বদরের যুদ্ধের ১৩ মাস পর তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের ১১ বা ১৪ তারিখ শনিবার ওহোদের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। বদরের যুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলার জন্য কোরাইশরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। মহিলারা পুরুষদেরকে ধিক্কার দিতে লাগলো। তারা সাজ সজ্জা ত্যাগ করে মাতমজারীতে মগ্ন হলো। আবু সুফিয়ান বদরের যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য ইতিপূর্বে একবার মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে দু'শো কোরাইশ বাহিনী নিয়ে মদিনার তিন মাইল দূরে ওরাইজ নামক স্থানে পৌঁছে একজন আনসার মুসলমানকে শহীদ করে এবং খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়ে পালিয়ে আসে। নবী করিম (দঃ) দু'শ সাহাবী নিয়ে আবু সুফিয়ানকে ধাওয়া করলে সে সসৈন্যে পালিয়ে যায় এবং গমের বস্তা রাস্তায় রাস্তায় 'ফেলে যায়। এজন্য এ অভিযানের নাম দেয়া হয় ছাভিক বা ছাতুর যুদ্ধ। বদরের যুদ্ধের গ্লানি আবু সুফিয়ানকে আরও পাগল করে তুলে। সে এর প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত নারী ও তৈল স্পর্শ করবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করে।
এদিকে মদিনার ইহুদী ও মোনাফিকরা হুযুরের সাথে মদিনা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে গোপনে মক্কায় এসে আবু সুফিয়ানকে উত্তেজিত করে তুললো। মদিনা আক্রমণ' করলে তারা সাহায্যেরও আশ্বাস দিলো। মক্কায় যুদ্ধ প্রস্তুতির সাজ সাজ রব পড়ে গেলো। মহিলারা অশ্লীল গান গেয়ে পুরুষদেরকে ক্ষেপাতে লাগলো।
কুরাইশরা তিন হাজারের দূর্ধর্ষ বাহিনী নিয়ে মদিনার দিকে রওয়ানা দিল। সাথে মহিলারা গান গাইতে গাইতে অগ্রসর হলো। আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে এবং খালেদ ইবনে ওয়ালীদের সেনাপতিত্বে কোরাইশ বাহিনী ওহোদের পাদদেশে 'বাতনে ওয়াদী' নামক স্থানে একত্রিত হলো। হযরত আব্বাছ (রাঃ)- যিনি বদরের যুদ্ধে ধৃত হয়ে নবী করিম (দঃ)-এর এলমে গায়েবের পরিচয় পেয়ে মুসলমান হয়ে গোপনে মক্কায় অবস্থান করছিলেন- তিনি কোরাইশদের এই সংবাদ পূর্বাহ্নেই গোপনে মদিনায় নবীজীর দরবারে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন
নবী করিম (দঃ) সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ সভায় বসলেন। বদরের যুদ্ধের আলোকে নবী করিম (দঃ) এবার মদিনা শহরে থেকেইমনকে প্রতিরোধ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। কিন্তু যুবক শ্রেণীর আনসারগণ আরয করলেন- "তারা আমাদের মাথার উপর চড়াও হয়ে আক্রমণ করবে-আর আমরা ঘরে বসে যুদ্ধ করবো-তা কী করে হয়? তারা আমাদেরকে কাপুরুষ বলে আখ্যায়িত করবে। এর চেয়ে ভাল হয়- যদি আপনি আমাদের নিয়ে শহরের বাইরে গিয়ে তাদের মোকাবিলা করেন"। নবী করিম (দঃ) বললেন-তাহলে "ছাবয়ীন বি-ছাবয়ীন” অর্থ্যাৎ- বদরের ৭০ কোরাইশের বদলে ৭০ মুসলমানের শাহাদাত হতে পারে। এভাবে হুযুর (দঃ) ওহোদের ক্ষয়ক্ষতির কথা পূর্বেই বলে দিয়েছিলেন। এটাই তাঁর ইলমে গায়েবের প্রমাণ। কিন্তু ওহাবীরা বলে-হুযুর জানতেন না।
যুবকরা এতেও রাযী দেখে নবী করিম (দঃ) তাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। শুক্রবার দিন জুমার নামাযান্তে এক ভাষণে যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে সাথে সাথে আল্লাহর সাহায্যেরও আশ্বাস প্রদান করলেন। এতে যুবকরা খুশী হয়ে গেলেন। নবী করিম (দঃ) হুজ্জা মোবারকে গিয়ে যুদ্ধের পোষাক পরিধান করে বের হয়ে আসলেন। বয়স্ক সাহাবীগণ নবী করিম (দঃ)-এর প্রথম পরামর্শের যথার্থতা অনুধাবন করে আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের যুবকরা প্রকৃত অবস্থা গভীরভাবে চিন্তা না করেই জোশের সাথে যা বলে ফেলেছে, সেজন্য আমরা দুঃখিত। আপনার ইচ্ছামতই আপনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। নবী করিম (দঃ) এরশাদ করলেন- "যুদ্ধের পোষাক পরিধান করে আবার খুলে ফেলা কোন নবীর পক্ষে শোভনীয় নয়। নবী এবং তাঁর দুশমনদের মধ্যে আল্লাহর যা ইচ্ছা- তাই তিনি ফয়সালা করবেন"।
[এই বাণীর মধ্যে যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে অতি সুক্ষ্ম ইঙ্গিত ছিল। ইহাই এলমে গায়েব। যুবকদের উদ্দ্যেশে "৭০ এর বিনিময়ে ৭০" বলার মধ্যে ছিল ওহোদ যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে পরিষ্কার ইঙ্গিত। ওহাবীরা বলে- নবীজী যুদ্ধের পরিণাম জানলে যুদ্ধে যেতেন না। এটা তাঁদের অজ্ঞতারই পরিচয়।]
পরদিন সকালে অতি প্রত্যুষে ফজরের নামায সমাপ্ত করে নবী করিম (দঃ) এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনার তিন মাইল উত্তরে ওহোদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। মোহাজির ডিভিশনের পতাকা দিলেন হযরত আলী (রাঃ)-এর হাতে। আনসারগণকে দুই ডিভিশনে বিভক্ত করে খাযরায গোত্রের পতাকা দিলেন হোবাবা ইবনে মুনন্যের (রাঃ)-এর হাতে এবং আউছ ডিভিশনের পতাকা দিলেন উসায়দ ইবনে হোযায়ের (রাঃ)-এর হাতে। অগ্রগামী দলের নেতৃত্ব দিলেন
সাআদ ইবনে মুয়ায ও সাআদ ইবনে উবাদা (রাঃ)। মদিনার দায়িত্ব দিয়ে গেলেন অন্ধ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ)-এর উপর।
মধ্যপুথ, হতে মোনাফেক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার তিনশ অনুসারী নিয়ে সটকে পড়লো এবং বললো- আমাদের পরামর্শ গ্রহণ না করে নবী করিম (দঃ) এতবড় ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধের ময়দানে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন-সুতরাং আমরা এর সাথে নেই। অদের এই শঠতা ও হঠকারিতা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। তার উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া এবং শত্রুকে উৎসাহিত করা। যেমন করেছিল মীর জাফর পলাশীর ময়দানে।
অবশিষ্ট ৭০০ মুসলমান প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও নবী করিম (দঃ)-এর আশ্বাসবাণী এবং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে তাঁদের দিলে প্রশান্তি নাযিল-এই দুই জিনিস তাঁদের মনোবল ফিরিয়ে আন্তে সাহায্য করলো। গোজামিলের চেয়ে গরমিল অনেক ভাল। যুগেযুগে মুসলমানদের মধ্য হতেই কিছু সংখ্যক মোনাফেক লোক মুসলমানদের চরম ক্ষতি সাধন করে থাকে। ওহোদের ময়দানে মোনাফেকরা নিজেদেরকে মুসলমানের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলে।
নবী করিম (দঃ) ওহোদের মূল ভূমিতে ওহোদ পাহাড়কে পিছনে রেখে সৈন্য বাহিনী মোতায়েন করলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ৫০ জনের তীরন্দাজ বাহিনীকে পাহাড়ের চূড়ায় মোতায়েন করা হলো। নবী করিম (দঃ) তাঁদের প্রতি নির্দেশ দিলেন "জয় পরাজয়-কোন অবস্থাতেই তোমরা আপন স্থান ত্যাগ করবেনা- যে পর্যন্ত না আমি নির্দেশ দেই। এমনকি-আমাদেরকে শহীদ হতে দেখলেও সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবেনা। বিজয়ের পর গনিমতের মাল সংগ্রহ করতে দেখেও তোমরা আপন স্থান ত্যাগ করবেনা" (মাওয়াহেব)।
কোরাইশ বাহিনীর নেতৃত্বে খালিদ ও ইকরামা তাদের সৈন্য মোতায়েন করলো "ছাখা" নামক স্থানে। উভয় পক্ষে ভীষণ যুদ্ধ শুরু হলো। মোশরেকদের পক্ষে ২৩ জন নিহত হলো। আল্লাহর সাহায্যে মুসলমানগণ প্রথমে বিজয়ী হলো। কাফেরগণ পলায়ন করতে লাগল। কোরাইশ মহিলারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। মুসলমানগণ কোরাইশ বাহিনীর পশ্চাদধাবন করলেন। তাদের ফেলে যাওয়া মাল সম্পদ ও অস্ত্রসস্ত্রসহ গনিমতের মাল সংগ্রহ করতে লাগলেন।
সুস্পষ্ট বিজয় দেখে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়োজিত তীরন্দাজ বাহিনীর ৫০ জনের মধ্যে ৪২ জন নীচে নেমে এসে গনিমতের মাল সংগ্রহ করতে লেগে গেলেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যোবাইর (রাঃ)-এর সাথে মাত্র ৭ জন লোক নিজ নিজ দায়িত্বে অটল রইলেন।
দূর থেকে সুচতুর খালিদ বিন ওয়ালিদ এ অবস্থা দেখে পাহাড়ের ঘাঁটি অরক্ষিত পেয়ে বিদ্যুৎ বেগে ওহোদের পেছন দিক দিয়ে আক্রমণ করে বসলো এবং অবশিষ্ট ৮ জন তীরন্দাজকে শহীদ করে ফেললো। যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেলো। মুসলমানগণ এই আক্রমণে দিশেহারা হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগলো। কাফেরদের আক্রমণে ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়ে গেলেন। স্বয়ং নবী করিম (দঃ) শত্রুদের তীরের আঘাতে জর্জরিত হয়ে গেলেন। এই বিপর্যয়ের কারণ ছিল হুযুর (দঃ)-এর সুস্পষ্ট নির্দেশ ভুলক্রমে লঙ্ঘন করা।
হুযুর (দঃ)-এর মুখের নিম্নপাটির সম্মুখভাগের দুটি দান্দান মোবারক কিয়দাংশ শহীদ হয়ে গেল। মাত্র ১৪ জন সাহাবী নবী করিম (দঃ)-এর সাথে ছিলেন। নবী করিম (দঃ)-এর মুখ মোবারক থেকে যখন খুন বয়ে যাচ্ছিলো, তখন আবু ছায়ীদ খুদরী (রাঃ)-এর পিতা মালেক ইবনে সিনান (রাঃ) জখমী জায়গায় মুখ লাগিয়ে খুন মোবারক চুষে খেয়ে ফেললেন- জমিনে পড়তে দিলেন না। তাঁর এই ভালবাসা দেখে নবী করিম (দঃ) এরশাদ করলেন:
منْ مَّسَّ دَمِي دَمَهُ لَمْ تَصِبْهُ النَّارُ .
অর্থ-"আমার রক্ত যার রক্তের সাথে মিশেছে-তাকে জাহান্নাম স্পর্শ করবেনা"
এ হাদীস থেকে মোজতাহিদগণ নবী করিম (দঃ)-এর বদন মোবারক থেকে নির্গত যাবতীয় বর্জ বস্তুকে পাক পবিত্র বলে ফতোয়া দিয়েছেন।
উক্ত যুদ্ধে এক আনসারী মহিলার পিতা, ভাই ও স্বামী- তিনজনই শহীদ হন। মহিলা ওহোদের ঘটনা শুনে-বিশেষতঃ নবী করিম (দঃ)-এর শাহাদাতের ঘটনা শুনে যুদ্ধের ময়দানের দিকে দৌড়াতে লাগলেন। পথিমধ্যে মোজাহিদদের নিকট নিজ পিতা, ভ্রাতা ও স্বামীর শাহাদতের খবর শুনে শুধু "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন" পড়ে নবী করিম (দঃ) সুস্থ আছেন কিনা তা জানতে চাইলেন। অবশেষে নবী করিম (দঃ)-এর খেদমতে হাযির হয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন- "ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি জীবিত ও সুস্থ থাল্লেই আমি সব শোক ভুলে যাবো"। একেই বলে নবী প্রেমের বাস্তব নমুনা।
ওহোদের যুদ্ধে আহত ছয়জন সাহাবী পানি পানি করে কাত্রাচ্ছিলেন। যখন তাঁদের প্রথমজনকে পানি পান করতে দেয়া হলো- তখন তিনি বললেন, আমার পাশের ভাইকে আগে পানি দিন, তিনি বেশী আহত। এভাবে ছয়জনই অপরজনকে আগে পানি পান করানোর অনুরোধ করলেন। কিন্তু কেহই পানি পান করতে পারলেন না। সবাই শহীদ হয়ে গেলেন। এ ছিল সাহাবাগণের পরস্পরের প্রতি আত্ম-ত্যাগের নমুনা।
আমাদের ঈমানী শক্তি ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমরা আজ মৃত ভাইয়ের মাংস পর্যন্ত তুলে নিচ্ছি। একজন আর একজনকে ওভারটেক করছি। গাড়ীর ওভারটেকিং অপরাধ বলে গণ্য হলেও মানুষ ওভারটেকিংকে কোন অপরাধ বলেই মনে করছি না। সর্বত্রই এই অবস্থা। এই প্রবণতা আমাদেরকে মানবিক মূল্যবোধ থেকে অনেক অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ওহোদের যুদ্ধে ওত্ত্বার গোলাম ওয়াহ্শীর বর্শার আঘাতে হযরত হামযা (রাঃ) শহীদ হন। তাঁর শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে হিন্দা গলার মালা বানায় এবং কলিজা বের করে চিবাতে থাকে। পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের দিন এই মহিলা মুসলমান হয়ে যান। ওয়াহ্শীও মুসলমান হন। তবে নবী করি ভবিষ্যতে তাঁর সামনে আসতে নিষেধ করে দেন। এই ও বকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে মোরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মোসায়লামা কাযযাবকে নিহত করে পূর্ব অপরাধের কিছুটা ক্ষতিপূরণ করেন।
ওহোদের যুদ্ধে প্রথমে মুসলমানদের বিজয় হলেও মধ্যখানে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এর একমাত্র কারণ- হুযুর আকরাম (দঃ)-এর সুস্পষ্ট নির্দেশ ভুলক্রমে লংঘন- যদিও তা ছিল সাহাবীগণের ইজতিহাদী ভুল। পরবর্তীকালে মুসলমানগণ আর কখনও এমন ভুল করেননি। আমরা আজ নবী করিম (দঃ)-এর অসংখ্য নির্দেশ লংঘন করছি। তাই আমরা সংখ্যায় বেশী হয়েও ইহুদী-খৃষ্টান-হিন্দু প্রভৃতি বিজাতীর হাতে সর্বত্র মার খাচ্ছি। এর সংশোধন না হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
নবী করিম (দঃ) তার আবেদনে খুশী হয়ে গেলেন। তিনি সামান্য থুথু মোবারক লাগিয়ে ঝুলন্ত চোখটি যথাস্থানে বসিয়ে দিলেন- আর এই বলে দোয়া করলেন - اللَّهُمُ أَكْسَهُ جَمَالًا "হে আল্লাহ! তার চোখটি সুন্দরভাবে ফিট করে বসিয়ে দাও"। সাথে সাথেই চোখটি জোড়া লেগে গেলো। উভয় চোখের মধ্যে এই চোখটি উত্তম ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন ছিল। কেননা, আল্লাহর কুদরত-তথা প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে নবী করিম (দঃ)-এর মো'জেযা সংযুক্ত হলে তা ডবল গুণসম্পন্ন হয়।
নবীর প্রকৃত আশেকগণ এমনিভাবেই সম্মানিত হয়ে থাকেন। নবী করিম (দঃ)-এর সাহাবীগণ এবং আশেকগণের জন্য কাল হাশরের দিনে পুলছিরাতের উপরে হযরত জিব্রাইল (আঃ) ছয়শত নূরের পাখা বিছিয়ে দেবেন। আল্লাহ বলেছেন-
هذا لِمَنْ صَحِبَكَ وَأَهْلِ مُحَبَّتَكَ.
"জিব্রাইলের পাখার উপর দিয়ে গমন করার এই সম্মান আপনার আশেকান ও সাহাবীগণকে দান করা হবে"
(আল হাদীসুল কুদসী-মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া ও আনোয়ারে মোহাম্মদীয়া)
নবী করিম (দঃ) যখন ৭০ জন শহীদকে দেখলেন, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন এবং ভাব গদগদ কণ্ঠে ইরশাদ করলেন: "আমি কাল রোজ হাশরে এঁদের জন্য সাক্ষ্য দেবো। যারা আল্লাহর পথে রক্ত দান করে শহীদ হয়, তাঁরা হাশরের ময়দানে রক্তঝরা অবস্থায় উত্থিত হবে। ঐ রক্তের রং হবে লাল-কিন্তু সুগন্ধ হবে মেষ্ক-আম্বরের চেয়েও অধিক"।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী করিম (দঃ) থেকে বর্ণনা করেন- "তোমাদের ভাইয়েরা যখন ওহোদের ময়দানে শহীদ হলেন- তাঁদের রুহু মোবারক সবুজ পাখীর সুরতে বেহেস্তের নহরের কুলে কুলে বেড়াতে লাগলো এবং বেহেস্তের ফল ভক্ষণ করতে লাগলো। আরশের তলে স্বর্ণের ঝালরবাতির নীচে তারা আশ্রয় গ্রহণ করলো। তাঁরা তাঁদের জন্য সংরক্ষিত এই উত্তম খানা-পিনা ও অবস্থান দর্শন করে বলতে লাগলো: "আমাদের সাথে আল্লাহ তায়ালা যে ব্যবহার করলেন- এটা যদি আমাদের দুনিয়ার ভাইয়েরা জান্তো-তাহলে তাঁরাও আল্লাহর পথে জেহাদ করতে কুণ্ঠিত হতোনা"। আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ আমি তোমাদের এই সংবাদ আমার হাবীবের মাধ্যমে তোমাদের ভাইদের নিকট পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। এই পটভূমিকায় আল্লাহ তায়ালা সুরা আলে-ইমরানের ১৭০ নং আয়াত নাযিল করেন:
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُ يرزقون
অর্থাৎ- "যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলে মনে মনে ধারণাও করোনা-বরং তাঁরা জীবিত এবং আল্লাহর নিকট তাঁরা রিযিক প্রাপ্ত"।
আলে ইমরান-১৭০
সুরা বাক্কারাতে আছে ولا تقولوا অর্থাৎ শহীদগণকে মুখে শ্বহীদ বলো না। আর অত্র আয়াতে বলছেন- মনে মনেও ধারণা করতে পারবে না।
বিঃ দ্রঃ নবীগণকে মৃত বলে ধারণা করাও জঘন্য কুফরী। কেননা, তাঁরা শহীদগণের চেয়েও উত্তম জীবনের অধিকারী। (আক্কায়েদ গ্রন্থসমূহ)। ইহাই সঠিক ইসলামী আক্কিদা। কিন্তু ওয়াহাবীরা বলে-"নবীজী মরে পঁচে গলে মাটির সাথে মিশে গিয়েছেন" (তাকভিয়াতুল ঈমান ও ফতোয়ায়ে রশিদিয়া) নাউযুবিল্লাহ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৬০) বদর যুদ্ধ | (০৬২) বনু নযির গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |