খন্দকের যুদ্ধে বনু কোরায়যা নামক ইহুদী গোত্রটি হুযুর (দঃ)-এর সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করে কোরাইশদের সাথে যোগ দেয়। কোরাইশরা পলায়ন করার পর বনু কোরায়যা বিপদের সম্মুখীন হয়। নবী করিম (দঃ) খন্দক থেকে ফিরে এসে অস্ত্র-সস্ত্র রেখে মাত্র গোসল সেরেছেন-এমন সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) খেদমতে হাযির হয়ে আরয করলেন-
"আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন-অথচ আমরা ফিরিস্তারা এখনও অস্ত্র ত্যাগ করিনি। আপনি এখনই বনু কোরায়যার দিকে ধাবিত হোন। আমিও সেদিকে যাচ্ছি এবং তাদের মধ্যে ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে ছাড়বো"।
(বেদায়া-নেহায়া)
নবী করিম (দঃ) চতুর্দিকে খবর পাঠিয়ে দিলেন- যেন খন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকলেই বনু কোরায়যার পল্লীতে গিয়ে আছরের নামায আদায় করে। হযরত আলী (রাঃ) কে অগ্রগামী দলের নেতৃত্ব দিয়ে প্রেরণ করলেন। অতঃপর তিনি তিন হাজার সাহাবী ও তেষট্টিটি ঘোড়া নিয়ে বনু কোরায়যার দূর্গ অবরোধ করলেন। এই অবরোধ ২৫ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অবরোধের ফলে তাদের চরম দুর্দশা দেখা দেয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করে দেন। তারা উপায়ান্তর না দেখে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাদের সর্দার কা'ব ইবনে আছাদ তাদের কাছে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করে। যথা-
দূর্গবাসী কেউ তাদের সর্দারের উক্ত প্রস্তাবে সাড়া দিলনা। অবশেষে তারা আনসার-সর্দার হযরত ছা'আদ ইবনে মা'আয (রাঃ)-এর উপর ফয়সালার ভার ন্যাস্ত করলো। পূর্ব আত্মীয়তার সুত্রে হয়তো তিনি কিছুটা নমনীয় হবেন- এ ছিল তাদের ধারণা। নবী করিম (দঃ) সর্বেসর্বা হয়েও তাদের এ হঠকারী প্রস্তা রাযী হলেন। হযরত ছা'আদ (রাঃ) তৌরাত কিতাবের বিধান অনুযায়ী নিম্নোক্ত ফয়সালা করলেন
এই ফয়সালা ছিল তাদের কিতাব মোতাবেক চুক্তি ভঙ্গের শাস্তি। নবী করিম (দঃ) মন্তব্য করলেন-
"হে ছা'আদ, তুমি ঐ ফয়সালাই করেছো-যা আল্লাহ তায়ালা সপ্তাকাশের উপরে করে রেখেছেন"
(মাওয়াহিব)
[এই সংবাদটি ছিল ইলমে গায়েবের সংবাদ। আকাশের উপর আল্লাহর ধার্যকৃত ফয়সালা নবী করিম (দঃ) মদিনায় বসে জেনে নিয়েছেন। এ ধরনের ইলমে গায়েব জিব্রাইলের মাধ্যম ছাড়াই প্রদত্ত হয়ে থাকে। এ ধরনের ইলমে গায়েবকে 'দালালাত' বলা হয় (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৪র্থ পারা ১৭৯ আয়াত)।]
অতঃপর উক্ত ফয়সালার উপর উভয় পক্ষের দস্তখত হয়। সে মোতাবেক বনু কোরায়যার ৭০০ পুরুষকে মদিনার বাজারে শিরশ্ছেদ করা হয়। নারী ও শিশুদেরকে দাসদাসীতে পরিণত করা হয় এবং তাদের সম্পদ কোরআনের বিধান মতে মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করা হয়।
ইহুদীরা যদি নবী করিম (দঃ)-এর উপর ফয়সালার দায়িত্ব ছেড়ে দিত, তা হলে হয়তো তাদের জীবন রক্ষা হতো-যেমনটি হয়েছিল বনু নযীর ও মক্কাবাসীদের ক্ষেত্রে। তৌরাত কিতাব অনুযায়ী চুক্তি ভঙ্গের শাস্তি হচ্ছে হত্যা করা। তাই বনু কোরায়যা হযরত ছা'আদ (রাঃ)-এর উক্ত রায় নতশীরে মেনে নিতে বাধ্য হলো। মুসলিম রাষ্ট্রে অপরাধমূলক শাস্তির ক্ষেত্রে সব প্রজাই সমান। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে যার যার ধর্ম অনুযায়ী বিচার করতে হবে। এটাকে পারিবারিক আইন বলা হয়। ইসলামে প্রত্যেক ধর্মের পৃথক পারিবারিক আইন-এর ব্যবস্থা স্বীকৃত।।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৬৩) খন্দকের যুদ্ধ | (০৬৫) হোদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |