নামাজ ফরজ হওয়ার পর রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ছাহাবাগণকে প্রথমে নামাজের আহকাম অর্থাৎ শরীর পাক, কাপড় পাক ও নামাজ পড়ার জায়গা পাকের ব্যাপারে পেশাব পায়খানা, পাক নাপাক, অজু -গোছল প্রভৃতি শিক্ষা দান করেন। এরপরে নামাজের মধ্যের কিয়াম, কেরাত, রুকু, ছেজদা অর্থাৎ ফরজগুলি শিক্ষা দেন। সে সময় নামাজের মধ্যে ছাহাবাগণ একে অপরের সঙ্গে আলাপ করে নামাজ পড়তেন। নামাজের মধ্যে কথাবার্তা বলতেন।
হযরত রিফায়াহ বিন রাফে রাদিআল্লাহু আনহু বলেন- এক লোক মদীনার মছজিদে এসে নামাজ পড়ল। এরপর রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর কাছে যেয়ে ছালাম করল। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম তাকে বললেন- তুমি পুনরায় নামাজ পড়। কেননা তোমার নামাজ পড়া হয়নি। তখন সে বলল, হে আল্লাহর রাছুল ! আমি কিভাবে নামাজ পড়ব তা আমাকে শিখায়ে দিন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন, তুমি কেবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকবীর বলবে, এরপর ছুরা ফাতিহা পড়বে, এরপর যদি আল্লাহর ইচ্ছায় তোমার পক্ষে কিছু পড়া সম্ভব হয় তা পড়বে। এরপর যখন রুকু করবে দু’হাতের আঙ্গুল দু’হাটুর উপর রাখবে। রুকুতে স্থির থাকবে, পিঠ সমান রাখবে, এরপর যখন উঠবে পিঠ সোজা রাখবে, মাথাকে এমনভাবে উঠাবে যেন হাড়ের জোড়গুলি নিজ নিজ জায়গায় লেগে যায়। এরপর ছেজদা করবে ও ছেজদাতে স্থির থাকবে। ছেজদা থেকে উঠে বাম উরুর উপরে বসবে। এরপর প্রত্যেক রুকু ছেজদাতে ধীর স্থিরভাবে এরূপ করতে থাকবে।
— মাছবীহ, আবু দাউদ, তিরমিজি ও নাছায়ী
তিরমিজির অপর বর্ণনায় আছে,
রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন, যখন তুমি নামাজ পড়তে ইচ্ছা করবে তখন আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন, সেভাবে অজু করবে এরপরে কলেমা শাহাদাত পড়বে তারপর ইকামাত বলে নামাজ শুরু করবে। এখন যদি তোমার কোরআন জানা থাকে তাহলে কোরআন পড়বে। আর যদি কোরআন জানা না থাকে তাহলে আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়বে তারপর রুকু করবে।
— মেশকাত হাদীছ নং - ৭৮৪
عن عبد الله بن مسعود قال : كنا نسلم على النبي صلى الله عليه وسلم وهو في الصلاة فيرد علينا فلما رجعنـا مـن عنـد النجاشي سلمنا عليه فلم يرد علينا فقلنا : يا رسول الله كنا نسلم عليك في الصلاة فترد علينا فقال : إن في الصلاة لشغلا
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাছউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, হাবশায় হিজরতের পূর্বে রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছল্লামকে তাঁর নামাজে থাকা অবস্থায় আমরা তাঁকে ছালাম করতাম, আর তিনি আমাদের ছালামের উত্তর দিতেন।
— আবু দাউদ-মেশকাত হাদীছ নংঃ ৯৭৯
عن رفاعة بن رافع قال : صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم فعطست فقلت الحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه مباركا عليه كما يحب ربنا ويرضى فلما صلى رسول الله صلى الله عليه المتكلم في الصلاة ؟ " فلم يتكلم وسلم انصرف فقال : من أحد ثم قالها الثانية فلم يتكلم أحد ثم قالها الثالثة فقال رفاعة : أنا يا رسول الله . فقال النبي صلى الله عليه وسلم : " والذي نفسي بيده لقد ابتدرها بضعة وثلاثون ملكا أيهم يصعد بها " رواه الترمذي وأبو داود والنسائي
হযরত রেফায়া বিন রাফে রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমি একদিন রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর পিছনে নামাজ পড়ছিলাম। হঠাৎ আমার হাঁচি এলো। তখন আমি বললাম “আল হামদুলিল্লাহি হামদান কাছিরান তয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, মুবারাকান আলাইহি কামা ইহিব্বু রব্বুনা অ-ইয়ারদা”। রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নামাজ শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন নামাজের মধ্যে এ কথাগুলি কে বলেছে ? কেউ কোন উত্তর দিলনা। তিনি দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু কেউ কোন উত্তর দিলনা। তিনি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, তখন আমি (রেফায়া) উত্তর করলাম, হে আল্লাহর রাছুল, আমি। আল্লাহর রাছুল বললেন, আল্লাহর কছম - আমি দেখলাম তিরিশের উপর ফেরেশতা তাড়াহুড়া করছেন, কে কার আগে এ আমল নিয়ে উপরে উঠবেন।
— তিরমিজি, আবু দাউদ, নাছায়ী, মেশকাত- ৯৯২
عن أبي قتادة قالت : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يؤم الناس وأمامه بنت أبي العاص على عاتقه فإذا ركع وضعها وإذا رفع من السجود أعادها "
হযরত আবু কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছল্লামকে লোকের ইমামতি করতে দেখেছি। তখন আবুল আছের মেয়ে উমামা তাঁর কাঁধের উপর ছিল। তিনি যখন রুকু করতেন তখন উমামাকে নামিয়ে দিতেন। আর যখন ছেজদা হতে মাথা উঠাতেন, পূনরায় তাঁকে ঘাড়ে উঠাইয়া লইতেন।
— বুখারী, মুছলিম, মেশকাত - ৯৮৪
রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর নিকট নামাজের মধ্যে ছেজদার সময় এক ব্যক্তির মাটি সরানো সম্মন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, যদি তা করতেই হয় তবে শুধু একবার করবে।
— বুখারী, মুছলিম, মেশকাত- ৯১৭
হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, একদিন রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ঘরে নামাজ পড়তেছিলেন। ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। আমি এসে দরজা খুলতে বললাম। তিনি কিছুদূর হেঁটে এসে আমার জন্যে দরজা খুলে দিলেন। এরপর রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নিজের নামাজের জায়গায় ফিরে গেলেন। হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, দরজাটি কিবলার দিকে ছিল।
— আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাছায়ী, মেশকাত ৯৪০
হযরত যাবের রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর সঙ্গে জোহরের নামাজ পড়তাম। বেশী গরমের জন্যে আমি মুটোভর্তি ছোট ছোট পাথর নিতাম, যা আমার হাতে ঠান্ডা হয়ে গেলে কপালের নিচে রেখে ছিজদা দিতে পারি।
— আবু দাউদ, নাছায়ী, মেশকাত ৯৪৫
প্রথম অবস্থায় নামাজের ছুরা কেরাত দেখে পড়া বা শুনে পড়া নামাজের মধ্যে থেকে কাউকে ছালাম দেয়া বা ছালামের উত্তর নে’য়া এসব জায়েজ ছিল।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৬) রাছুলুল্লাহ (সঃ) এর নামাজ শিক্ষা দান | (০১৮) নামাজের দ্বিতীয় অবস্থা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |