আল্লাহর যখন ইচ্ছা হলো নবী করিম (দঃ) কে আপন সান্নিধ্যে তুলে নেবেন, তখন হযরত আযরাঈলকে বললেন- “তুমি উত্তম সুরতে আমার প্রিয় হাবীবের খেদমতে হাযির হয়ে প্রথমে আমার সালাম দিয়ে বলবে যে, তুমি তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছো এবং তাঁর অনুমতি পেলেই তাঁর রুহ্ মোবারক কর্য করবে"।
হযরত আযরাঈল (আঃ) নির্দেশ মোতাবেক উত্তম সূরত ধারণ করে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর হুজরার দরজায় এসে দাঁড়ালেন এবং নবী পরিবারবর্গকে সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। এই আওয়ায হুযুর পাক (দঃ)-এর কর্ণে প্রবেশ করা মাত্র তিনি হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে আগন্তুকের পরিচয় জানার জন্য পাঠালেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) ফিরে এসে বললেন-দরজায় এক ভয়ঙ্কররূপী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। নবী করিম (দঃ) বললেন-
هُذَا هَادِمُ اللَّذَاتِ هَذَا مُحْمِدُ الصَّوْتِ - هَذَا مَلَكُ الْمَوْتِ .
"মা ফাতেমা! ইনি মানুষের সমস্ত স্বাদ আহলাদ হরণকারী, ইনি মানুষের কণ্ঠ রোধকারী, ইনি মালাকুল মউত"।
অতঃপর তিনি আযরাঈল (আঃ) কে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিলেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) মানুষের বেশে আযরাঈলকে দেখে নিলেন। এরপর অদৃশ্যভাবে আযরাঈল (আঃ) ভিতরে এসে নবী করিম (দঃ) কে সালাম দিলেন এবং বললেন-
"আল্লাহ আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আমি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনার ইচ্ছা ও অনুমতি ব্যতীত যেন আপনার রুহ মোবারক কব্জ না করি"। একথা শুনে হুযুর (দঃ) বললেন- "তুমি বসো, আমার ভাই জিবরাঈল আসুক"। আযরাইল বসে রইলেন।
এমন সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন-
"আলবেদা; ইয়া রাসুলাল্লাহ! বিচ্ছেদের সময় সমাগত, প্রস্থানের সময় নিকটবর্তী, আপনার প্রভু আপনার প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান"। নবী করিম (দঃ) বললেন, “হে ভাই জিবরাঈল! আযরাঈল আমার রুহ্ কব্জ করার অনুমতি চাচ্ছে। আমি ২৩ বৎসর যাবৎ আমার উম্মতের দেখা শুনা করেছি এবং তাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিয়েছি। আমার পর উম্মতের জিম্মাদার কে হবেন"? একথা শুনে জিবরাঈল অদৃশ্য হয়ে গেলেন। আবার মূহুর্তের মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে বললেন-"আল্লাহ আপনাকে সালাম দিয়ে বলছেন, আপনার পর তিনিই আপনার উম্মতের জিম্মাদার হবেন। কোরআন মজিদে তো আল্লাহ পাক আপনাকে রাযী ও সন্তুষ্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (সুরা দোহা)। অতএব, আপনি সন্তুষ্ট চিত্তে রাজী হোন"।
এ সময় নবীজীর সম্মানে ইসমাইল ফেরেস্তা এক হাজার কোটি ফেরেস্তা নিয়ে হাযির হলেন (বায়হকী)। অতঃপর নবী করিম (দঃ) আযরাঈল (আঃ) কে রুহ্ কব্জ করার অনুমতি প্রদান করলেন। যখন ইনতিকাল-ক্রিয়া শুরু হয়, তখন নবী করিম (দঃ) আযরাঈল (আঃ) কে বললেন- "আর একটু সহজভাবে জান কব্জ করো"। আযরাঈল (আঃ) বললেন- আল্লাহর সমস্ত প্রাণীকূলের মধ্যে আপনার রুহ্ মোবারকই সবচেয়ে সহজভাবে কব্য করার জন্য আমি নির্দেশ পেয়েছি। নবী করিম (দঃ) উম্মতের মৃত্যু কষ্ট স্মরণ করে বলে উঠলেন- “তাহলে আমার উম্মতের মউতের সমস্ত কষ্টই আমাকে দিয়ে দাও"।
একথা বলেই নবী করিম (দঃ) মেসওয়াক করা অবস্থায় বিবি আয়েশা (রাঃ)-এর বুকে মাথা মোবারক এলিয়ে দিয়ে উচ্চারণ করলেন-
"আল্লাহুম্মা বির রাফীক্কিল আ'লা"- "আমার প্রিয়তম বন্ধুর সান্নিধ্যে- হে আল্লাহ"। একথা বলেই তাঁর পবিত্র রুহ আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন এবং তিনি বেছাল প্রাপ্ত হন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
এদিকে চাশ্তের নামাযের সময় দুপুরের পূর্বেই নবী করিম (দঃ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং রফিকে আ'লার সাথে মিলিত হন। (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সালেম ইবনে ওবায়দ (রাঃ) নামে জনৈক সাহাবী নবী করিম (দঃ)-এর • ইনতিকালের সংবাদ নিয়ে সানাহ্ গমন করেন এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) কে সংবাদ দেন। সংবাদ পেয়ে তিনি ছুটে আসেন এবং হুজরায় প্রবেশ করে নবী করিম (দঃ)-এর চেহারা মোবারকের কাপড় সরিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি তিনবার হুযুরের ললাটে চুম্বন করেন (বেদায়া-নেহায়া)।
[আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন-"তোমরা শহীদগণকে মুখে মৃত বলোনা" অথবা "তাদেরকে মৃত বলে অন্তরে ধারণাও করোনা"-বরং তাঁরা জীবিত-কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারোনা" (সূরা বাক্বারা ও সূরা আলে ইমরান)
বিঃ দ্রঃ শহীদগণের মর্যাদা তৃতীয় স্তরের। দ্বিতীয় স্তর সিদ্দিকগণের এবং প্রথম স্তর হচ্ছে আম্বিয়ায়ে কেরামের। তাহলে তাঁদের জীবিত থাকার বিষয়টি প্রশ্নাতীত ব্যাপার। শহীদগণ শাহাদাতের পর পুনরায় জীবন লাভ করেন। নবীগণও পুনরায় জীবন লাভ করেন। (দেখুন-ইমাম সুবকী (রহঃ)-এর গ্রন্থ শিফাউস সিকাম")।]
নির্ভরযোগ্য বর্ণনামতে তখন সময়টি ছিল দ্বিপ্রহরের পূর্বে চান্ত-এর নামাযের সময়। দিনটি ছিল সোমবার। মাস ছিল রবিউল আউয়াল। তারিখ ছিল প্রসিদ্ধ ও অধিকাংশ বর্ণনাকারীদের মতে ১২ই রবিউল আউয়াল (বেদায়া ও নেহায়া-ইবনে কাছির ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৬, ছাপাখানা মাক্তাবাতুল মাআরেফ ১৯৮৮ইং)। কাযী আয়ায শিফা শরীফে নবীজীর বৈশিষ্ট্য অধ্যায়ে বর্ণনা করেন- "মউত ও মউতের সময়কে নবী করিম (দঃ)-এর এখতিয়ারাধীন করা হয়েছে। অন্য কাউকে এ বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়নি”।
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- হে প্রিয় রাসূল! "আপনার ইনতিকাল হবে একপ্রকার (ক্ষণিকের জন্য) এবং অন্যদের মৃত্যু হবে অন্যপ্রকার" (২৩ পারা শেষ আয়াত)
আল্লামা তাকিউদ্দিন সুবুকী (রহঃ) "শিফাউস সিকাম" 'গ্রন্থে বলেন- "হুযুর (দঃ)-এর দাফনের পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রূহ মোবারক দেহ মোবারকে ফিরত পাঠিয়ে দেন। তাই তিনি কিয়ামত পর্যন্ত হায়াতুন্নবী"। কাজেই তাঁর মৃত্যুদিবস পালন করা অবৈধ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৮০) শেষ দিনের ঘটনা | (০৮২) সন্দেহ অপনোদন |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |