আল্লাহ্ পাক যে দিন তোমাকে মালেকে নেছাব করিলেন, সেই দিন আল্লাহ্ পাকের শোকর করিবে এবং সেই তারিখটি (চাঁদের হিসাবে) লিখিয়া রাখিবে । তারপর যখন বৎসর শেষ হইয়া যাইবে, তখন কিছুমাত্র বিলম্ব না করিয়া যাকাত বাহির করিয়া দিবে । নেক কাজে দেরী করে উচিত নয় । কারন, কি জানি, হঠাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হইয়া নেক কাজ করার সুযোগ হারাইয়া ফেলে এবং গোনাহ্র বোঝা কাঁধে থাকিয়া যায় । যদি এক বৎসর অতীত হইবার পর যাকাত না দেওয়া অবস্থায় দ্বিতীয় বৎসরও অতীত হইয়া যায়, তবে ভারি গোনাহগার হইবে । তখন তওবা করিয়া খোদার কাছে কাকুতি মিনতি করিয়া মাফ চাহিয়া উভয় বৎসরের যাকাত হিসাব করিয়া দিয়া দিবে । মোটকথা, জীবনের যে কোন সময় দিয়া দিবে; বাকী রাখিবে না ।
মালের চল্লিশ ভাগের একভাগ যাকাত দিতে হইবে । একশত টাকায় ২||০ টাকা, ৪০ টাকায় এক টাকা দিতে হইবে ।
যে সময় যাকাতের মাল কোন গরীব মিস্কীনের হাতে দিবে, তখন মনে মনে এই খেয়াল (নিয়ত) করিবে যে, এই মাল আমি যাকাত বাবত দিতেছি । যদি দিবার সময় এইরূপ নিয়ত মনে উপস্থিত না থাকে তবে যাকাত আদায় হইবে না, যাকাত পুনরায় দিতে হইবে । নিয়ত ছাড়া যাহা দিয়াছ তাহা নফল ছদ্কা হইয়া যাইবে এবং তাহার সওয়াব পৃথকভাবে পাইবে ।
কেহ যাকাতের মাল যখন গরীবের হাতে দিয়াছে, তখন যাকাতের কথা করে নাই, এইরূপ অবস্থায় ঐ মাল গরীবের হাতে থাকিতে থাকিতে যদি যাকাতের নিয়ত করে, তবুও যাকাত আদায় হইয়া যাইবে, কিন্তু খরচ করিয়া ফেলার পর যদি নিয়ত করে, তবে আদায় হইবে না; পুনরায় যাকাত দিতে হইবে ।
কেহ যদি দুই টাকা পৃথক যাকাতের নিয়তে এক জায়গায় রাখিয়া দেয় যে, যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যাইবে, তখন তাহাকে দেওয়া হইবে, তারপর যখন উপযুক্ত পাত্র পাইয়া তাহাকে দিয়াছে, তখন যাকাতের নিয়তের কথা তাহার মনে আসে নাই । এইরূপ অবস্থা হইলে যাকাত আদায় হইয়া যাইবে । যদি পৃথক করিয়া না রাখিত, তবে যাকাত আদায় হইত না ।
কেহ হিসাব করিয়া যাকাতের টাকা বাহির করিল। এখন তাহার ইচ্ছা, একজনকেই দিয়া দেউক বা অল্প অল্প করিয়া কয়েকজনকে দেউক। যদি অল্প অল্প করিয়া কয়েক দিন দেয়, তবে তাহাও জায়েয আছে। আর যদি তখন দিয়া ফেলে, তাহাও দুরুস্ত আছে ।
যাকাত যাহাকে দিবে অন্ততঃ এত পরিমাণ দেবে যেন, ঐ দিনের খরচের জন্য সে অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়। ( কম পক্ষে এত পরিমাণ দেওয়া মুস্তাহাব। ইহা অপেক্ষা কম দিলেও যাকাত আদায় হইয়া যাইবে ।)
যত মাল থাকিলে যাকাত ওয়াজিব হয় তত যাকাত একজনকে দেওয়া মাকরুহ্। তাহা স্বত্বেও দিলে আদায় হইয়া যাইবে । তদুপেক্ষা কম দেওয়া জায়েয আছে; মাকরুহ্ নহে।
কোন একজন গরীব লোক আমীনের নিকট টাকা হাওলাত চাহিল; আমীন জানে সে এমন অভাবগ্রস্ত যে, টাকা দিলে আর দিতে পারিবে না বা দিবেও না ; এই কারনেই আমীন হাওলাত বলিয়াই তাহাকে যাকাতের টাকা দিল, কিন্তু আমীনের মনে নিয়ত রহিল যে সে যাকাত দিয়াছে , এমতাবস্থায় যদি সে হাওলাত মনে করে, তবুও আমীনের যাকাত আদায় হইয়া যাইবে । ( কিন্তু সে যদি কোন দিন হাওলাত শোধ করিতে আসে, তবে আমীন লইবে না, তাহাকেই আবার দিয়া দিবে ।)
যদি কোন গরীবকে পুরস্কার বা বখ্শিশ্ বলিয়া যাকাতের মাল দেওয়া হয়, কিন্তু মনে যাকাতের নিয়ত থাকে, তবে থাতেও যাকাত আদায় হইয়া যাইবে। ( সম্মানী অভাবগ্রস্ত লোককে যাকাতের কথা বলিয়া দিলে হয়ত তাহারা মনে কষ্ট পাইতে পারে, এই জন্য তাহদিগকে এই ভাবেই দেওয়া সঙ্গত। কিন্তু যদি সাইয়্যদ বংশ বা মালদারের না বালেগ সন্তান হয়, তবে তাহাদিগকে যাকাতের মাল হইতে দিবে না , লিল্লাহ্র মাল হইতে দিবে ।)
কোন গরীবের নিকট ১০ টাকা পাওনা ছিল এবং নিজের মালের যাকাতও ১০ টাকা বা তার বেশী হইয়াছে। ইহাতে যদি যাকাতের নিয়তে সে পাওনা মা’ফ করিয়া দেয়, তবে যাকাত আদায় হইবে না । অবশ্য তাহাকে যাকাতের নিয়্যতে ১০ টাকা দিলে যাকাত আদায় হইয়া যাইবে । এখন এই টাকা তাহার কাছ থেকে করয শোধ বাবদ লওয়া দুরুস্ত আছে।
কাহারো নিকট যে পরিমাণ জেওর আছে হিসাব করিয়া তাহার যাকাত ৩ তোলা রুপা হইল, বাজারে ৩ তোলা রুপার দাম ২ টাকা। এখন যদি সে ৩ তোলা রূপা না দিয়া গরীবকে ( রুপার ) ২টি টাকা দিয়া দেয়, তবে যাকাত আদায় হইবে না । কেননা, ২ টি টাকার ওজন ৩ তোলা নহে, অথচ শরীঅতের কানুন ও হুকুম এই যে, রুপার যাকাত যখন রুপার দ্বারা আদায় করিবে, তখন তাহার মূল্যের হিসাব ধরা যাইবে না, ওজনের হিসাব ধরিতে হইবে । অবশ্য ৩ তোলা রুপার মুল্য যে ২ টাকা হয় সেই ২ টাকার সোনার বা তামার পয়সা বা ( ধান, চাউল বা কাপড় দিলে যাকাত আদায় হইবে, রুপা পুরা ৩ তোলার কম দিলে যাকাত আদায় হইবে না ।)
যাকাতের টাকা গরীবদিগকে নিজের হাতে না দিয়া যদি অন্য কাহাকেও উকিল বানাইয়া তাহার দ্বারা দেয় তাহাও দুরুস্ত আছে। মুয়াক্কেলের যাকাতের নিয়্যত থাকিলে উকিলের নিয়্যত যদি নাও থাকে তাহাতেও কোন ক্ষতি হইবে না, যাকাত আদায় হইয়া যাইবে ।
আপনি গরীবদিগকে যাকাত দেওয়ার জন্য কাহাকেও উকিল নিযুক্ত করিয়া তাহার হাতে যাকাতের ২ টাকা দিলেন। সে অবিকল ঐ টাকা গরীবকে না দিয়া নিজের টাকা হইতে ২ টাকা গরীবকে আপনার যাকাতের নিয়্যতে দিয়া দিল, মনে মনে ভাবিল যে, গরীবকে আমি আমার টাকা হইতে দিয়া দেই, পরে ঐ টাকা আমি নিয়া নিব। এইরূপ করিলে যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত এই যে, ঐ ২ টাকা যেন তাহ্র কাছে মওজুদ থাকে, এইরূপ হইলে আপনার যাকাত তাহার নিজের টাকা হইতে দিয়া আপনার দেওয়া টাকা সে নিতে পারিবে এবং আপনার যাকাত আদায় হইয়া যাইবে, কিন্তু যদি সে ২ টাকা খরচ করিয়া ফেলিয়া থাকে ( বা নিজের টাকার সহিত মিলাইয়া ফেলিয়া থাকে ) এবং নিজের টাকা হইতে আপনার যাকাত দেয়, তবে আপনার যাকাত আদায় হইবে না । এইরূপ যদি নিজের টাকা হইতে দেওয়ার সময় নিয়্যত না করিয়া থাকে, তবুও আপনার যাকাত আদায় হইবে না। এখন ঐ ২ টাকা পুনরায় যাকাত বাবদ দিতে হইবে ।
যদি আপনি টাকা না দিয়া কাহাকেও আপনার যাকাত দেওয়ার জন্য উকিল নিযুক্ত করেন এবং বলিয়া দেন যে, আমার তরফ হইতে আপনার নিজ তহবিল হইতে যাকাত দিয়া দিন, পরে আমি আপনাকে দিয়া দিব, এরুপ দুরুস্ত আছে । এইরূপে যাকাতের নিয়্যতে দিলে আপনার যাকাত আদায় হইয়া যাইবে এবং যত টাকা সে দিয়াছে তত টাকা সে পরে আপনার নিকট হইতে নিয়া নিবে ।
আপনার বলা ব্যতিরেকে যদি কেহ আপনার পক্ষ হইতে যাকাত দিয়া দেয়, তবে তাহাতে আপনার যাকাত আদায় হইবে না, এখন যদি আপনি মঞ্জুরও করেন, তবুও দুরুস্ত হইবে না এবং যে পরিমাণ টাকা আপনার পক্ষ হইতে দিয়াছে তাহা সে আপনার নিকট হইতে উসুল করিতে পারিবে না ।
যদি আপনি কাহাকেও আপনার যাকাতের টাকা হইতে ২ টাকা দিয়া বলেন যে, আপনি এই টাকা গরীবকে দিয়া দিবেন । এখন আপনি নিজেও দিতে পারেন বা নিজে না দিয়া অন্য কোন বিশ্বস্ত লোকের দ্বারা দিয়া দেন তাহাও দুরুস্ত আছে । নাম বলার প্রয়োজন নাই যে, অমুকের পক্ষ হইতে যাকাত দিতেছি । এইরূপে তিনি যদি নিজের মা, বাপ বা নিজের অন্য কোন গরীব আত্মীয়কে দেন, তাহাও দুরুস্ত আছে; কিন্তু যদি নিজে গরীব হন এবং উহা গ্রহন করেন, তবে তাহা দুরুস্ত নহে । অবশ্য আপনি যদি তাহাকে টাকা দিবার সময় এইরূপ বলিয়া দিয়া থাকেন যে, যাকাতের টাকা দিলাম, আপনি যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারেন, তবে তিনি নিজে গরীব হইলে ( সাইয়্যদ না হইলে ) নিজেও নিতে পারিবেন ।
[ যাকাত দেওয়ার সময় এইরূপ দোয়া করিবেঃ হে আল্লাহ্! দয়া করিয়া আমার এই যাকাত কবুল করিয়া লও, তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ ।]