- সাধ্যাতীত কোন কাজের দায়িত্ব আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের প্রতি আরোপ করেন না। এটাই তাঁর নিয়ম। কাজেই মাযূর লোকদের জন্য রামাযান মাসে রোযা না রেখে পরবর্তী সময় রোযা রাখার অনুমতি রয়েছে। সফর, অসুস্থতা, গর্ভবতী হওয়া, দুগ্ধপোষ্য শিশুকে স্তন্য দান, হয়িয নিফাস, অথবা অতিশয় বৃদ্ধ হওয়া ইত্যাদি কারণে রামাযান মাসে রোযা না রাখা জায়িয।
- কেউ যদি রামাযান মাসে আটচল্লিশ মাইল সফরের নিয়্যতে সুবহে সাদিকের পূর্বে নিজ বাড়ি থেকে বের হয় তবে সফরের অবস্থায় তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। পরে এর কাযা করতে হবে। দিনের বেলা সফর আরম্ভ করলে ঐ দিনের রোযা ভঙ্গ করা জায়িয নেই রোযা রেখে সফর শুরু করত রোযা ভঙ্গ করলে কাযা ওয়াজিব হবে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। বাড়ীতে অবস্থানকালে রোযা রাখার পর রোযা ভঙ্গ করে সফর আরম্ভ করলে কাযা কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।
- দিনের প্রথমাংশে স্বেচ্ছায় রোযা ভঙ্গ করার পর কেউ যদি জোরপূর্বক সফরে প্রেরণ করে সে ক্ষেত্রে কাফফারা রহিত হবে না। রামাযান মাসে রোযাদার অবস্থায় সফরে বের হওয়ার পর কোন প্রয়োজনে বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করে দিনের বেলা পানাহার করলে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
- রোযা রাখা যদি মুসাফিরের কষ্ট না হয় এবং অধিকাংশ সফর সংগীরা যদি রোযাদার হয় আর তাদের ব্যয় যদি যৌথভাবে নির্বাহ না করা হয় তবে রোযা রাখা উত্তম। পক্ষান্তরে যদি রোযা রাখা কষ্ট হয় এবং সফর সংগীরা যদি রোযাহীন হয় অথবা তাদের ব্যয় যদি যৌথভাবে নির্বাহ করা হয় তাহলে রোযা না রাখাই উত্তম। সফরের অবস্থায় রোযা রাখায় প্রাণ নাশের আশংকা হলে রোযা না রাখা ওয়াজিব (মারাকিল ফালাহ্)।
- রোগীর জন্য রামাযান মাসে রোযা না রাখা জায়িয। অসুস্থ ব্যক্তি যদি প্রাণ নাশের অথবা কোন অঙ্গ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তবে তার জন্য রোযা না রাখা জায়িয। যদি রোগ বেড়ে যাওয়া অথবা রোগ দীর্ঘ স্থায়ী হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলেও রোযা না রাখা জায়িয। পরে এর কাযা করতে হবে। উপরোক্ত বিষয়ে রোগী নিজেই সিদ্ধান্ত নিবে। তবে তা শুধু অনুমান ভিত্তিক হলে গ্রহণযোগ্য হবে না বরং রোগের আলামত কিংবা অভিজ্ঞতা অথবা ফাসিক নয় এমন কোন বিজ্ঞ মুসলিম চিকিৎসকের পরামর্শের ভিত্তিতে নিশ্চিত ধারণা হলেই এক্ষেত্রে উপরোক্ত বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
- যদি কোন সুস্থ ব্যক্তির প্রবল আশংকা জাগে যে, রোযা রাখলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে তবে তার জন্য উপরোক্ত রোগীর হুকুম প্রযোজ্য হবে। পালা জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট দিনে জ্বর আসার পূর্বে এই ওযরে রোযা ভঙ্গ করে পানাহার করার অবকাশ আছে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
- গর্ভবর্তী হওয়া এবং স্তন্যদান করার ওযরেও রোযা না রাখা জায়িয। গর্ভবতী এবং স্তন্যদান কারীনী মহিলা যদি সন্তান অথবা নিজের প্রাণ বিপন্ন হওয়ার আশংকাবোধ করে তবে তাদের জন্য রোযা না রাখা জায়িয। পরে এ রোযা কাযা করে নিবে। তাদের উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না (আলমগীরী, ১ম খণ্ড ও শামী, ২য় খণ্ড)।
- হায়িয ও নিফাস অবস্থায় রোযা রাখা জায়িয নেই। রোযা রাখার পর হায়িয আসবে ধারণায় কোন মহিলা যদি রোযা ভেংগে ফেলে পরে তার হায়িযও আসল না তাহলে তার উপর কাযাও কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। হায়িযের সর্বোচ্চ সময় সীমা দশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর রাতে হায়িয বন্ধ হলে সুবহে সাদিক হতে রোযা আরম্ভ করবে। যদি দশ দিনের কম সময়ের মধ্যে হায়িয বন্ধ হয় আর গোসলের পর সুবহে সাদিকের পূর্বে কিছু সময় পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে তার উপর এ দিনের রোযা রাখা ওয়াজিব। গোসল সমাপ্ত করার সাথে সথেই সুবহে সাদিক হয়ে গেলে রোযা রাখবে না তবে কোনরূপ পানাহার করবে না। বরং পূর্ণ দিন রোযাদারের ন্যায় কাটাবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড ও আলজাওহারতুন নায়্যারা)।
- বার্দ্ধক্যের কারণেও রোযা না রাখা জায়িয। অতিশয় বার্দ্ধক্যে উপনীত ব্যক্তি যে রোযা রাখতে সক্ষম নয় সে রোযা না রেখে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে। বৃদ্ধা মহিলারও এ-ই হুকুম। অতিশয় বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে মরণাপন্ন অবস্থায় আছে। এ ফিয়া রামাযানের প্রথম দিকে বা শেষ দিকে যে কোন সময় ইচ্ছা এক সাথে আদায় করতে পারে। ফিয়া আদায় করার পর রোযা রাখতে সক্ষম হলে সে দিনগুলোর কাযা করতে হবে এবং আদায়কৃত ফিদয়ার হুকুম বাতিল বলে গণ্য হবে। যদি অসুস্থতা বা সফরের কারণে রামাযানের রোযা ছুটে যায় এবং অসুস্থতা বা সফর অব্যাহত থাকে আর এ অবস্থায় কোন ব্যক্তি মারা যায় তবে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে না। অবশ্য সে যদি মিসকীনদেরকে খানা খাওয়ানোর অসিয়্যাত করে যায় তবে অসিয়্যাত সহীহ্ হবে। যদিও তা তার উপরে ওয়াজিব ছিল না। এমতাবস্থায় ওলী মৃত ব্যক্তির পরিত্যজ্য সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ মাল থেকে মিসকীনদের খাওয়াবে। রোগী সুস্থ হওয়ার পর এবং মুসাফির বাড়ীতে আসার পর মৃত্যুর পূর্বে যদি এ পরিমাণ সময় পায় যে সময়ের মধ্যে ছুটে যাওয়া রোযা কাযা করা যায় তবে ঐ সকল রোযার কাযা করা তার উপর ওয়াজিব। কাযা না করে থাকলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদুয়া প্রদান করার অসিয়্যাত করে যাওয়া ওয়াজিব। ওলীকে সে অসিয়্যাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, প্রতি রোযার ফিদয়া এক এক ফিত্রার সমান। কিন্তু অসিয়্যাত না করলে ও ওয়ারিশগণ ফিদয়া আদায় করে দিতে পারে। যদিও তা তাদের উপর আদায় করা ওয়াজিব নয়। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ওলী বা ওয়ারিস অন্য কারোর রোযা রাখা জায়িয নেই (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
- রুগী সুস্থ হওয়ার পর অথবা মুসাফির বাড়ীতে ফিরে আসার পর মারা গেলে যতদিন সুস্থ ছিল বা বাড়ীতে মুকীম ছিল তত দিনের কাযা তার উপর ওয়াজিব হবে। বিগত রামাযানের ছুটে যাওয়া রোযা কাযা করার পূর্বেই পুনরায় রামাযান মাস এসে যায় সেক্ষেত্রে রামাযানের রোযাই রাখতে হবে। রামাযানের শেষে বিগত বছরের ছুটে যাওয়া রোযার কাযা করবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
- কোন মুজাহিদ যদি নিশ্চিতভাবে জানে যে রামাযান মাসে তাকে জিহাদ করতে হবে এমতাবস্থায় রোযা রাখার কারণে তার দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে তার জন্য রোযা না রাখা জায়িয। যদি পরে যুদ্ধ না হয় তবে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না কাযা ওয়াজিব হবে (আলমগীরী, ১মখণ্ড)।
- ফাতাওয়া ও মাসাইল ৪র্থ খন্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)