যে সব শর্ত পাওয়া গেলে হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব হয় তা পাঁচটি:
এগুলো এমন ধরণের শর্ত যে তা পাওয়া যাওয়ার উপরই হজ্জ আদায় ওয়াজিব হয়। যদি হজ্জ ফরয হওয়ার শর্ত এবং আদায় ওয়াজিব হওয়ার শর্ত একই সাথে পাওয়া যায় তবে নিজেকেই হজ্জ করতে হবে। কিন্তু যদি ফরয হওয়ার শর্তাবলী পুরাপুরি পাওয়া যায় আর আদায় ওয়াজিব হওয়ার শর্তবলী থেকে কোন একটি না পাওয়া যায় তবে এ অবস্থায় নিজে গিয়ে হজ্জ করা ওয়াজিব হবে না। বরং নিজের পক্ষ হতে অন্য কারো মাধ্যমে হজ্জ করিয়ে নেয়া অথবা হজ্জ করানোর অসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব হবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
যে ব্যক্তি শারীরিকভাবে অসুস্থ ও পীড়িত অথবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ অথবা খোঁড়া বা অন্ধ অথবা নিজে সফর করতে অক্ষম, কিন্তু হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার যাবতীয় শর্ত তার মধ্যে বিদ্যমান এমন ব্যক্তির উপর হজ্জ ওয়াজিব হবে কিনা এ সম্বন্ধে ফকীহগেণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশের মতে তার উপর হজ্জ ফরয হবে। তাঁদের মতে এ ধরণের লোক যদি নিজে হজ্জ করতে না পারেন তার উপর বদলী হজ্জ করানো অথবা হজ্জের অসিয়্যত করে যাওয়া ওয়াজিব। আর নিজে হজ্জ সমাপন করে নেয় তবে তাতেও হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে কোন কোন আলিমের মতে এ ধরণের লোকের উপর হজ্জ ওয়াজিব নয় এবং বদলী হজ্জ করানো অথবা এর অসিয়্যত করে যাওয়াও ওয়াজিব নয়।
উপরোক্ত মতবিরোধ তখনই প্রয়োজ্য হবে যদি কোন মানুষ দৈহিকভাবে অক্ষম হওয়ার পর হজ্জ করার মত আর্থিক সামর্থ অর্জন করে। কিন্তু যদি সুস্থ থাকা অবস্থায় কারো উপর হজ্জ ফরয হয় এবং পরে অসুস্থ বা অপরাগ হয়ে যায় তবে সর্বসম্মতভাবে তার উপর হজ্জ করা ওয়াজিব। এমতাবস্থায় সে স্বয়ং হজ্জ করতে অপরাগ হলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করাবে অথবা অসিয়্যত করে যাবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
মাযূর অবস্থায় কেউ যদি অন্য কারো দ্বারা হজ্জ করায় তবে হজ্জ আদায় হয়ে যাবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত হল, রাস্তাঘাট নিরাপদ হওয়া। ফকীহ্ আবুল লায়স (র.)-এর মতে রাস্তা যদি সাধারণত নিরাপদ থাকে তবে হজ্জ ওয়াজিব হবে। অন্যথায় ওয়াজিব হবে না (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
যদি হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার যাবতীয় শর্ত বিদ্যমান থাকে কিন্তু রাস্তাঘাট নিরাপদ না হয় যেমন কোন যালিমের অত্যাচারের ভয়, হিংস্র জন্তুর আক্রমণের ভয় ইত্যাদি বিরাজমান থাকে তবে এ অবস্থায় হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব হবে না। যদি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রাস্তাঘাট নিরাপদ না হয় তবে বদলী হজ্জের অসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব। যদি অধিকাংশ কাফেলা নিরাপদে পৌঁছে যায় এবং ঘটনাক্রমে দু' একটি কাফেলা লুণ্ঠিত হয় তবে পথঘাট নিরাপদ আছে বলে গণ্য (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
যদি কেউ কারাবন্দী থাকে অথবা শাসনকর্তা যদি কাউকে হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে বাধ্য প্রদান করে তবে তার উপর হজ্জ ওয়াজিব হবে না। এরূপ অবস্থায় যদি শেষ জীবন পর্যন্ত হজ্জে গমনের কোন সুযোগ না পাওয়া যায় তবে মৃত্যুর পূর্বে বদলী হজ্জ করানোর অসিয়্যত করে যাওয়া ওয়াজিব। যদি কারো নিকট লোকের ধনসম্পদ পাওনা থাকে এবং এ জন্য তার জেল হয়ে যায় আর সে ব্যক্তি আর্থিকভাবে এমন স্বচ্ছল হয় যে তার উপর হজ্জ করা ওয়াজিব এবং লোকের হক আদায় করতেও সে সক্ষম তবে এ অবস্থা ওযর হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবেনা। বরং হজ্জ করা তার প্রতি ওয়াজিব হবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
আবাসস্থল থেকে মক্কা শরীফ যদি তিন দিনের দূরত্বের পথ হয় তবে হজ্জ সফরে মহিলাদের সাথে স্বামী বা কোন মাহরম পুরুষ থাকা ফরয। যুবতী কিংবা বৃদ্ধ সবার ক্ষেত্রেই এ হুকুম প্রযোজ্য। যদি তিন দিনের কম দূরত্বের পথ হয় তবে মহিলারা মাত্রাম ব্যতীত ও হজ্জ করতে পারবে। স্বামী অথবা ঐ লোক যার সাথে আত্মীয়তা ও দুগ্ধ সম্পর্ক অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে কখনও বিবাহ শাদী জায়িয হয় না এমন ব্যক্তিকে মাহরাম বলে। মাহ্রাম আমানতদার এবং বালিগ হওয়া শর্ত। মাহ্রাম ব্যক্তি আযাদ হওয়া শর্ত নয়। গোলাম ও মাত্রাম হতে পারবে।
কোন বালক যদি বুদ্ধিমান হয় এবং বালিগ হওয়ার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে যায় তবে সে বালিগের মতই বিবেচিত হবে। এবং তার সাথে হজ্জ করা জায়িয হবে। স্বীয় গোলাম মহিলার জন্য মাত্রাম হিসাবে বিবেচিত হবে না। বালকের স্বপ্নদোষ না হওয়া পর্যন্ত এবং পাগল সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মাহরাম হতে পারবে না।
হজ্জ যাত্রী মহিলা নিজের মাল হতে সাথী মাহরাম পুরুষের ব্যয়ভার বহন করবে। যাতে সেও তার সাথে হজ্জ করতে পারে। মাহরাম পাওয়া গেলে মহিলাদের উপর হজ্জ ফরয হবে। এ ক্ষেত্রে স্বামী অনুমতি না দিলেও হজ্জে যাওয়া জায়িয হবে। নফল হজ্জ হলে স্বামীর অনুমতি ছাড়া হজ্জের সফরে বের হতে পারবে না (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
যদি কোন মহিলার স্বামী না থাকে অথবা স্বামী থাকলেও সে যদি স্ত্রীর সাথে হজ্জে যেতে রাজী না হয়, এমনিভাবে তার যদি কোন মাহরাম ব্যক্তিও না থাকে অথবা মাহ্রাম পুরুষ আছে কিন্তু ঐ মহিলার সাথে হজ্জে যেতে রাজী না হয় তবে উক্ত মহিলার উপর হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব হবে না। জীবনের শেষ পর্যায়েও যদি এ মহিলা হজ্জ করতে না পারে তবে কারো দ্বার। বদলী হজ্জ আদায় করার অসিয়্যত করে যাওয়া তার উপর ওয়াজিব। যদি কোন মহিলা স্বামী অথবা মাত্রাম ছাড়াই হজ্জ করে তবে হজ্জ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু সে গুনাহগার হবে (শামী. ২য় খণ্ড)।
কোন মহিলা তার মাহরাম ও স্বামীকে তার সঙ্গে হজ্জে যাওয়ার জন্য বাধ্য করতে পারবে না। মাত্রামদের জন্যও তখনই মহিলাদের সাথে হজ্জে গমন করা জায়িয হবে যদি তারা ফিত্না এবং কামভাব জাগ্রত হওয়ার আশংকা হতে মুক্ত থাকে। পক্ষান্তরে যদি তার মনে এ সন্দেহ প্রবল হয় যে, সফরের সময় একান্ত নিরিবিলি পরিস্থিতিতে অথবা কোন কার্য উপলক্ষে স্পর্শ লাগার কারণে কামভাব জাগ্রত হয়ে যেতে পারে তাহলে উক্ত মাহরনের জন্য মহিলার সঙ্গে হজ্জে যাওয়া জায়িয হবে না। নপংসুক মহিলার সাথেও মাহরাম থাকা শর্ত। যদি কোন মহিলার সাথে তার স্বামী না থাকে বরং অন্য কোন মাহরাম থাকে এবং তাকে সাওয়ারীতে উঠানো ও নামানোর প্রয়োজন থাকে এ অবস্থায় যদি নিজের অথবা মহিলার পক্ষ হতে কামভাব জাগ্রত হওয়ার আশংকা থাকে তবে যতটুকু সম্ভব এর থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। যদি কোন মহিলার উপর হজ্জ ফরয হয় এবং সঙ্গে যাওয়া জন্য মাহরাম ও পাওয়া যায় তবে স্বামী তাকে ফরয হজ্জ হতে বিরত রাখতে পারবে না। যদি মাহরাম না পাওয়া যায় অথবা নফল হজ্জ হয় তবে স্বামী ইচ্ছা করলে বাধা প্রদান করতে পারবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
যদি কোন মহিলা হজ্জের মানত করে তবে মানত শুদ্ধ হবে। কিন্তু স্বামীর অনুমতি ব্যতীত হজ্জে গমন করতে পারবে না। যদি জীবদ্দশায় হজ্জ সমাপন করতে না পারে তবে মৃত্যুর পর বদলী হজ্জ আদায় করানো অসিয়্যত করে যাওয়া তার উপর ওয়াজিব। যদি কোন মহিলা পায়ে হেঁটে হজ্জ করতে চায় তবে তার অভিভাবক অথবা স্বামী তাকে বাধা দিতে পারবে। কোন মহিলা যদি হজ্জের নির্ধারিত মাসের পূর্বে অথবা সাধারণভাবে হাজীগণ যখন হজ্জে গমন করে এরপূর্বে হজ্জের সফরে বের হতে চায় তবে স্বামী তাকে বাধা দিতে পারবে। মাহরাম ছাড়া মহিলা সঙ্গিনীদের সাথে মহিলার হজ্জে যাওয়া না জায়িয (শামী, ২য় খণ্ড)।
মহিলাদের উপর হজ্জ আদায় করা তখনই ওয়াজিব হবে যখন তারা ইদ্দত পালনের অবস্থা হতে মুক্ত থাকে। এ ইদ্দত স্বামীর মৃত্যুর কারণে হোক অথবা তালাকের কারণে হোক। রাজঈ তালাক হোক অথবা বায়িন তালাক হোক সব অবস্থাতেই এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। কাজেই স্বামীর মৃত্যুর পরবর্তী ইদ্দত অথবা তালাকের ইদ্দতের অবস্থায় কোন মহিলার জন্য হজ্জের সফরে বের হওয়া জায়িয নেই। অনুরূপ যদি পথিমধ্যে কোন শহরে অবস্থান কালে মহিলার ইদ্দতকাল শুরু হয় এবং সেখান থেকে মক্কা শরীফ যদি তিন দিনের সফরের পথ হয় তবে ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে ঐ শহর থেকে বের হবে না। যদি হজ্জের উদ্দেশ্যে বাড়ী হতে বের হওয়ার পর ইদ্দত পালনের মত অবস্থার সম্মুখীন হয় তবে রিজঈ তালাক হলে স্বামী তার থেকে আলাদা হবে না। এ অবস্থায় স্বামীর জন্য উত্তম হল, পুনরায় স্ত্রীকে গ্রহণ করে নেয়া। আর বায়িন তালাক হলে স্বামী বে-গানা পুরুষের মতই গন্য হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
যদি কোন মহিলা ইদ্দতের অবস্থায় হজ্জ সমাপন করে নেয় তাহলে হজ্জ আদায় হবে। কিন্তু সে গুনাহগার হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।