নবী করিম (দঃ)-এর ইনতিকালের সময় ঘনিয়ে আসলে হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ) কে সংবাদ পাঠান। হযরত হাফসা (রাঃ) সংবাদ দেন নিজ পিতা হযরত ওমর (রাঃ) কে এবং হযরত ফাতেমা (রাঃ) খবর দেন হযরত আলী (রাঃ) কে (বেদায়া নেহায়া)। তাঁরা কেউ ঐ সময় উপস্থিত ছিলেন না। ইত্যবসরে হুযুর (রাঃ)- এর ওফাত শরীফ সংঘটিত হয়।
হযরত আবু বকর (রাঃ) সংবাদ পেয়ে সানাহ্ নামক মহল্লায় তাঁর স্ত্রী বিে খারেজার গৃহ হতে তড়িৎ গতিতে চলে আসেন এবং নবী করিম (দঃ)-এর চাদর মোবারক সরিয়ে ইন্নালিল্লাহি বলে হুযুরের (দঃ) কপাল মোবারকে তিনবার চুম্বন দিয়ে বলেন-"ইয়া রাসুলাল্লাহ। আপনি হায়াত মউত-উভয় অবস্থায়ই কত পবিত্র"! একথা বলে তিনি সোজা মসজিদে নববীতে চলে যান এবং ক্রন্দনরত অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামকে শান্তনা দিয়ে ভবিষ্যৎ কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন। কেননা, নবী করিম (দঃ)-এর কাফন দাফনের পূর্বেই ইসলামী রাষ্ট্রের পরবর্তী উত্তরাধিকারী নির্বাচন করা একান্ত জরুরী ছিল। তা না হলে বৈদেশিক আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃংখলার মোকাবেলা কে করবে? এবং জানাযার ইনতিযাম কে করবেন?
হযরত ওমর (রাঃ) প্রথমে নবী করিম (দঃ)-এর ইনতিকালের কথা স্বীকারই করেননি। তাঁর অবস্থা ছিল তখন ভাব বিহবলতাপূর্ণ। হযরত আবু বকর (রাঃ) যখন কোরআনের আয়াত "ওয়ামা মোহাম্মদুন ইল্লা রাসুল" তিলাওয়াত করে শুনালেন-তখন হযরত ওমর ও অন্যান্য সকলের বিহবলতা কেটে যায় এবং ভবিষ্যৎ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেন। হযরত ওমর (রাঃ) মত প্রকাশ করেন যে; যেহেতু হুযুর (দঃ)-এর নির্দেশে হযরত আবু বকর (রাঃ) ইমামতি করেছেন-সুতরাং, রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব ও খিলাফতের জন্য তিনিই যোগ্যতম ব্যক্তি। একথা বলে হযরত ওমর (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর হাত ধরে বলে
فأخذ عمر بيده وقال بايعتك، فبايعه الناس (بخاري)
"হে খলিফাতুর রাসুল! আমি আপনার নিকট আনুগত্যের বাইআত করছি"। এভাবে মসজিদে উপস্থিত মোজাহিরগণ হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে বাইআত করেন-
(বোখারী)
সোমবারের অবশিষ্ট দিন ও রাত মসজিদে নববীতে বাইআতের কাজ চলতে থাকে।
পরদিন মঙ্গলবার সকালে মদিনার বনু সায়েদার দরবার হলে আনসারগণ একত্রিত হয়ে খেলাফতের বিষয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের মতামত ছিল-মোহাজিরগণের খলিফা হবেন একজন, আর আনসারগণের খলিফা হবেন আনসারদের মধ্য হতে অন্য একজন। হযরত সাআদ ইবনে ওবাদা আনসারী (রাঃ) ছিলেন এই প্রস্তাবের উদ্যোক্তা। এমন সময় হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের কথা শুনে বললেন-এক রাজ্যে দু'খলিফা মনোনীত হওয়ার অর্থ-নিজেরাই নিজেদেরকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা। তিনি নবী করিম (দঃ)-এর বাণী স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন-হুযুর (দঃ) বলেছেন- "আল খিলাফাতু মিন কোরাইশিন" অর্থাৎ-"আমার পরবর্তী খলিফা হবে কোরাইশদের মধ্য হতে"।
আনসারদের মধ্যে অনেকেরই এ হাদীসটির কথা স্মরণ ছিলনা। হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর মুখে এ হাদীস শুনে সকলের হুঁশ হলো এবং একটি বিপর্যয় থেকে উম্মত রক্ষা পেল। দুই খলিফার প্রস্তাবক হযরত সাআদ ইবনে ওবাদা (রাঃ) সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন-"আনতুমুল উমারা ওয়া নাহ্নুল ওযারা" অর্থাৎ "আপনারা মোহাজির কোরইশগণ হবেন শাসক এবং আমরা আনসারগণ হবো উযির বা পরামর্শদাতা"। একথা বলেই তাঁরা সবাই হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে হাত দিয়ে বাইআত করলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) সকিফা বনী সায়েদা-এর বাইআতের কাজ সমাপ্ত করে মসজিদে নববীতে চলে আসেন এবং মিম্বার শরীফে আরোহন করে আপন খেলাফতের ঘোষণা দেন ও নীতি নির্ধারণী ভাষণ প্রদান করেন। এ ভাষণে তিনি নবী করিম (দঃ)-এর পথ ও মত অনুসরণ করার কথা ঘোষণা করেন। তারপর শোকে বিহবল হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত যোবাইর (রাঃ) কে ডেকে আনেন এবং তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
"আপনারা দু'জন এখনও বাইআত না করে কি মুসলমানদের শক্তি ও ঐক্য দুর্বল করতে চান"? হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত যোবাইর (রাঃ) তদুত্তরে বললেন-"হে খলিফাতুর রাসুল। আপনার বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আমরা আপনার নিকট বাইআত করলাম"
(বেদায়া ও নেহায়া)।
এই দুজনের বাইয়াতের মাধ্যমে নবী পরিবারের ঘনিষ্টজনদের বাইআতের কাজ সমাপ্ত হলো। সুতরাং শিয়াদের অভিযোগ খন্ডন হয়ে গেলো। তারা বলে, হযরত আলী (রাঃ) নাকি হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে বাইআত করেননি।
হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে এই বাইআত ছিল খিলাফাত ও ইরাদাত উভয়টি। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় প্রকারের বাইআত-এর এই ধারা হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) পর্যন্ত চালু ছিল। খিলাফতের যুগের পর যখন মুলুকিয়াত বা রাজতন্ত্র শুরু হলো, তখন থেকে বাইআতে খেলাফত চলে যায় বাদশাহদের হাতে এবং বাইআতে ইরাদাত বা আধ্যাত্মিক বাইআত ও তরিকতের বাইআত থেকে যায় ইমাম হাসান-হোসাইন, সালমান ফারছী-প্রমুখ সাহাবায়ে কেরামের হাতে। অদ্যাবধি আধ্যাত্মিক বাইআত বা তরিকতের বাইআত পীর মাশায়েখ-তথা রাসুলের খলিফাগণের হাতে চালু রয়েছে।
পীর তথা নবীজীর খলিফাগণের হাতে বাইআত হওয়া মূলতঃ নবী করিম (দঃ)-এর নিকটই বাইআত হওয়া। আর রাসূলের হাতে বাইআত হওয়া মূলতঃ আল্লাহর কাছেই বাইআত হওয়া (ফাতাহ, ১০ আয়াত) তাফসীরে রুহুল বয়ান সুরা আল ফাতাহ্-এর তাফসীরে 'বাইআতুশ শায়খ'-এর উপর খুব জোর দেয়া হয়েছে। ইসমাইল হক্কী (রহঃ) বলেন-
المُبَايَعَةُ، يَقُولُ الفَقِيرُ إِسْمَاعِيل: ثَبَتَ بِهَذِهِ الْآيَةِ سُنَّةُ المُبَايَعَةِ، وَأَخْذُ التَّلْقِينِ مِنَ الْمَشَايِخِ الْكِبَارِ.
অর্থ-"সুরা আল ফাতহ-এর ১০ নং আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহান মাশায়েখগণের নিকট বাইআত হয়ে তালক্বীন নেয়া সুন্নাত"। কেননা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য পীর অনুসন্ধান করা এবং তাঁদের সান্নিধ্য লাভ করার উপর কোরআন মজিদের সুরা মায়েদা ও সুরা তাওবায় তাকিদ ও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তাফসীরে সাভীতে উল্লেখ আছে- "বাইআতে শেখ এবং বাইআতে ইমামও উক্ত ১০ নং আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, ঐ আয়াতটির শানে নুযুল খাস হলেও হুকুম আম"। আরবী এবারতসহ বিস্তারিত বর্ণনা হোদাবিয়ার সন্ধি ৩৯ অধ্যায়ে দেখুন।
হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর ইনতিকালের পূর্বেই তিনি হযরত ওমর (রাঃ) কে খলিফা মনোনীত করেন। এ ব্যাপারে সমস্ত সাহাবীই একমত পোষণ করেন।
হযরত ওমর (রাঃ) দশ বৎসর খেলাফত পরিচালনার পর আঁততায়ীর হাতে ২৩ হিজরীতে শাহাদাত বরণ করেন। ইমতিকালের পূর্বে মধ্যবর্তী সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনি ৬ জন সাহাবীর মজলিশে সূরার প্যানেল তৈরী করে যান। এই ৬ জনের মধ্যে একজনকে খলিফা মনোনীত করার জন্য তিনি ওসিয়ত করে যান। অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে ৬ জন উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছিলেন-তাঁরা হলেন (১) হযরত ওসমান (২) হযরত আলী (৩) হযরত জ্বালহা (৪) হযরত যোবাইর (৫) হযরত ছাআদ (৬) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ।
হযরত ওমর (রাঃ)-এর শাহাদাতের ৪র্থ দিনে হযরত ওসমান (রাঃ) খলিফা মনোনীত হন। তাঁর হাতে লোকেরা কিভাবে আইআত হলো-তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
فاخذ ( عبد الرحمن بن عوف ) بيده فقال هل انت مبايعي على كِتَابِ اللهِ وَسنَةٍ نَبِيِّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَ فِعْلِ أَبِي بكْرِ وَ عُمَرَ قَالَ (عثمان) اللَّهُمَّ نَعَمْ قَالَ الرَّاوِيُّ فَرَفَعَ رَأْسَهُ إلى سقف المسجد وَيَدَهُ فِي يَدِ عُثْمَانَ فَقَالَ اللَّهُمَّ اسْمَعْ واشهد اللهم اسمع واشهد اللهم إِنِّي قَدْ خَلَعْتُ مَا فِي رقبتي مِنْ ذَلِكَ فِي رَقَبَةٍ عُثْمَانَ - قَالَ الرَّاوِيُّ وَازْدَحَم النَّاسُ ينَا يَعُونَ عُثْمَانَ حَتَّى غَشوه تحت الْمِنْبَرِ قَالَ الرَّاوِيُّ فَقَعَدَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ مَقْعَدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَجْلَسَ عُثْمَانَ تحته على الدرجة الثانية وَجَاءَ إِلَيْهِ النَّاسُ يُبَايِعُونَ وبايعه علي بن أَبِي طَالِبٍ أَولَا وَيُقَالُ أَخِرًا -وت
অর্থ উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ)-যিনি জনমত যাচাই করে হযরত ওসমানের পক্ষে সংখ্যা গরিষ্ঠের মতামত পেয়েছিলেন-তিনি মসজিদে নববীতে লোকজনকে জড়ো করে খলিফা নির্বাচন ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হযরত ওসমান (রাঃ)-এর হাত ধরে শপথ বাক্য এরূপে পাঠ করালেন-"আপনি কি আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাত মোতাবেক এবং আবু বকর ও ওমরের নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য আমার কাছে শপথ গ্রহণ করতে রাজী আছেন? হযরত ওসমানের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে তিনি মসজিদে নববীর ছাদের দিকে মাথা তুলে বললেন-" হে আল্লাহ! তুমি শুন এবং সাক্ষী থাকো, হে আল্লাহ! তুমি শুন এবং সাক্ষী থাকো-আমি আমার কাঁধের বোঝা এবার ওসমানের কাঁধে তুলে দিলাম। বর্ণনাকারী রাবী বলেন-শপথের পর দলে দলে লোকেরা এসে হযরত ওসমানের কাছে বাইআত করতে লাগলো-এমনকি তাঁরা হযরত ওসমানকে মিম্বারের নিচে ঢেকে ফেললো। রাবী বলেন-হযরত আবদুর রহমান তাঁকে তুলে মিম্বারের দ্বিতীয় সিঁড়িতে বসিয়ে নিজে প্রথম সিঁড়িতে নবীজীর বসার স্থানে বসে গেলেন-আর লোকেরা হযরত ওসমানের নিকট আইআত হতে লাগলো এবং প্রথমেই হযরত আলী (রাঃ) হযরত ওসমানের হাতে বাইআত করলেন- মতান্তরে হযরত আলী (রাঃ) সর্বশেষে বাইআত করেছেন"
(বেদায়া-নেহায়া ৭ম খন্ড ১৩৯ পৃঃ দারুল হাদীস, কায়রো)।
হযরত ওসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতের ৫ দিন পর ৩৫ হিজরীর যিলহজ্ব চাঁদের ১৯ তারিখ শনিবার-মতান্তরে ২৪ তারিখ বৃহস্পতিবার লোকেরা হযরত আলী (রাঃ) কে খলিফা নির্বাচিত করেন। সর্বপ্রথম হযরত তালহা (রাঃ) আপন ডানহাত হযরত আলীর হাতে রেখে বাইআত করেন। তারপর আশতার নাখয়ী তারপর সর্বসাধারণ হযরত আলীর হাতে বাইআত করেন। আরবী ইবারত-
وَأَخَذَ الْأَشْتَرُ بِيَدِهِ فَبَايَعَهُ وَبَايَعَهُ النَّاسُ -
অর্থ-(মিশর, কুফা ও বসরাবাসীগণ খেলাফত গ্রহনের জন্য হযরত তালহা, যোবাইর, সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ, ইবনে ওমর কাউকে না পেয়ে হয়রান পেরেশানীর পর তারা হযরত আলীর নিকট আসলেন) "আশতার হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাত ধরে তাঁর কাছে বাইআত করলেন এবং আগত লোকেরাও তাঁর নিকট বাইআত করলো" (বেদায়া-নেহায়া ৭ম খন্ড ২১৫ পৃঃ, দারুল হাদীস-কায়রো)।
হযরত আলী (রাঃ) ৪০ হিজরীতে খারেজী দুশমন আবদুর রহমান ইবনে মুলজিমের খঞ্জরের আঘাতে শাহাদাত বরণ করার পূর্বে লোকেরা তাঁর পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য আরয করেন। হযরত আলী (রাঃ) বললেন-
"না, বরঞ্চ রাসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতের সময় যেভাবে কাউকে খলিফা মনোনীত করে যাননি-আমিও কাউকে মনোনীত করবো না। আল্লাহ যাকে তোমাদের জন্য উত্তম মনে করবেন-তাকেই তিনি খিলাফত দিবেন এবং তোমাদেরকে তাঁর মাধ্যমেই ঐক্যবদ্ধ করবেন"।
শাহাদাতের পর তাঁর জানাযায় ইমামতি করেছিলেন ইমাম হাসান (রাঃ)। হযরত আলী (রাঃ)-এর দাফনের পর কুফাবাসী কয়েস ইবনে সাআদ ইবনে উবাদা ইমাম হাসান (রাঃ)-এর খেদমতে এসে বললো-
أبسط يدك أبَا بِعَكَ عَلَى كِتَابِ اللهِ وَسُنَّةِ نَبِيِّهِ فسكت الْحَسَنِ فَبَايَعَهُ وَأَتَابَعَةُ النَّاسُ بَعْدَهُ -
অর্থ-"হে ইমাম পাক! আপনি অনুগ্রহ করে হাত বাড়িয়ে দিন-আমি আপনার নিকট বাইআত হবো আল্লাহর কিতাব ও নবীজীর সুন্নাতের অনুসরণের শর্তে। ইমাম হাসান (রাঃ) চুপ রইলেন। কয়েস ইবনে সাআদ ইমামে পাকের নিকট বাইআত করলেন। অতঃপর কুফাবাসী জনসাধারণ তাঁর নিকট বাইআত করলো”।
(বেদায়া-নেহায়া ৮ম খন্ড ১৫ পৃষ্ঠা দারুল হাদীস কায়রো)
পর্যালোচনা: অত্র অধ্যায়ে বাইআতে আবু বকর, বাইআতে উসমান, বাইআতে আলী ও বাইআতে ইমাম হাসান রিদওয়ানুল্লাহি তায়ালা আলাইহিম আজমাঈনগণের হাতে বাইআতের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো। তাদের নিকট ঐ বাইআত ছিল বাইআতে খিলাফত ও বাইআতে ইরাদাত উভয়টি-অর্থাৎ খিলাফত ও মুরিদ হওয়ার বাইআত। ইহা সর্বজন স্বীকৃত। তাহলে দেখা যায়-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেছালের পর জনসাধারণ বাইআতে আবু বকর, বাইআতে ওমর, বাইআতে ওসমান, বাইআতে আলী ও বাইআতে ইমাম হাসান অনুসরন করতেন। ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর নামে কুফাবাসীগণ ইমাম মুসলিমের নিকট বাইআত করেছিল। এর পরবর্তী সময়ে ইমাম জয়নুল আবেদীন, ইমাম বাকের, ইমাম জাফর সাদেক প্রমুখ নবীবংশগণ লোকজনকে বাইআত করাতেন নিজেদের নামে। সাহাবা যুগের প্রথম বাইআত ছিল বাইআতে আবু বকর (রাঃ)। হযরত ওমর তাঁর হাত ধরে বলেছিলেন-
فَأَخَذَ عُمر بيدِهِ وَقَالَ بِايَعْتُكَ فَبَايَعَهُ النَّاسُ .
অর্থ-"আমি আপনার নিকট বাইআত হলাম"। পরবর্তী বাইআত সমূহেও তাই প্রমাণিত হচ্ছে। ইহাই তো "বাইআতে শেখ"। ইহা অস্বীকার করা সত্যকেই অস্বীকার করা হবে। বাইআতে শেখের এর চাইতে বড় প্রমাণ আর কি আছে? যারা বাইআতে শেখ অস্বীকার করেন-তারা মূলতঃ সুন্নাতকেই অস্বীকার করেন। কেননা, চার খলিফার বাইআতের পদ্ধতিই তো সুন্নাত তরিকা। ইহার ব্যতিক্রম সুন্নাত হতে পারে না। সুতরাং হাত তুলে বাইআত করানো সুন্নাত নয়। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীর কাওলুল জামিলে বর্ণিত বাইআত পদ্ধতি ও শব্দাবলী খোলাফায়ে রাশেদীনের বাইআতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
কোন মোহাদ্দেস বা পীর যদি বলে-"বাইআতে রাসুল" ছাড়া পীরের বাইআত নাজায়েয বা হারাম, তাহলে নাজায়েয বা হারামের দালিলিক ও বাস্তব প্রমাণ দিতে হবে। বিনা দলীলের দাবী গ্রহণযোগ্য নয়।
বিঃ দ্রঃ বাইআতে রিদওয়ান ও বাইআতে আবু বকর-এই দুটি অধ্যায় (৩৯ ও ৫৭ অধ্যায়) খুব ভাল করে স্মরণে রাখলে বিতর্কের আর কোন অবকাশ থাকবে না। বাইআতে শেখ-ই বর্তমানে অনুসরন করতে হবে। বাইআতে শেখ-ই মূলতঃ বাইআতে রাসুল ও বাইআতুল্লাহ (তাফসীরে রুহুল বয়ান সূরা আল-ফাতাহ্ ১০নং আয়াতের তাফসীর দেখুন)।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৮২) সন্দেহ অপনোদন | (০৮৪) কাফন দাফনের অগ্রীম সংবাদ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |