আরবি শব্দ । ইহার অর্থ দর্শন, সাক্ষাতকার । ধর্মীয় পরিভাষায় পবিত্র স্থান বা কামিল ব্যক্তির সমাধিস্থান দর্শন অর্থে ইহা ব্যবহৃত হয় । সাধারণ মু'মিমদের কবর যিয়ারতের ফজিলতও হাদিসে বর্নিত আছে । যিয়ারাতকে মোটামুটি চারিভাগে ভাগ করা যাইতে পারে । যথাঃ
১) কা'বা শরীফ যিয়ারাত
২) রওজা শরীফ যিয়ারাত
৩) পবিত্র স্থান যিয়ারাত
৪) কামিল ব্যক্তি ও সাধারণ মুসলমানদের কবরস্থান যিয়ারাত
যথানিয়মে কাবা শরীফ যিয়ারতকে হাজ্জ বলে । ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, হাজ্জ উহাদের মধ্যে অন্যতম । ইহাতেই কা'বা শরীফ যিয়ারাতের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব উপলভিদ করা যায় ।
রওজা শরীফ মদীন শরীফে অবস্থিত । মদিনা শরীফ নানাবিধ কারনে অতি মর্যাদাসম্পন্ন শহর । কিন্তু স্থানটি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর বাসস্থান ও রওজা শরীফ হওয়ার কারনে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন ।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর যিয়ারত অত্যন্ত সোয়াবের কাজ, আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির উত্তম উপায় । কোন কোন আলিম সমর্থ ব্যক্তির জন্য রওজা শরীফ জিয়ারাতকে ওয়াজিবের নিকটবর্তী বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন । স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাহার রওজা শরীফ যিয়ারাতের জন্য উৎসাহ প্রদান করিয়াছেন এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যাহারা যিয়ারাত করে না, তাহাদিগকে মনুষ্যত্বহীন বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন । রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন
যে ব্যক্তি আমার যিয়ারত করিবে কিয়ামতে সে আমার প্রতিবেশীদের অন্তর্ভূক্ত হইবে ।
— মিশকাত
তিনি অন্যত্র বলেন
আমার ইন্তিকালের পর হাজ্জ করতঃ যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারাত করে সে যেন জীবিতবস্থায় আবার যিয়ারত করিল ।
— মিশকাত
তিনি অন্যত্র বলেনঃ
যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারত করে তাহার জন্য সুপারিশ করা আমার কর্তব্য হইয়া পড়ে
— ফাত্হুল কাদির, মুফতি সাইদ আহ্মাদ মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ, পৃঃ ৩৩৩-৩৩৪
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর রওজা শরীফ যিয়ারতের জন্য নিম্নলিখিত দুয়া পড়া শ্রেয়
আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ
আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকর
আসসালামু আলাইকা ইয়া উমার
মক্কা ও মদিনায় আরও বহু মসজিদ, পাহাড়, কূপ ও স্থানের সহিত রাসূল (সঃ) ও সাহাবী (রাঃ) এর ইবাদা ও প্রচেষ্টার স্মৃতি বিজড়িত হইয়া রহিয়াছে । শর্মভাবে উদ্দীপত হইবার উদ্দেশ্য সেই সব যিয়ারত করা নেকীর কাজ ।
পূর্বোল্লিখিত রওজাশরীফ ছাড়াও মদীনাতে অনেক স্মৃতি বিজরিত স্থান রহিয়াছে যেসব স্থানের সহিত নবী পাক (সঃ) আমাদের জননী (রাঃ) গণ, পাক পাঞ্জাতন, খুলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য অনেক সাহাবা কিরাম (রাঃ) এর জীবনের অনেক পূন্যময় জীবনী জড়িত । মসজিদে নববী ব্যতিত মদিনায় অবস্থিত কয়েকটি বিশেষ মসজিদের নামে উল্লেখ করা হলোঃ
এছাড়াও মদিনায় রয়েছে জান্নাতুল বাকী কবরস্থান । এই কবরস্থানে অসংখ্য সাহাবী ও ওলী দরবেশ সমাহিত আছেন । রওজা শরীফ ও তৎসংলগ্ন আবূ বকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ) এর সমাধি যিয়ারতের পর প্রত্যহ বিশেষত শুক্রবার জান্নাতুল বাকী জিয়ারত করা মুস্তাহাব ।
মৃত্যুকে ও পরকালকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারাত মুস্তাহাব বা ছাওয়াবের কাজ । কারণ ইহাতে দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ কমে এবং পরকালের কথা মনে উদয় হয় । ইহাতে পাপের প্রতি আকর্ষন কমে ও পূন্যের প্রবণতা বাড়ে ।
সহীহ হাদিছে হাকিম হইতে বর্নিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ
তোমরা কবর যিয়ারত করো । কারণ ইহাতে মন নরম হইয়া থাকে থাকে এবং অন্তরের নম্রতা হইতে পূন্য কর্ম সম্পন্ন হয় । আর কবর জিয়ারত চক্ষুকে অশ্রুসিক্ত করে এবং পরকালকে স্মরণ করাইয়া দেয় ।
অপর এক হাদিসে বর্নিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ
তোমরা কবর যিয়ারত করো । কারণ ইহা সংসারের প্রতি বিরাগজাজন করিয়া তোলে এবং পরকালকে স্মরণ করাইয়া দেয় ।
বায়হাকীর একটি হাদিসে বর্নিত আছে,
যে ব্যক্তি শুক্রবারে মাতাপিতা কিংবা পিতা বা মাতার কবর যিয়ারত করে তাহাকে ক্ষমা করা হইবে এবং (তাহার আমলনামায়) তাহাকে পিতামাতার খেদমতগার হিসেবে উল্লেখ করা হইবে ।