شب برات (শবে বরাত) ফারসি শব্দ। شب (শব) মানে রাত, আর برات (বরাত) মানে ভাগ্য, অর্থাৎ ভাগ্যের রজনী।। আর এ পবিত্র রাতের আরও বিভিন্ন নাম পাওয়া যায়, যেমন-
১. ليلة البراءة (লাইলাতুল বরাত বা বণ্টনের রাত)
২. ليلة مباركة (লাইলাতু মুবারাকা বা বরকতময় রজনী)
৩. ليلة الرحمة (লাইলাতুর রাহমা বা করুণার রজনী)
৪. ليلة الصك (লাইলাতুছ ছাক বা সনদপ্রাপ্তির রাত)।
وقيل إنما سميت ليلة البراءة لأن فيها براءتين براءة للأشقياء من الرحمن وبراءة للأولياء من الخذلان
'এ রাতকে 'লাইলাতুল বরাত' বলা হয় এ জন্য যে, কেননা এ রাতে দু'ধরনের বরাত হাছিল হয়। একটি হলোঃ হতভাগাদের আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া, অপরটি হলোঃ আল্লাহর প্রিয়জনদের অপমান থেকে মুক্ত ও নিরাপদ থাকা।"
(গুনিয়াতুত্ তালেবীন, পৃ-৫১৩)
• ثم أن ليلة النصف من شعبان لها أربعة أسماء الليلة المباركة، وليلة البراءة وليلة الصك، وليلة الرحمة، وقيل إنما سميت بليلة البراءة، وليلة الصك، لأن البندار إذا استوفى الخراج من أهله كتب لهم البراءة، كذلك الله عز وجل يكتب لعباده المؤمنين البراءة في هذه الليلة
"নিশ্চয় শাবানের মধ্য রজনীর চারটি উল্লেখযোগ্য নাম রয়েছে, আর তা হলো- الليلة المباركة (লাইলাতুম মুবারাকা - বরকতময় রজনী), ليلة البراءة (লাইলাতুল বরায়া - ভাগ্য রজনী), ليلة الرحمة (লাইলাতুর রাহমাহ্ - করুণার রজনী) ও ليلة الصك (লাইলাতুছ ছাক - সনদপ্রাপ্তির রজনী)। এ রাতকে বরাত ও ছাক রাত নামে নামকরণের কারণ হিসেবে বলা হয়, যখন কোন ব্যক্তি তার উপর ধার্যকৃত কর পরিশোধ করেন, তখন তাকে কর আদায়কারী ব্যক্তি বা সংস্থার পক্ষ থেকে একটি দায়মুক্তির সনদ দেয়া হয়, অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা'লা তাঁর প্রিয় বান্দাদের এ রাত্রিতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ প্রদান করে থাকেন।"
(তাফসীর-ই কাশশাফ, পবিত্র কোরআনের 'সূরা দুখান' এর আয়াত حم والكتاب المبين এর ব্যাখ্যায়)
حم، والكتاب المبين، إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين - سورة الدخان آيات: ٠١ والليلة المباركة ليلة القدر. ويُقال: ليلة النصف من شَعْبَانِ وَلَهَا أَرْبَعَة أسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك, وليلة القدر. ووصفها بـ البركة لما ينزل الله فيها على عباده من البركات والخيرات والدواب. وروى قتادة عن واثلة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: التزلت صُحُفَ إِبْرَاهِيم في أول ليلة من رمضان وأنزلت الدوراة لست مَضَيْنَ مِنْ رَمَضَان وانزلت الربور لاثنتي عشرة من رمضان وأنزل الإنجيل لثمان عشرة خلت من رمضان وانزل القرآن لأربع وعشرين مضت من رمضان ] . ثم قيل: أنزل القرآن كله إلى السماء الدنيا في هذه الليلة دم انزل نجمًا نَجْمًا فِي سَائِرِ الأَيَّام على حسب اتفاق الأسباب. وقيل: كان ينزل في كل ليلة القدر ما ينزل في سائر السنة. وقيل كان ابتداء الإنزال في هذه الليلة. وقال عكرمة الليلة المباركة هاهنا ليلة النصف من شعبان
আয়াতে ليلة مباركة বা বরকতময় রজনী মানে শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন- তা হলো শাবানের মধ্যরজনী ليلة النصف من شعبان কে বুঝানো হয়েছে। এ রাতটির চারটি নাম উল্লেখ রয়েছে। আর তাহলো- লাইলাতুল মুবারাকাহ্, লাইলাতুল বারাআ, লাইলাতুল কাদর ও লাইলাতুছ ছাক। আর এ রাতকে 'বরকতময় রজনী' হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে, কেননা এ রাতে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বান্দাদের উপর অগণিত বরকত, কল্যাণ ও পূণ্য অবতীর্ণ করে থাকেন। হযরত ক্বাতাদাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াছিলাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, 'রমযানের প্রথম রাতে অবতীর্ণ হয়েছে ছহীফা ইবরাহীম, সপ্তম রাতে তাওরাত, দ্বাদশতম রাতে যাবুর, উনবিংশ রাতে ইন্ঞ্জীল এবং চব্বিশতম রাত সমাপনান্তে অবতীর্ণ হয় কুরআন করীম।' অতঃপর বলা হয়, 'এ রাতেই পবিত্র কোরআন একই সাথে সম্পূর্ণরূপে অবতীর্ণ হয় এবং পরবর্তীতে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে বছর জুড়ে অবতীর্ণ হয়। আরও বলা হয়, যে পরিমাণ ক্বোরআন সারা বছর অবতীর্ণ হয় ঠিক সমপরিমাণ ক্বোরআন কদরের রাতে অবতীর্ণ হয় একত্রে। আবার কেউ কেউ বলেন, ক্বোরআন অবতীর্ণ হওয়া আরম্ভ হয় শবে বরাতে। ইকরামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, লাইলাতুল মুবারাকাহ্ মানে এখানে 'শবে বরাত' কে বুঝানো হয়েছে।
(কুরতুবী: পবিত্র কোরআনের 'সূরা দুখান' এর আয়াত حم والكتاب المبين. এর ব্যাখ্যায় )
তিনি আরও বলেনঃ
وقال عكرمة هي ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وينسخ الأحياء من الأموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم أحد ولا ينقص منهم أحد. وَرَوَى عثمان بن المغيرة قال : قال النبي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: [ تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان حتى أنَّ الرَّجُل لينكح ويُولد له وقد خَرَجَ اسمه في الموتى .. قات وقد ذكر حديث عائشة مطولا صاحب كتاب العروس واختار أن اليلة التي يفرق فيها كل أمر حكيم ليلة النصف من شعبان, وَأَنهَا تسمى ليلة البراءة ... وقال الزمخشري: " وقيل يبدأ في استنساخ ذلِكَ مِنْ اللوح المحفوظ في ليلة البراءة ويقع الفراغ في ليلة القدر : قتدفع نسخة الأرزاق إلى ميكائيل ونسخة الحُروب إلى جبريل وكذلك الزلازل والصواعق والخسف ونسخة الأعمال إلى إِسْمَاعِيل صاحب سماء الدُّنيا وَهُوَ مُكَ عَظِيمٍ : وَنُسْخَة المصائب إلى ملك الموت
হযরত ইকরামা বলেন, এটি হলো শাবানের মধ্য রজনী (শবে বরাত) আগত বছরের বিষয়াদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কারা জীবিত থাকবে এবং কারা মারা যাবে, কারা এ বছর হজ্ব করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে এতে কেউ কোনরূপ পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে না। হযরত ওসমান ইবনে মুগিরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, শাবান থেকে শাবানের জন্য মানুষের আয়ু নির্ধারণ করা হয়, এমনি মানুষ বিবাহ করছে এবং তার সন্তান জন্ম লাভ করছে অথচ তার নাম মৃতদের কাতারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমি বলি 'আল্ আরুস' নামক কিতাবের লেখক হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা হতে বর্ণিত হাদীস শরীফটি সুবিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, যে রাতে সবকিছু বণ্টন করা হয় তা হলো শাবানের মধ্য রজনী বা শবে বরাত। এজন্য এটাকে বরাত রজনী বলা হয়। আল্লামা জমশরী বলেন- 'লওহে মাহফুয' এ লিপিবদ্ধকরণ শুরু হয় শবে বরাতে এবং তার পরিসমাপ্তি ঘটে শবে ক্বদরে। অতঃপর রিস্কের কপি দেয়া হয় হযরত মিকাঈল আলাইহিস্ সালামকে, যুদ্ধের কপি হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালামকে, অনুরূপভাবে ভূমিকম্প, বজ্রপাত ও ভূমিধ্বস বিষয়ক কপিও। আমলনামার কপি প্রথম আসমানের মহান ফিরিশতা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালামকে এবং বিপদাপদের কপি হযরত আজরাঈল তথা মালাকুল মাওত আলাইহিস্ সালামকে সোপর্দ করা হয়।
(কুরতুবী: পবিত্র কোরআনের 'সূরা দুখান' এর আয়াত حم والكتاب المبين. এর ব্যাখ্যায় )
حم والكتاب المبين إنا أنزلناه في ليلة مباركة قال قتادة وابن زيد هي ليلة القدر أنزل الله القرآن في ليلة القدر من أم الكتاب إلى السماء الدنيا، ثم نزل به جبريل عن النبي - صلى الله عليه وسلم - نجوما في عشرين سنة. وقال آخرون هي ليلة النصف من شعبان فيها يفرق كل أمر حكيم : وقال عكرمة هي ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وتنسخ الأحياء من الأموات فلا يزاد فيهم أحد ولا ينقص منهم أحد. وأن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قال: " تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان، حتى إن الرجل لينكح ويولد له ولقد أخرج اسمه في الموتى" . وروى عن ابن عباس رضي الله عنهما أن الله يقضي الأقضية في ليلة النصف من شعبان ويسلمها إلى أربابها في ليلة القدر
ইমাম ক্বাতাদাহ এবং ইবনে যায়েদ বলেন- এটি হলো কদরের রাত। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নিকট সংরক্ষিত উমূল কিতাব (মূল কিতাব) থেকে ক্বদরের রাতকে পৃথিবীর আকাশে কোরআন নাযিল করেন। অতঃপর হযরত জিব্রাঈল বিশ বছর কাল যাবৎ ধরে ধাপে তা প্রিয় নবীর নিকট নিয়ে আসেন। আর অন্যরা বলেছেন- এটি হলো 'শাবানের মধ্য রজনী । فيها يفرق كل امرحكيم এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, এটি হলো শাবানের মধ্য রজনী, যাতে পূর্ণ বছরের বিষয়াদি নির্ধারণ করা হয়। হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ তা'আলা নানা বিষয়ে ফয়সালা প্রদান করেন শাবানের মধ্য রজনীতে এবং তা এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাদের নিকট সোপর্দ করেন কদরের রাতে।
(তাফসীরে বাগভী, পবিত্র কোরআনের 'সূরা দুখান' এর আয়াত حم والكتاب المبين, এর ব্যাখ্যায়: ২২৫-২২৭)
ومن قال إنها ليلة النصف من شعبان كما روي عن عكرمة فقدا بعدَ النُّجْعَة فَإِن نَص القرآن أنها في رمضان. والحديث الذي رواه عبد الله بن صالح عن الديْتَ عَنْ عُقيل عَنْ الزُّهْرِي أَخبرني عثمان بن محمد بن المغيرة بن الأخنس قال: إِنَّ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم قال تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ لَيَنكِحُ ويُولد له وقد أخرج اسمه في الموتى فهو حديث مرسل ومثله لا يُعارض به النصوص
"আর যারা বলেন, বরকতময় রাত বলতে মধ্য শা'বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে যেমনটি ইকরামাহ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে তাদের কথা সত্য থেকে বহু দূরে এবং যে হাদীসটি উছমান ইবনে আখনাস থেকে বর্ণিত অর্থাৎ "এক শাবান মাস হতে অন্য শাবান মাস পর্যন্ত মানুষের হায়াত মাউত ও রিযিকের বার্ষিক ফয়সালা হয়ে থাকে এমনকি কোন লোক বিবাহ করে এবং বাচ্চাও জন্ম গ্রহণ করে অথচ সে জানে না তার নাম মত ব্যক্তিদের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।" এ হাদীসটি মুরসাল (অর্থাৎ হাদীসটিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ নেই।) এ ধরণের হাদীস দ্বারা সহীহ হাদীসকে খন্ডন করা যায় না। "
(তাফসীরে ইবনে কাছীরঃ পবিত্র কোরআনের 'সূরা দুখান' এর আয়াত حم والكتاب المبين ব্যাখ্যায় ৪/১৪৮)