হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)-এর হুজরার মধ্যে রওযা মোবারক তৈরী করা হয়। হযরত আলী (রাঃ), হযরত আব্বাস (রাঃ), হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং নবী করিম (দঃ)-এর আশ্রিত খাদেম হযরত সালেহ (রাঃ)-এই চারজন সাহাবী নবী করিম (দঃ) কে রওযা মোবারকে নামান। হযরত আব্বাস (রাঃ) দেখতে পেলেন-কাফনের ভিতরে হুযুর (দঃ)-এর ঠোঁট মোবারক নড়ছে-তিনি জীবিত। তিনি কান লাগিয়ে শুনতে পেলেন- নবী করিম (দঃ) "রাব্বি হাক্বী উম্মতি” বলে কাঁদছেন। ইমাম বায়হাকীর সূত্রে ইমাম তকিউদ্দিন সুর্কি রেওয়ায়াত করেন:
إنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بَعْدُ مَا دُفِنَ فِي قَبْرِهِ رَدَّ اللَّهُ رُوحَةً وَاسْتَمَرَّتَ الرُّوحُ فِي جَسَدِهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لِيَرُدَّ عَلَى مَنْ سَلَّمَ عَلَيْهِ (شَفَاءَ السَّقَامِ فِي زِيارَة خَيْرٌ لا نَامِ لِلْعَلَامَةِ تَقِيُّ الدِّينِ سُبكي (ح)
অর্থ-"রাসুল মকবুল (দঃ) কে রওযা মোবারকে দাফন করার পরপরই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রূহ মোবারককে ফেরত পাঠিয়ে দেন এবং রূহ মোবারক দেহ মোবারকের মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত সবসময় অবস্থান করতে থাকবে- যাতে তিনি উম্মতের সালামের জবাব দিতে পারেন"
(ইমাম তকিউদ্দীন সুবুকী (৬২৭ হিঃ) কৃত সিফাউস সিকাম ফী যিয়ারাতে খাইরিল আনাম)
বিঃ দ্রঃ ইবনে তাইমিয়া কর্তৃক নবী করিম (দঃ)-এর রওযা মোবারক যিয়ারতের সফরকে শির্ক বলে ফতোয়া প্রদানের বিরুদ্ধে এবং যিয়ারত যে নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠতম উপায়-সে সম্পর্কে সুবুকীর এই গ্রন্থখানা রচিত হয়। ইবনে তাইমিয়া (৭২৮ হিঃ) ছিল ওহাবী সম্প্রদায়ের মূল পূর্বগুরু। পরবর্তী গুরু হলো ইবনে কাইয়েম (৭৫১ হিঃ)। এর পরবর্তী গুরু ইবনে ওহাব নজদী (১২০৬ হিঃ)। তার পরবর্তী ওহাবী গুরু ঈসমাঈল দেহলভী (১২৪৬ হিঃ)। তার পরবর্তী গুরু কাছেম নানুতবী, গাঙ্গুহী, থানবী প্রমুখ ওহাবী নেতা। ইমাম তকিউদ্দিন সুকী (রহঃ) ছিলেন সে যুগের (৭৫১) সুন্নী ইমাম। তাঁর লিখিত শিফাউস সিকাম গ্রন্থখানা খুবই তথ্যবহুল ও হাদীস নির্ভর।
উপরে বর্ণিত ইমাম বায়হাকী (রহঃ)-এর রেওয়ায়াতখানা একথাই প্রমাণ করে যে, নবী করিম (দঃ)-এর রুহ্ মোবারক সোমবার দ্বিপ্রহরের কিছু পূর্ব হতে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় ৪০ ঘন্টা দেহ মোবারক থেকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে পৃথক থাকার পর ঐ রাত্রেই পুনরায় ফেরত দান করা হয়। কাজেই নবী করিম (দঃ) এখন সশরীরে রওযা মোবারকে হায়াতুন্নবী হিসাবে জীবিত আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন।
এই পবিত্র জীবন ও হায়াত দুনিয়াবী হায়াত। দেওবন্দী আলেম খলীল আহমদ আম্বেটী তার প্রতারণামূলক 'তাস্দীকাত' গ্রন্থে মক্কা মদিনার আলেমদের নিকট প্রতারণা করে স্বীকার করেছে যে, "নবী করিম (দঃ) দুনিয়াবী হায়াতের সাথেই রওযা মোবারকে জীবিত আছেন এবং ইহাই দেওবন্দের আক্বিদা। এই অর্থেই তিনি হায়াতুন্নবী (দঃ)"। খলিল আহমদ আম্বেটীর এই দাবী প্রতারণামূলক-ফেননা ওহাবীপন্থী ইসমাইল দেহলভী তাক্তিয়াতুল ঈমান গ্রন্থে বলেছে- "নবী করিম (দঃ) মরে-পঁচে-গলে মাটির সাথে মিশে গিয়েছেন" (নাউজুবিল্লাহ)। (তাকভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৬০)। বাংলাদেশে ইসমাইল দেহলভীর অনেক অনুসারী আছে। তারাও হায়াতুন্নবী বিশ্বাস করেনা।
অথচ দেওবন্দেরই হেড মোহাদ্দেস শাহ্ আওয়ার কাশ্মিরী তাঁর রচিত ফয়জুল বারী শরহে বোখারী ১ম খন্ডে ১ম পারায় উল্লেখ করেছেন-
اتفق العلماء على حَيَاتِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
অর্থ-"পূর্ব জামানার সমস্ত ওলামাগণের ঐকমত্য হচ্ছে নবী করিম (দঃ) সশরীরে জীবিত এবং অন্যান্য নবীগণও”।
একারণেই তাঁর দেওবন্দের চাকুরী চলে যায়।
রাসূল মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-"যে কোন মুসলমান যে কোন স্থান থেকে আমাকে ছালাম জানায়-আল্লাহ তায়ালা আমার রূহানী তাওয়াজজুহ্ তার দিকে ফিরিয়ে দেন। অতঃপর আমি তার ছালামের জবাব দেই”- (আবু দাউদ ও মিশকাত)
বুঝা গেল-দুনিয়ার সব সালাম পাঠকারীর সালাম তিনি একসাথে শুনতে পারেন এবং একসাথে জবাবও দিতে পারেন। জালালুদ্দীন সুযুতি আল-হাভী গ্রন্থে নবী করিম (দঃ) কর্তৃক রওযা মোবারক থেকে ৫টি দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা: "উম্মতের যাবতীয় আমল প্রত্যক্ষ করা এবং অলী-আল্লাহদের জানাযায় শরিক হওয়া”। ওয়াহাবী নেতা ইবনে কাইয়েম রচিত "জ্বালাউল আফহাম" নামক গ্রন্থে একখানা হাদীস এরূপ বর্ণিত হয়েছে "আনা আছমাউ ছালাতাকুম আলাইয়া বিলা ওয়াছিতাতিন"-অর্থাৎ-"আমি ফিরিস্তাদের মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি তোমাদের সালাম শুনতে পাই"। (মূল নোছখা)
বুঝা গেল-নবী করিম (দঃ) সদা জাগ্রত এবং প্রেমিকদের সালাম সরাসরি শুনেন। ফিরিস্তাগণ তাদের ডিউটি হিসাবে পরে তা পৌঁছান। মোহাদ্দেসীনগণ এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন- "মহব্বতের সালাম তিনি নিজে শুনেন এবং মুখের সালাম ফিরিস্তারা পৌঁছায় (সূত্র: জাআল হক)।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৮৫) হুযুরের জানাযার ধরন | (০৮৭) রওযা মোবারক-বনাম-আরশ মোয়াল্লা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |