৮ই রবিউল আউয়াল বৃহস্পতিবার যোহরের নামাযান্তে নবী করিম (দঃ) হুজরা মোবারকে চলে আসেন। ঐ দিন আছরের নামায থেকে ১২ তারিখ সোমবার ফযরের নামায পর্যন্ত মোট ১৯ ওয়াক্ত নামাযে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ইমামতি করেন।
একদিন হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর বিলম্ব হলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জামআ (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ) কে ইমামতি করতে বলেন। যখন ওমর (রাঃ) উচ্চস্বরে তাকবীর দিয়ে নামায আরম্ভ করেন, তখন নবী করিম (দঃ) জিজ্ঞাসা করলেন-আবু বকর কোথায়? আল্লাহ এবং মুসলমানগণ আবু বকর ছাড়া অন্য কাউকে গ্রহণ করবেনা। এভাবে দুবার বললেন। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে লোক পাঠিয়ে তাঁকে আনা হলো এবং পুনরায় হযরত আবু বকর (রাঃ) কে দিয়ে নবী করিম (দঃ) দ্বিতীয়বার নামায আদায় করান। এ ব্যাপারে হযরত ওমর (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে জাত্ম (রাঃ) কে খুব শাঁসালেন এবং বললেন-আমি মনে করেছি-তুমি নবী কারিম (দঃ)-এর নির্দেশেই আমাকে নামায পড়ানোর জন্য বলেছিলে। আবদুল্লাহ ইবনে জাম্মা (রাঃ) বললেন-না, নবী করিম (দঃ) নির্দেশ করেননি-বরং আবু বকর (রাঃ) কে অনুপস্থিত দেখে উপস্থিত মুসল্লীগণের মধ্যে আপনাকেই সর্বাধিক উপযুক্ত মনে করে আমি নিজেই আপনাকে নামায পড়ানোর অনুরোধ করেছিলাম (ইমাম আহমদ ও আবু দাউদ)। নবীজীর বর্তমানে অন্য কেউ হুকুম দিতে পারেনা।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন-"এশার নামাযের সময় হলে হযরত বেলাল (রাঃ) আযান দিলেন। নবী করিম (দঃ) এরশাদ করলেন- আবু বকরকে নামায পড়াতে বলো। হযরত আয়েশা (রাঃ) আরয করলেন-ইয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)! আবু বকর (রাঃ) খুবই শোকে কাতর। আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে তিনি ইমামতি করা সহ্য করতে পারবেননা- বরং অন্য কাউকে দিয়ে নামায পড়ান। নবী করিম (দঃ) পুনরায় বললেন- আবু বকরকে বলো ইমামতি করার জন্য। এভাবে তিনবারের সময় বললেন-তোমরা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সাথে মিশরীয় মহিলাদের ন্যায় আমার সাথে আচরণ করছো। যাও, আবু বকরকে বলো-নামায পড়াতে। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) নামায পড়াতে
দাঁড়ালেন। নবী করিম (দঃ) শরীর কিছুটা হালকা অনুভব করলেন। হযরত আব্বাস (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-এর কাঁধে ভর দিয়ে তিনি হুজরা মোবারক থেকে বের হলেন। কিন্তু তাঁর পা মোবারক মাটিতে হোঁচট খাচ্ছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) টের পেয়ে পিছিয়ে আসতে চাইলেন। নবী করিম (দঃ) তাঁকে ইশারায় ডান পার্শ্বে দাঁড় করিয়ে নিজে অবশিষ্ট নামায বসে বসে আদায় করলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) মোকাব্বির হয়ে নামায আদায় করলেন।
[এটি কোন্ নামায ছিল? হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বর্ণনা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে-এটি ছিল এশার নামায। কিন্তু অন্য একটি বর্ণনা মতে এটি ছিল যোহরের নামায। ইবনে কাছির বলেন- এটি ছিল শেষ বৃহস্পতিবার যোহর নামাযের ঘটনা। কেননা, এরপর নবী করিম (দঃ) আর মসজিদে যেতে পারেননি। অধ্যায়ের শুরুতে এটির বিবরণ দেয়া হয়েছে।]
সোমবার ফজরের নামাযের সময় নবী করিম (দঃ) জানালার পর্দা সরিয়ে সর্বশেষ জামাতের দৃশ্য' দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। সাহাবায়ে কেরাম টের পেয়ে নামায ছেড়ে দেওয়ার মত অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। হযরত * আবু বকর (রাঃ) পিছনে সরে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এমন সময় নবী করিম (দঃ) হাতে ইশারা দিয়ে তাঁকে বারণ করে জানালার পর্দা ফেলে দেন। ঐ নামাযের মধ্যে সাহাবীগণ নবীজীর সম্মানকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
এখন আমি গোলাবীদের জিজ্ঞেস করি-" আপনাদের কিতাব সীরাতে মোস্তাকীম মতে তো নামাযে নবীজীর খেয়াল করা যিনাতুল্য গুনাহ”। এখন বলুন-হযরত আবু বকর ও সাহাবীগণ নামাযে কার খেয়াল করেছিলেন! নবীজীর গুরুত্ব কত বেশী-এঘটনা থেকেই বুঝা যায়।
নামায জামাতে শেষ করে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বিবি আয়েশার গৃহে প্রবেশ করেন এবং বলেন- মনে হয়-নবী করিম (দঃ) আজ অনেক সুস্থ, অসুখ অনেক কমে গেছে। আমাদের দিকে চেয়ে তিনি হেসেছেন। মুসল্লিগণসহ আমরা সকলেই হুযুরের হাসি দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছি। এমন কি-আমাদের নামায ছেড়ে দেয়ারও উপক্রম হয়েছিল। এ কথা বলে তিনি মদিনার অদূরে নিজ স্ত্রীর গৃহের দিকে রওনা হন। মদিনা শরীফের পূর্বপ্রান্তে তাঁর এক বিবি বিন্তে খারেজা (রাঃ) বাস করতেন। মহল্লাটির নাম ছিল সানাহ্। তিনি ঘোড়ায় চড়ে সেদিকে রওনা দিলেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৭৮) আল্লাহর সাথে মহামিলনের প্রস্তুতি | (০৮০) শেষ দিনের ঘটনা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |