হজ্জে ইফরাদ আদায়কারী ব্যক্তি প্রথমে প্রয়োজনীয় ক্ষৌরকার্য সম্পন্ন করবে। ইহরামের নিয়্যতে গোসল করবে। গোসল করতে না পারলে উযূ করবে। হায়িয ও নিফাস ওয়ালী মহিলা এবং শিশুদের জন্যও গোসল করা সুন্নাত। ইহরামের জন্য গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করার প্রয়োজন নেই। গোসলের পর সেলাই যুক্ত কাপড় খুলে সেলাই বিহীন ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। দু' খানা কাপড় না থাকলে এক খাকী কাপড়ই যথেষ্ট হবে। ইহরামের কাপড় সাদা, নতুন অথবা ধোলাইকৃত হওয়া মুস্তাহাব। এরপর শরীর ও কাপড়ে সুগন্ধি লাগাবে। পুরুষের জন্য রং বিহীন সুগন্ধি এবং মহিলাদের জন্য রং বিশিষ্ট সুগন্ধি উত্তম। কিন্তু কাপড়ে এমন সুগন্ধি লাগাবে না যার চিহ্ন অবশিষ্ট থকে। এরপর ইহরামের নিয়্যতে দুই রাক'আত নফল নামায আদায় করবে। মাকরূহ ওয়াজে এ নামায আদায় করবে না। নামাযের প্রথম রাক'আতে সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাক'আতে সূরা ইখলাস পাঠ করা মুস্তাহাব। এ নামায মাথায় টুপী পরিধান অবস্থায় পড়াই সুন্নাত। সালামের পর টুপী খুলে তারপর ইহরামের নিয়্যত করবে। ইহরাম খোলার পূর্বে আর টুপী পরিধান করবে না। দাঁড়িয়ে অথবা সাওয়ার অবস্থায় ও ইহরামের নিয়্যত করা যায়। সম্ভব হলে মুখে উচ্চারণ করে বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أُرِيدُ الْحَجَّ فَيَسِّرْهُ لِي وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّي
এরপর সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ করবে।
তালবিয়া নিম্নরূপ:
لَبَّيْكَ اللَّهُمْ لَبَيَّكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَ نِعْمَةَ لَكَ وَ الْمُلْكُ لَا شَريكَ لَكَ
তালবিয়া একবার পাঠ করা শর্ত (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
তিনবার পাঠ করা মুস্তাহাব। পুরুষ উচ্চস্বরে এবং মহিলা অনুচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করবে। তারপর দরূদ শরীফও পাঠ করবে। ইহরামের পর বেশী বেশী করে তালবিয়া পাঠ করবে। বিশেষভাবে অবস্থা পরিবর্তনের সময় অর্থাৎ সাওয়ার হওয়ার সময়, সওয়ারী হতে অবতরণের সময়, উচু স্থানে উঠার সময়, নীচে অবতরণের সময়, সকালে রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সময়, কারো সাথে সাক্ষাতের সময় এবং সমস্ত নামাযের পর তালবিয়া পাঠ করবে। ইহরাম বাঁধার পর ইহরামের অবস্থায় যে সব কাজ নিষিদ্ধ এর থেকে বিরত থাকার এবং ইহরামের ওয়াজিব ও মুস্তাহাব সমূহের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখবে। হরম সীমায় পৌছে অত্যন্ত বিনয় এবং নম্রতার সাথে হরমে প্রবেশ করবে। প্রচুর পরিমাণে তালবিয়া, তাক্বীর ও তাহলীল ইত্যাদি পাঠ করবে।
প্রবেশের সময়ও যেহেতু বাবুল মু'আল্লা দিয়ে প্রবেশ করার প্রতি অনেক সময় গুরুত্ব দেয়া সম্ভব হয় না। তাই জিদ্দা হতে মোটর গাড়ীতে আরোহন করার পূর্বে গোসল করে নেয়াই উত্তম। এরপর মক্কা শরীফের নিকটবর্তী হওয়ার পর মক্কা প্রবেশের পূর্বে (সম্ভব হলে) গোসল করে নিবে। এবং মক্কার কবরস্থান বাবুল মু'মাল্লার দিক দিয়ে মক্কা প্রবেশ করবে। এ সময় নিম্নের দু'আটি পড়বে:
اللَّهُمَّ اجْعَلْ بِهَا قَرَارًا وَ ارْزُقْنِي بِهَا حَلَالًا
এরপর মাদ'আ নামক স্থানে দু'আ করবে। হজ্জের সময় রাত্রে বা দিনে যে কোন সময় ইচ্ছা মক্কা শরীফ প্রবেশ করতে পরবে। অবশ্য দিনে প্রবেশ করা মুস্তাহাব (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
গাড়ী থেকে নেমে আসবাবপত্র রেখে যাওয়ার ব্যাপারে যদি কোনরূপ অস্থিরতা না থাকে তাহলে গাড়ী থেকে নেমে সামান রেখে সরাসরি মসজিদে হারামে চলে যাবে। নতুবা সামান পত্র রাখার বিশেষ ব্যবস্থা করে পরে মসজিদে হারামে যাবে। বাবুস্ সালামের পথে মসজিদে হারামে প্রবেশ করা উত্তম। প্রথমে ডান পা রেখে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে প্রবেশ করবে। প্রবেশের সময় লাব্বায়িক বলে:
اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
পাঠ করবে। যখন বায়তুল্লাহ শরীফ দেখা যাবে তখন:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَكْبَرْ
পাঠ করবে এবং দু'আ পড়তে থাকবে। এ সময় নিম্নোক্ত দু'আটি পাঠ করা সুন্নাত:
اللَّهُمَّ زِدْ بَيْتِكَ هَذَا تَشْرِيفًا وَ تَكْرِيمًا وَ تَعْظِيمًا وَ بِرَّا
এরপর তালবিয়া পড়তে পড়তে হজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হবে। হাজরে আসওয়াদে পৌছে তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করে দিবে। তাওয়াফে কুদূম সম্পন্ন করবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, তাওয়াফের কারণে যেন ফরয নামাযের জামা'আত অথবা বিত্রের নামায অথবা সুন্নাতে মুআক্কাদা বাদ পড়ে না যায়। যদি নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে প্রথমে নামায আদায় করে নিবে। তাওয়াফ আরম্ভ করার পূর্বে হজের আসওয়াদের সামনে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন তাওয়াফ কারীর ডান কাঁধ হজরে আসওয়াদের বাঁয়ে থাকে এবং পূরা হজরে আসওয়াদ তাওয়াফকারীর ডানে থাকে। তারপর তাওয়াফের নিয়্যত করবে। নিয়্যত করা ফরয।
নিয়্যত করার সময় নিম্নের দু'আটি মুখে উচ্চারণ করা উত্তম:
اللَّهُمَّ إِنِّي أُرِيدُ طَوَافَ بَيْتِكَ الْحَرَامِ سَبْعَةِ أَسْوَاطٍ فَيَسِرْهُ لِي وَ تَقَبَّلُهُ مِنِّي
তারপর ডান দিকে কিঞ্চিৎ সরে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন হজরে আসওয়াদ একদম সম্মুখে পড়ে। এর পর হজরে আসওয়াদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হজরে আসওয়াদের প্রতি ইশারা করে বলবে:
بِسْمِ اللَّهِ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَلِلهِ الحَمْدُ وَ الصَّلَوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ
اللَّهُمَّ إِيمَانًا بِكَ وَ تَصْدِيقًا بِكِتَابِكَ وَ وَفَاء بِعَهْدِكَ وَ اتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحْمَدٍ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে হজরে আসওয়াদ চুম্বন করবে। উভয় হাতের তালু হজরে আসওয়াদের উপর স্থাপন করে দুই হাতের মাঝে মুখ রেখে মৃদুভাবে চুম্বন করবে যেন চুম্বনের কারণে কোন রূপ শব্দ না হয় (শামী, ২য় খণ্ড)।
যদি ভিড়ের কারণে চুম্বন করা সম্ভব না হয় তবে কাউকে কষ্ট দিয়ে তা চুম্বন করতে চেষ্টা করবে না। এ ক্ষেত্রে শুধু উভয় হাত হজরে আসওয়াদের উপর রেখে পরে হাত দু'টি চুম্বন করবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে কোন কাঠের দ্বারা হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে সেই কাঠিতে চুমু খাবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠায়ে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করবে যেন হাতের তালু হজরে আসওয়াদের দিকে এবং পিঠ নিজের মুখের দিকে থাকে। তখন এ খিয়াল করবে যে, সে তার হস্তদ্বয় হজরে আসওয়াদের উপরই রেখেছে। তারপর এ দু'আ পাঠ করবে:
اللهُ أَكْبَرُ لَا إِلهِ اللَّهُ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ الصَّلُوةُ وَالسَّلَامَ عَلَى سَيِّدِ المُصْطَفَى صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
তারপর উভয় হাতে চুমু খাবে। যদি এই তাওয়াফের পর সাঈ করার ইচ্ছা থাকে তবে তাওয়াফ শুরু করার সামান্য পূর্বে ইযতিব্য করবে অর্থাৎ চাদরের এক পাশ ডান বগলের নীচে দিয়ে পেঁচিয়ে এনে বাম কাঁধের উপর রেখে দিবে। এবং প্রথম তিন চক্করে রমল করবে। অর্থাৎ কাঁধ হেলিয়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে বীরোচিত ভঙ্গিতে দ্রুত গতিতে চলবে। আর যদি তাওয়াফের পর সাঈ করার ইচ্ছা না থাকে তবে রমল এবং ইতিমা করবে না। তাওয়াফ শুরু
করার পর তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিবে। হজরে আসওয়াদ চুম্বন করার পর বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার দিকে অর্থাৎ নিজের ডান দিকে অগ্রসর হবে এবং হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফ করবে। রুকনে ইয়ামনীতে পৌছে সম্ভব হলে তা ডান হাতে স্পর্শ করবে। কিন্তু রুকনে ইরাকী ও রুকান শামীতে স্পর্শ করবে না (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
তারপর ঘুরে এসে যখন হজরে আসওয়াদের নিকট পৌছবে তখন তাওয়াফের এক চক্কর সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তাওয়াফের প্রতি চক্করের শুরুতে উল্লেখিত নিয়মে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করবে, এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করতে হবে। উল্লেখ্য যে, তাওয়াফের সময় কা'বা শরীফের দিকে দৃষ্টি দিবে না বরং দৃষ্টি নীচের দিকে রাখবে। সপ্তম চক্কর শেষ করে পুনরায় হজরে আসওয়াদে চুম্বন করে তাওয়াফ শেষ করবে।
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلَّى
পড়তে পড়তে অগ্রসর হবে। এবং মাকামে ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহ্ এবং নিজের মাঝখানে রেখে দুই রাক'আত নামায আদায় করবে। একে তাওয়াফের নামায বলা হয়। প্রথম রাক'আতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাক'আতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইহ্লাস পাঠ করবে। যদি সেখানে জায়গা পাওয়া না যায় তবে হাতীমের ভিতর অথবা মাতাফের সেখানে জায়গা পাওয়া
যায় সেখানে উক্ত নামায পড়বে। নামাযান্তে আল্লাহ্ দরবারে খুব বিনয়ে সাথে দু'আ করবে। তাওয়াফের এ দুই রাক'আত নামায এমন সময় আদায় করবে যখন নফল পড়া জায়িয। মাকরূহ নিষিদ্ধ ওয়াক্তে এ নামায পড়বে না (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
তাওয়াফের নামায সমাপ্ত করে যমযম কূপের নিকট আসবে এবং কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে খুব তৃপ্তি সহকারে তিন শ্বাসে যমযমের পানি পান করবে আর শরীরে ও কিছু পানি মেখে নিবে। এরপর সম্ভব হলে মুলতাযিমের নিকট আসবে এবং তা জড়িয়ে ধরবে। ডানগাল বা কখনো বাম গাল এর উপর রাখবে এবং উভয় হাত উপরের দিকে উঠিয়ে অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে দু'আ করবে। তারপর হরম শরীফ থেকে বের হয়ে আসবে। হরম শরীফ থেকে বের হওয়ার সময় প্রথমে বাম বা রাখবে। এ সময় নিম্ন বর্ণিত দু'আটি পাঠ করবে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَ زِرْقًا واسعًا وَ عَمَلاً صَالِحًا وَ شِفَاء مِنْ كُلِّ داء
এরপর সে ইহরামের হালতে অবস্থান করবে এবং ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকবে। এ সময় যথা সম্ভব বেশী বেশী নফল তাওয়াফ আদায় করবে এবং হরম শরীফে নামায, তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবে।
হজ্জ পালনকারীর উপর সাফী ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ করা ওয়াজিব। একে হজ্জের সাঈ বলা হয় এবং তাওয়াফে যিয়ারতের পরে তা আদায় করা হয়। ইফরাদ হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি যদি উক্ত হজ্জের সাঈ তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে আদায় করতে চায় তবে সে তাওয়াফে কুদূমের যাবে হজ্জের স্থায়ী আদায় করে নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সে তাওয়াফে কুদূমের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করে। তাওয়াফের নামায আদায় করে যমযমের পানি পান করার পরে হজ্জের সায়ী আদায় করার উদ্দেশ্যে সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হবে এবং নিম্নের দু'আটি পড়বে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
সাফা পাহাড়ে আরোহণ করবে। এ পাহাড়ে আরোহণ করা সুন্নাত। উপরে উঠে এমনভাবে দাড়াবে যেন বায়তুল্লাহ্ দেখা যায়। সাফায় আরোহণের সময় পড়বে:
أَبْدَهُ بِمَا بَدَهُ اللَّهُ بِهِ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ
এরপর বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে উভয় হাত উপরের দিকে উঠিয়ে তাক্বীর, তাহলীল, হামদ্ ইত্যাদি তিনবার পড়বে এবং নবী (সা.)-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহর নিকট নিজের জন্য এবং অন্যান্য সকলের জন্য দু'আ করবে। সাঈর অধ্যায়ে যে সব দু'আ মুখস্ত না থাকে তবে নিজের ভাষায়ই দু'আ করবে। এরপর সাফা হতে নীচে অবতরণ করে মারওয়ার দিকে অগ্রসর হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় চলবে। বতনে ওয়াদী পর্যন্ত এভাবে চলবে। মসজিদের দেয়ালে স্থাপিত সবুজ বাতি হতে অপর সবুজ বাতি পর্যন্ত পুরুষগণ মৃদু দৌড়িয়ে চলবে। মহিলাগণ স্বাভাবিক গতিতে চলবে। এ সময়ে:
رَبِّ اغْفِرُ وا رَحمَ وَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمِ
দু'আটি বেশী বেশী করে পাঠ করবে।
সবুজ বাতি অতিক্রম করার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় চলবে। মারওয়ার নিকট পৌছে মারওয়া পাহাড়ে আরোহন করবে এবং কিল্লামুখী হয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবে, তার মহত্ত্ব বর্ণনা করবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়বে এবং নবী (সা.)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে সাফার ন্যায় মারওয়াতেও দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত দু'আ করবে। এভাবে সাফা হতে মারওয়া পর্যন্ত এক চক্কর এবং মারওয়া হতে সাফা পর্যন্ত দ্বিতীয় চক্কর। এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করবে। শেষ চক্কর শেষে হবে মারওয়ায় গিয়ে প্রত্যেক চক্করে বর্ণিত দু'আসমূহ অথবা যে দু'আ মুখস্ত থাকবে এবং যে দু'আয় একাগ্রতা সৃষ্টি হয় তা পাঠ করবে। সাঈর পর মাতাফের প্রান্তে এসে দুই রাক'আত নফল নামায আদায় করবে।
তাওয়াফ বা সাঈর অবস্থায় যদি নামাযের ইকামত আরম্ভ হয় তবে তাওয়াফ বা সাঈ স্থগিত রেখে জামা'য়াতে শরীক হবে। নামায শেষ করার পর অবশিষ্ট তাওয়াফ বা সাঈ সমাপ্ত করবে। জানাযার নামায আরম্ভ হলে তাওয়াফ ও সাঈ স্থগিত রেখে জানাযায় শরীক হবে। এরপর বাকী তাওয়াফ ও সাঈ আদায় করবে। তাওয়াফ ও সাঈর অবস্থায় বেচা কেনার কথা বলা মাকরূহ। মুফরিদ ব্যক্তি তাওয়াফ ও সাঈ আদায় করার পর ইহরাম অবস্থায় মক্কা মুকাররমায় অবস্থান করবে এবং যত অধিক সম্ভব নফল তাওয়াফ করতে থাকবে। এবং, ইহরামের নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বিরত থাকবে। কোনো উমরাহ পালন করবে না।
৭ই যিলহজ্জ মসজিদুল হারামের ইমাম খুত্বা পড়বেন তা মনযোগ সহকারে শ্রবণ করবে এবং ৮ই যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর এমন সময় মিনায় পৌঁছবে যাতে যুহরের নামায মুস্তাহাব ওয়াক্তে সেখানে আদায় করা যায়। সূর্যোদয়ের আগে যাওয়াও জায়িয। তবে পরে যাওয়াই উত্তম। এ সময় হাজী মক্কা, মসজিদে হারামে বা অন্য সেখানেই থাকবে তালবিয়া পাঠ করতে থাকবে। দু'আ করবে এবং 'লাইলাহা ইল্লাল্লাহ্' কলেমা পাঠ করবে। মিনায় রাত্রি যাপন করবে এবং যুহর হতে ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায এখানে আদায় করবে। আরাফার দিন ফজরের নামায অন্ধকার থাকতেই আদায় করবে। এরপর সূর্যের আলো চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার পর তালবিয়া ও তাকবীর পড়তে পড়তে আরাফাত অভিমুখে রওয়ানা করবে, জাবালে রহমত দেখা মাত্রই তাক্বীর, তাহলীল ও ইসতিগফার করবে এবং আল্লাহর দরবারে বিশেষভাবে দু'আ করবে।
আরাফার যে কোন স্থানে উকূফ করা জায়িয। অবশ্য জাবালে রহমতের নিকটে অবস্থান করা উত্তম, রাস্তায় নামবে না। এতে যাত্রীদের কষ্ট হয়। পানাহার শেষ করে সূর্য হেলে পড়ার পূর্বেই গোসল করে নিবে। তারপর সম্ভব হলে মসজিদে নামিরায় গিয়ে বসবে এবং ইমামের খুতবা শুনবে। এরপর যুহরের ওয়াক্তে যুহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করবে। অবশ্য এতদুভয় নামায একত্রে আদায় করার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে যা 'যুহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করা' শিরোনামের অধীনে আলোচিত হয়েছে।
নামাযান্তে যথাশীঘ্র নিজের অবস্থান স্থলে চলে আসবে। যদি জাবালে রহমতের নিকটবর্তী জায়গায় (যেখানে কালো পাথর বিছানো আছে) স্থান পাওয়া যায় তবে সেখানেই অবস্থান করবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আরাফায় এ স্থানটিতে অবস্থান করেছেন। নতুবা যেখানে অবস্থান করা সম্ভব সেখানেই অবস্থান করবে। জাবালে রহমতের নিকটে অবস্থান করা উত্তম। এ সময় নিজের অবস্থান স্থলে কিল্লামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে অবস্থান করা উত্তম। বসে বসে উকূফ করাও জায়িয। আরাফায় অবস্থান কালে কিছুক্ষণ পর পর তালবিয়া পাঠ করবে। এ স্থানে খুব বেশী বেশী করে দু'আ করবে। নিজের জন্য, ছেলেমেয়ে, পিতামাতা আত্মীয়-স্বজন সকলের জন্য দু'আ করবে।
তাক্বীর, তাহলীল, হামদ এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করে দু'আ আরম্ভ করবে। দু'আর সময় উভয় হাত ছড়িয়ে উপরের দিকে উত্তোলন করে কিল্লামুখী হয়ে দু'আ করবে। কাকুতি-মিনতির সাথে কেঁদে কেঁদে দু'আ করবে। এভাবে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাসবীহ, তাহলীল, দরূদ, দু'আ ইত্যাদি পাঠে মশগুল থাকবে। ঘুরাফেরা ও হাসি তামাশায় সময় নষ্ট করবে না। আরাফাতে নির্দিষ্ট কোন দু'আ পড়া। জরুরী নয়। যে কোন দু'আ পড়া জায়িয আছে। তবে অধিকাংশ সময় নিম্নের দু'আটি পাঠ করা উত্তম:
لا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَ هُوَ حَيَّ لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الخَيْرُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْى قَدِيرٌ لَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ وَلَا نَعْرِفُ رَبَّا سوَاهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبَي نُورًا وَ فِي سَمْعِي نُورًا وَ فِي بَصَرِي نُوْرَا اللَّهُمَّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَ يَسْرَ لِي أَمْرِي اللَّهُمَّ هُذَا مَقَامَ الْمُسْتَجِيْرُ الْعَائِدُ مِنَ النَّارِ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ بَعْفُوكَ وَ ادْخِلْنِي الْجَنَّةَ لِلرَّحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ اللَّهُمَّ ا هَدَيْتَنِي لِلإِسْلَام فَلَا شَرعَه عَنِى وَ لَا تَنْزِعُنِي مِنْهُ حَتَّى تُقْبِضُنِي إِنَّا عَلَيْهِ
অনুচ্চস্বরে চুপে চুপে দু'আ করা সুন্নাত।
সূর্যাস্তের পর তালবিয়া এবং দু'আ পড়তে পড়তে কাফেলার সাথে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী পথ দিয়ে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে গমন করবে। উত্তম হল স্বাভাবিক অবস্থায় চলা। জায়গা খালি পেয়ে দ্রুত চলবে। কাফেলার সাথে সাথে চলবে। সূর্যাস্তের পর অন্যান্য কাফেলা যদি বিলম্ব করে তবে তার আগেই রওয়ানা করবে। আরাফার সীমানা অতিক্রম না করলে সূর্যাস্তের পূর্বে রওয়ানা করতে কোন ক্ষতি নেই। সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার সীমানা অতিক্রম করা জায়িয নেই। কেউ যদি তা করে তবে তার উপর 'দম' দেওয়া ওয়াজিব হবে। পায়ে হেঁটে মুযদালিফায় গমন করা মুস্তাহাব। মুযদালিফায় পৌছে যেখানে ইচ্ছা অবস্থায় করবে। রাস্তায় অবস্থান করবে না। কুযাহ পাহাড়ের নিকট অবস্থান করা উত্তম। এখানে পৌছে গোসল অথবা অযু করে নিবে। 'ওয়াদীয়ে মুহাস্সার' এ অবস্থান করবে না। এখানে অবস্থান কর। জায়িয নেই।
মুযদালিফায় পৌছে এশার ওয়াক্তে মাগরিব ও এশার নামায এক আযান ও এক ইকামতের সাথে আদায় করবে। এই দুই নামাযের মধ্যে সুন্নাত ও নফল নামায পড়বে না। বরং তা পরে পড়বে। এই দুই নামায একত্রে আদায় করার শর্ত সমূহ ও 'মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করা' শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করা হয়েছে। আরাফার ময়দানে অথবা রাস্তায় মাগরিব ও ইশার নামায পড়া জায়িয নেই। যদি কেউ পড়ে তবে এ নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব হবে। যদি এশার পূর্বে মুযদালিফায় পৌঁছে যায় তবে এশার ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের নামায পড়া জায়িয হবে না।
এ রাত্রে না ঘুমিয়ে নামায কুরআন তিলওয়াত, যিকর, তাওবা- ইস্তিগফার, দু'আ এবং কান্নাকাটিতে মশগুল থাকবে। এ রাত্র শবে-কদর হতেও উত্তম। সুবহে সাদিকের পর অন্ধকার অবস্থায় আউয়াল ওয়াক্তে ইমামের সাথে অথবা একা ফজরের নামায পড়ে মাশ'আরুল হারামের নিকটে উকূফ করবে। এখানে জায়গা না পেলে 'বতনে মুহাস্সার' ছাড়া যে কোন স্থানে উকৃষ্ণ করতে পারবে। অবস্থানের সময় হামদ, সানা, তাসবীহ্, তাহলীল, তাকবীর ও তালবিয়া পাঠ করবে এবং নবী করীম (সা.)-এর প্রতি দরূদ শরীফ পড়বে। এরপর উভয় হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে নিজের নেক বাসনা পূরণের জন্য আল্লাহ্ দরবারে দু'আ করবে।
দুই রাক'আত পরিমিত সময় বাকী থাকতে সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনা অভিমুখে যাত্রা করবে। 'বতন মুহাস্সার' এ পৌছার পর এ স্থানটি দৌড়িয়ে পার হয়ে যাবে। কেউ যদি সুবহে সাদিকের আগেই মুযদালিফার সীমানা অতিক্রম করে চলে যায় তবে দম দেওয়া তার উপর ওয়াজিব হবে। কিন্তু শরী'আত স্বীকৃত কোন কারণে অর্থাৎ অসুস্থতা, দুর্বলতা ইত্যাদির কারণে কেউ যদি সেখান থেকে রাত্রেই রওয়ানা করে তবে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।
মুযদালিফা হতে রওয়ানা হওয়ার সময় সত্তরটি নুড়ি পাথর কুড়িয়ে সাথে নিয়ে নিবে। এ সব পাথর রাস্তা বা অন্য কোথাও হতে সংগ্রহ করাও জায়িয। কিন্তু এগুলো জামরাতের নিকট হতে সংগ্রহ করবেনা। মিনায় পৌছে জামরাতুল উখরাতে রমী করবে। অর্থাৎ উপরোক্ত স্থানে এসে বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং শাহাদাত আঙ্গুলির সাহায্যে কংকর ধরে নিম্নভূমির দিকে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে একে একে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। প্রথম কংকর নিক্ষেপের সময় তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিবে। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় তাক্বীর বলবে অথবা
بِسْمِ اللهِ اللَّهُ أَكْبَرُ رَغَمًا لِلشَّيْطَانِ وَ رِضَى لِلرَّحْمَنِ
দু'আটি পড়বে। কংকর নিক্ষেপের সময় হাত এত উপরে উঠাবে না যে বগল উন্মুক্ত হয়ে যায়। রমী শেষ করে সেখানে দাঁড়াবেনা, বরং নিজের থাকার জায়গায় চলে আসবে। এদিকে অন্য কোন জামরাতে আর পাথর মারতে হবে না। ১০ তারিখ রমীর ওয়াক্ত হল সেদিনের সুবহে সাদিক হতে ১১ তারিখের সুবহে সাদিক পর্যন্ত। কিন্তু সূর্যোদয়ের সময় হতে সূর্য হেলে পড়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রমী করা সুন্নাত। এরপর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুবাহ এবং সূর্যাস্ত হতে ফজর পর্যন্ত রমী করার মাকরূহ সময়।
'রমী সমাপ্ত করে কুরবানী করবে। নিজে যবাহ্ করতে পারলে নিজ হাতে যবাহ্ করাই উত্তম। নিজের কুরবানীর গোস্ত আহার করা মুস্তাহাব। সুতরাং যতটা সম্ভব অথবা প্রয়োজন কুরবানীর গোস্ত নিয়ে নিবে। বাকী গো সাদাকা করে দিবে।
হজ্জে ইফরাদ পালন কারীর জন্য শুকরিয়া স্বরূপ কুরবানী করা মুস্তাহাব। ওয়াজিব নয়। এরপর কিবলামুখী হয়ে বসে মাথা মুণ্ডন করিয়ে নিবে অথবা ছাটাবে। তবে মুণ্ডন করাই উত্তম। এ ক্ষৌরকার্য ডান দিক হতে শুরু করাবে। ক্ষৌর কার্যের শুরুতে এবং শেষে তাকবীর বলবে। মহিলাদের জন্য মাথা মুণ্ডন করা জায়িয নয়। সুতরাং তারা চুলের গোছা ধরে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ নিজে অথবা কোন মাহরামের মাধ্যমে কাটাবে। অবশ্য বেগানা কোন পুরুষের দ্বারা চুল কাটাবে না। পুরুষ লোকের মাথা মুণ্ডন না চুল কর্তন করার পর গোঁফ ছাটবে এবং বগলের পশম পরিষ্কার করবে। মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল ছাটার পূর্বে বগলের পশম ইত্যাদি পরিষ্কার করা জায়িয নেই। ক্ষৌর কার্যের পর নখ, চুল ইত্যাদি দাফন করা উত্তম। ইহরামের কারণে যে সব কাজ নিষিদ্ধ ছিল, তা হালাল হয়ে যাবে। শুধু স্ত্রী হালাল হবে না। অর্থাৎ স্ত্রী সহবাস, চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি হালাল হবে না। অবশ্য তাওয়াফে যিয়ারতের পরে তা হালাল হবে।
১০-১১-১২ তারিখ পর্যন্ত মাথা মুণ্ডানো বা ছাটা জায়িয আছে। কিন্তু ১০ তারিখে করাই উত্তম। যদি মাথায় চুল না থাকে তবে মাথার উপর দিয়ে খুর টেনে নিবে। মাথায় ফোড়া উঠার কারণে মাথায় ক্ষুর ব্যবহার কর। যদি সম্ভব না হয় এবং চুল যদি কাটার উপযুক্ত ও না হয় তবে সে মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা ব্যতিরেকেই হালাল হয়ে যাবে। কেননা মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাটা তার পক্ষেত্রসম্ভব হওয়ার কারণে তা রহিত হয়ে যাবে। এরূপ ব্যক্তির জন্য উত্তম হল কুরবানীর শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে হালাল হওয়া। যদি তা না করে প্রথম দিনই হালাল হয়ে যায় তবে এতে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। মাথা মুণ্ডানোর জন্য ঔষধ জাতীয় কোন পদার্থ ব্যবহার করাও জায়িয। ক্ষৌরকার্য সমাপ্ত করে চুল মল মুত্রের উপর বা হাম্মামখানায় নিক্ষেপ করা মাকরূহ।
তারপর মক্কা শরীফ এসে তাওয়াফে যিয়ারত সমাপ্ত করবে। ১০ই যিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারত করা উত্তম। সম্ভব না হলে ১১ই যিলহজ্জ বা ১২ই যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এ তাওয়াফ করে নিবে। যদি তাওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ করে থাকে তবে এ তাওয়াফে রমল করবে না এবং সাঈও করবে না। আর তাওয়াফে কুদূমের সাথে সায়ী না করে থাকলে এ তাওয়াফের সাথে রমল করবে এবং সাঈ ও করবে। মাথা কামানো বা ছাটার পর ইহরামের কাপড় খুলে সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করে থাকলে এ তাওয়াফের সময় ইযতিবা করতে হবে না। নতুবা ইত্তিবা করবে। তাওয়াফ শেষ করে মিনায় চলে আসবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলোতে জামরা সম্মুখে কংকর নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে এখানেই অবস্থান করবে। তাওয়াফে যিয়ারতের পর স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি হালাল হয়ে যায়। মিনার দিনগুলোতে অন্য কোথাও রাত্রি যাপন করা মাকরূহ। যদি করে তবে কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।
১১ই যিলহজ্জ দ্বিপ্রহরের পর জামরাত্রয়ে কংকর নিক্ষেপ করবে। মসজিদে খায়ফের নিকটবর্তী জামরা থেকে রমী আরম্ভ করবে। এখানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে এবং প্রত্যেক বার কংকর মারার সময় তাক্বীর বলবে। এরপর এর নিকটবর্তী জামরা তথা জামরায়ে উস্তায় অনুরূপভাবে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। তারপর জামরায়ে আকাবার নিকটে এসে 'বতনে ওয়াদী' থেকে তাব্বীর বলে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। জামরায়ে উলা তথা প্রথম জামরায় কংকর মেরে সামান্য সম্মুখে অগ্রসর হয়ে কিল্লামুখী হয়ে দাড়িয়ে তাস্বীহ, তাহলীল তাব্বীর এবং তাওবা ইসতিগফারে কিছু সময় লিপ্ত থাকবে। এর পর সেখানে দু'হাত তুলে দু'আ মুনাজাত করবে।
এমনিভাবে জমরায়ে উস্তায় রমী করার পর ও তাসবীহ্ তাহলীল, তাওবা ইস্তিগফার কিছু সময় লিপ্ত থাকার পর দু'আ করবে। কিন্তু জামরায়ে আকাবায় রমী করার পর কোন দু'আ করবে না। বরং রমী শেষ করে যথাশীঘ্র নিজের অবস্থান স্থানে ফিরে আসবে। তারপর ১২ তারিখেও দ্বিপ্রহরের পর একই পদ্ধতিতে জামরাত্রয়ে রমী করবে।
১২ তারিখের রমী সমাপ্ত করার পর মক্কা শরীফ চলে আসতে পারবে। এরূপ করলে ১৩ই যিলহজ্জ আর রমী করতে হবে না। কেউ ইচ্ছা করলে ১২ই যিলহজ্জ দিবাগতরাতে ও মিনায় অবস্থান করতে পারবে। যদি ১৩ তারিখ ফজর পর্যন্ত মিনায় থাকে তবে দ্বিপ্রহরের পর যথা নিয়মে জামরায়ে কংকর নিক্ষেপের পর সেখান থেকে চলে আসবে। এটাই উত্তম। আর যদি ইচ্ছা করে তবে দ্বিপ্রহরের পূর্বে ও কংকর নিক্ষেপ করে চলে আসতে পারবে।
কংকর নিক্ষেপের পর মক্কা শরীফ ফিরার পথে 'বতনে মুহাসাব' নামক স্থানে অবতরণ করে সেখানে কিছুক্ষণ সময় অবস্থান করা সুন্নাত। কেউ যদি তা তরক করে তবে যে সুন্নাতের পরিপন্থী কাজ করেছে বলে বিবেচিত হবে। তারপর মক্কা মুকাররমা আসবে। যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকতে পারবে। এ সময় যেত বেশী ইচ্ছা তাওয়াফ ও উমরা পালন করতে পারবে। অবশ্য ৯ই যিলহজ্জ হতে ১৩ ই যিলহজ্জ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে উমরা করা নিষিদ্ধ। ১৩ই যিলহজ্জের পর উমরা করতে পারবে। এরপর যখন মক্কা শরীফ থেকে রওয়ানা করার ইচ্ছা করবে তখন তাওয়াফে বিদা তথা বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করবে। এই তাওয়াক ওয়াজিব। যদি কেউ এই তাওয়াফ না করে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে তবে মীকাত অতিক্রম না করে থাকলে পুনরায় ফিরে আসা ওয়াজিব। মীকাত অতিক্রম করে থাকলে ইচ্ছা করলে দম দিতে পারবে। আর যদি ইচ্ছা করে তবে পুনরায় ইহরামের বেঁধে প্রথমে উমরা আদায় করে পরে বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করবে। কিন্তু কেউ যদি তাওয়াফে যিয়ারতের পর নফল তাওয়াফ করে থাকে তবে তার বিদায় তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে। যদি ও সে সময় বিদায়ী তাওয়াফের নিয়াত না করে থাকে।
উল্লেখ্য যে, মক্কা শরীফ থেকে বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তে বিদায় তাওয়াফ আদায় করাই সমীচীন, বিদায়ী তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের নিকটে তাওয়াফের দুই রাক'আত নামায আদায় করবে। এরপর যমযম কূপের নিকট এসে কিল্লামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পেটভরে তিন শ্বাসে পানি পান করবে। এবং প্রত্যেক বার বায়তুল্লাহ্ শরীফের দিকে নযর করবে। পানি পান করার সময় এ দু'আ পড়বে:
بسْمِ اللهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَواةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
এবং শেষ চুমুকের সময় এ দু'আ পড়বে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَلْكَ عِلْمًا نَافِعًا وَ رِزْقًا وَ اسْعًا وَ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ
এরপর অবশিষ্ট পানি মাথায়, মুখে এবং শরীরেই মাখবে। পরে মুলতাযামের নিকট আসবে এবং কা'বার দেয়ালে নিজের বুক ও মুখ লাগিয়ে এব ডান হাত দরজার চৌকাঠের দিকে উঠিয়ে এভাবে দু'আ করবে:
السَّائِلُ بِبَابِكَ يُسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ وَ مَغْفِرَتِكَ وَ يَرْجُوا رَحْمَتِكَ
মুলতাযামকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ পর্যন্ত কান্নাকাটি করবে। যদি সম্ভব হয় তবে কা'বার গিলাফ ধরে কান্নাকাটি করবে। সম্ভব না হলে উভয় হাত মাথার উপর রেখে মাথা বায়তুল্লাহর দেয়ালের সাথে লাগাবে। আবার কখনো গাল বায়তুল্লাহর দেয়ালে রেখে তাক্বীর, তাহলীল ও হামদ পাঠ করবে এবং নবী (সা.)-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করে নিজের নেক মাকসুদ সমূহ পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দু'আ করবে। এরপর তাকবীর বলে হজরে আসওয়াদে চুমু খাবে। কাবা গৃহে প্রবেশ করা সম্ভব হলে খুবই ভাল। প্রবেশ করতে না পারলেও কোন দোষ নেই। তার পর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কা'বার দিকে তাকিয়ে কেঁদে কেঁদে বিরহ বিচ্ছেদের কারণে আফসোস করতে করতে উল্টো পায়ে বাবুল বিদার পথে বের হয়ে আসবে। এ সময় ফকীর মিস্কীনদেরকে যথা সম্ভব বেশী পরিমাণ দান সাদাকা করবে এবং মনে মনে দু'আ পড়তে থাকবে।
হায়িয ও নিফাস ওয়ালী মহিলা যদি মক্কা শরীফ থেকে রওয়ানা হওয়া পর্যন্ত পবিত্র না হয় তবে তার থেকে তাওয়াফে বিদা রহিত হয়ে যাবে। তারা মসজিদের বাইরে বাবুল বিদার উপর দাঁড়িয়ে দু'আ করবে। মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করবে না। এ সব মাস'আলার ক্ষেত্রে মহিলাদের হুকুমও পুরুষের মতই। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, ইহরাম অবস্থায় তারা নিজেদের মাথা খোলা রাখবে না। শুধু মুখমণ্ডল খোলা রাখবে। যদি মুখমণ্ডলের উপর কাপড় ঝুলিয়ে দেয় এবং কোন কিছুর সাহায্যে তা চেহারা থেকে সরিয়ে রাখতে পারে তবে জায়িয আছে।
মহিলাগণ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না। তারা এমনভাবে তালবিয়া পড়বে যেন অন্য কেউ শুনতে না পায়। শুধু নিজে শুনতে পায়। এ ব্যাপারে আলিমগণের ঐক্যমত হয়েছে। মহিলাগণ রমল করবেনা। এবং দুই সবুজ বাতির মাঝখানে দৌড়িয়ে চলবেনা। তারা মাথা মুণ্ডাবেনা। চুল ছোট করে নিবে। মহিলাগণ সেলাই করা কাপড় জামা, কামীস, ওড়না, মোজা এবং হাত মোজা ব্যবহার করতে পারবে। গোলাপী জাফরানী ও কুসূম রঙ্গের পোশাক পরিধান করতে পারবে না। কিন্তু ধুয়ে নিলে পারবে।
মুহরিমা মহিলা যদি সেলাই করা রেশমী অথবা অন্য কোন কাপড় পরিধান করে এবং অলংকার ব্যবহার করে তবে এতে কোন দোষ নেই। হজরে আসওয়াদের নিকট ভিড় থাকলে মহিলাগণ তাতে চুম্বন করবে না। খালি থাকলে চুম্বন করবে। সাফা-মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করা মহিলাদের জন্য অবশ্যক নয়। কিন্তু নির্জন থাকলে আরোহন করতে পারবে। উপরোক্ত মাস'আলা সমূহের ক্ষেত্রে নপুংসক লোকেরাও মহিলাদের মতই (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৯০) হজ্জের প্রকারভেদ | (১৯২) এক নযরে হজ্জে ইফরাদ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |