ত, তারা চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষা নিকৃষ্ট। কেননা চতুষ্পদ জন্তুরাও তাদের নিজস্ব নিয়মে জিকিররত থাকে।
সাধারণ তাফসীরকারগণের অভিমত এই যে, সার্বক্ষণিক জিকিরের কথা বলা হয়েছে এই আয়াতে। কেননা মানুষ সকল সময় দাঁড়ানো, বসা অথবা শোয়া অবস্থাতেই থাকে। রসুলে পাক স. বলেছেন, যে ব্যক্তি জান্নাতের বাগানে পরিভ্রমণ করতে চায়, সে যেনো আল্লাহর জিকির অত্যধিক পরিমাণে করে। হাদিসটি হজরত মুয়াজ থেকে বর্ণনা করেছেন ইবনে আবী শায়বা এবং তিবরানী।
জিকির এর পরে এখানে বলা হয়েছে ফিকির (চিন্তা) এর কথা। বলা বাহুল্য, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করা ইবাদত। একে বলে 'তাফাক্কর'। এই বিশাল রহস্যময় সৃষ্টি আল্লাহতায়ালার অপার ক্ষমতাকে নির্দেশ করে। তাঁর মহাপ্রজ্ঞা, মহাকৌশল এবং তাঁর অতুল এককত্বকে প্রমাণ করে। হজরত আলী রা. বলেছেন, রসুলে পাক স. এরশাদ করেছেন, তাফাকুরের মতো কোনো ইবাদত নেই।
হজরত আবু হোরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রসুল স. বলেছেন, এক ব্যক্তি রাতে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিলো বিস্ময়ঘেরা নক্ষত্রমণ্ডলে। সে অভিভূত হলো এবং সাক্ষ্য দিলো, নিশ্চয়ই আমার প্রভুপালক সত্য। আমার স্রষ্টা সত্য। হে আমার আল্লাহ্! তুমি দয়া করে আমাকে মার্জনা করো। আল্লাহ্পাক তার প্রতি রহমত বর্ষণ করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন। আবু শায়েখ, ইবনে হাব্বান, সা'লাবী।
হাদিস শরীফে এসেছে, রসুলুল্লাহ্ স. সব সময় জিকিররত থাকতেন। এই জিকির হুসুলি নয়। হুজুরীও নয়। মুখের জিকির তো নয়ই। সার্বক্ষণিক মৌখিক জিকির অসম্ভব। অথচ সার্বক্ষণিক জিকিরই আসল জিকির। এই জিকিরের স্তর অতি উচ্চ। তাফাকুর বা ফিকিরই কেবল ওই মূল জিকিরের স্তর পর্যন্ত পৌছে দিতে পারে। এ কারণেই আল্লাহ্পাক 'উলুল আলবার্' বা বোধশক্তিসম্পন্নদের বৈশিষ্ট্যকে সার্বক্ষণিক জিকিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন এবং পরে উল্লেখ করেছেন চিন্তা-গবেষণার কথা। সঠিক চিন্তা-গবেষণা ওই জিকির পর্যন্ত পৌছুতে সহায়তা করে। ওই জিকির মূল প্রতিচ্ছায়াস্বরূপ, যা অক্ষয়, অব্যয়। তাই দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে জিকির করা অর্থ সর্বক্ষণ জিকির করা।
এখানে ফিকিরের পূর্বে জিকিরের উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য যে, কেবল জ্ঞান বা চিন্তা-গবেষণা বিশুদ্ধ নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সক্ষম নয়, যদি না সে জ্ঞান জিকিরের নূর এবং আল্লাহর পথপ্রদর্শন দ্বারা আলোকপ্রাপ্ত হয়। উল্লেখ্য ফিকিরের ভিত্তি জিকির এবং জিকিরের নূর। আল্লাহর জিকিরের নূর ব্যতিরেকে যারা চিন্তা-গবেষণায় লিপ্ত, তারা তাই পবিত্রতম সত্তা আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস থেকে বঞ্চিত। তারা প্রথিতযশা বিজ্ঞানী গবেষক, কিন্তু ইমানদার নয়।