কোন অবিশ্বাসী কাফের যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় এবং পরকাল অভিমুখি হয় , তখন তাঁর কাছে আকাশ হতে কালো চেহারা বিশিষ্ট কয়েকজন ফেরেশতা অবতরন করেন । তাদের সাথে থাকে চাটাই । তারা মূমুর্ষ ব্যাক্তির দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে বসেন। অতঃপর মালাকুল মওত ফেরেশতা তাঁর শিওরে এসে বলেন, হে পাপিষ্ট আত্মা ! আল্লাহ্ তায়ালার অসন্তুষ্টির পানে ধাবিত হও ।মালাকুল মওতের এ কথা শুনে ওই আত্মা দেহের মধ্যে ছুটাছুটি করতে থাকে । অনন্তর মালাকুল মওত তাঁর আত্মাকে দেহ থেকে এমন সজড়ে বের করে আনেন, যেমন ভিজা তুলাকে লহার চিরুনি দ্বারা আঁচড়িয়ে পরিষ্কার করা হয় । অর্থাৎ কাফেরের আত্মা দেহ থেকে এমন জোড়ে টেনে বের করা হয়, যেমন লোহার চিরুনি হতে ভিজা তুলা কে টেনে বের করা হয় । অতঃপর মালাকুল মওত উক্ত আত্মা নিজের হাতে নিয়ে অপেক্ষমান অন্যান্য ফেরেশ্তাদের হাতে দিতে না দিতেই তারা আত্মা টি নিয়ে দুরগন্ধময় চাটাইতে জড়ান । সে চাটাই থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হতে থাকে, পচা ও গলিত মরদেহের দুর্গন্ধে সমস্ত পরিবেশ দুর্গন্ধময় করে তোলে । ঐ সব ফেরেশতা ওই পাপীষ্ট আত্মা কে নিয়ে আকাশের পানে আরহন করেন। পথিমধ্যে যেসব ফেরেশ্তার সাথে সাক্ষাত ঘটে তারা জিজ্ঞেস করেন, এই পাপিষ্ট আত্মা কার ? ফেরেশতা গন তখন দুনিয়ায় উচ্চারিত তাঁর খারাপ নাম উল্লেখ করে বলেন, এ হচ্ছে অমুকের পুত্র অমুকের আত্মা । তারা এই আত্মা নিয়ে প্রথম আকশে উপনিত হয়ে আকাশের দরজা খুলতে চান। কিন্তু আকাশের দরজা খলা সম্ভব হয় না । যেমন আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন,
তাদের জন্য আকাশের দরজা সমুহ খোলা হবে না ।আর সুচের ছিদ্র পথে উট জাতায়াত না করা পর্যন্ত তারা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।
— সুরা আরাফ
(উট কখনও সুচের ছিদ্র পথে জাতায়াত করতে সক্ষম হবে না । আর তাদের জান্নাতে যাওয়া হবে না ) অতঃপর আল্লাহতায়ালা আত্মা বহন কারি ফেরেশতাকে বললেন , ভু তলের সর্ব নিম্ন স্থান সিজ্জিন দফতরে এ আত্মার নাম নিবন্ধন করো । অনন্তর তাঁর আত্মা কে সেখান থেকেই সিজ্জিনে নিক্ষেপ করা হয় । এরপর নবী করীম (সঃ) কোরআন মজিদের এই আয়াত টি পাঠ করেন ,
আর যারা আল্লাহ্ তায়ালার সাথে কাউকে শরিক করে তারা যেন আকাশ হতে পতিত হয় । অতঃপর হয় পাখি থকর মেরে তাঁর মাংস ভক্ষন করে অথবা বাতাস তাঁকে দূর দুরান্তে নিয়ে নিক্ষেপ করে ।
— সুরা হজ্ব
এরপর সিজ্জিন হতে আত্মা কে তাঁর মর দেহে প্রবেশ করানো হয় । এরপর ২জন ফেরেশতা তাঁকে উথিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেন তোমার প্রভু কে? সে বলে আ হা আমার কিছু জানা নাই। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হয় তোমার ধর্ম কি? সে বলে আ হা আমার কিছু জানা নাই। অতঃপর তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করা হয় এই ব্যাক্তি কে? যাকে তোমার কাছে প্রেরন করা হয়েছিলো ? সে বলে আ হা আমি তো একে চিনি না ।
এ জিজ্ঞসাবাদ শেষ হবার পর আকাশ থেকে একজ ঘোষক ঘোষণা দেনঃ এ মিথ্যাবাদী । সে তার প্রতি পালক সম্পর্কে জ্ঞান রাখে , কিন্তু তাঁকে মানত না । আর যে ধর্ম তাঁকে দেয়া হয়েছিলো সে সম্পর্কে ও সে জ্ঞাত ছিল , আর মুহাম্মদ (সঃ) এর নবুওত সম্পরকেও সে অবহিত।। কিন্তু শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সে নিজেকে মূর্খ ও অজ্ঞ রুপে প্রকাশ করেছে অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও । জাহান্নামের দিকে তার কবরের একটি দরজা খুলে দাও ।অনন্তর জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খোলা হলে জাহান্নাম হতে প্রখর তপ্ত বায়ু তার কবরে প্রবাহিত হতে থাকে । আর তার কবরকে এতো সংকীর্ণ করা হয় যার ফলে মাটির চাপে তার পাজরের হাড় গুলো পরস্পর বিপরিত দিকে প্রবেশ করে । আতপর কুৎসিত চেহারা ও দুগন্ধ যুক্ত পোশাক পরিহিত এমন এক লোক তার কাছে আগমন করে , যার দেহ থেকে অসহনিও দুর্গন্ধ বের হতে থাকে । সে এসে বলে বিপদের সংবাদ শোন – এই দিন টি সেই দিন যা সম্পর্কে তোমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল ।। মৃত ব্যাক্তি জিজ্ঞাস করে তুমি কে ? তোমার কুৎসিত চেহারাই বলে তুমি খারাপ সংবাদ বয়ে নিয়ে এসেছ । সে বলে আমি হচ্চি তোমার পাপ কর্ম । তখন ভয়ে জড়ো সোর হয়ে বলে হে আমার প্রতিপালক! তুমি কখনও কেয়ামত কায়েম করো না ।
— মেশকাত শরীফ
আর এক বর্ণনা তে আছে মুমিন ব্যাক্তির আত্মা যখন দেহ থেকে বের হয় । তখন আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত ফেরেশতা তার প্রতি রহমত বর্ষণ করতে থাকেন । তার জন্য আকাশের দ্বার খুলে দেয়া হয় । প্রত্যেক দ্বার রক্ষী ফেরেশতা এই বলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যে, এ আত্মাকে আমাদের থেকে আরও ঊর্ধ্ব মণ্ডলে নিয়ে যাওয়া হোক । আর কাফের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তার আত্মা গলদেশ থেকে অতি কষ্টে বের হয় । নভ মণ্ডলের ও ভু মণ্ডলের সমস্ত ফেরেশতা তার প্রতি লানত বর্ষণ করতে থাকে । তার জন্য আকাশের দরজা সমুহ বন্ধ রাখা হয় । প্রত্যেক দ্বার রক্ষী ফেরেশতা আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা জানায় যে , এই আত্মা কে যেন আমাদের থেকে নিয়ে ঊর্ধ্ব মণ্ডলে তুলে নেয়া না হয় ।
— আহমেদ , মেশকাত শরীফ
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০২) মৃত্যুর সময় ও মৃত্যুর পরে মুমিনের সম্মান | (০০৪) কবরে মুমিনের নামাজের ধ্যান |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |