হযরত বারায়া ইবনে আযিব (রা) কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ "কবরে কাফের ব্যক্তি যখন মুনকীর-নাকীরের জিজ্ঞাসার জবাবে বলে, হায়! আমি কিছু জানি না, তখন আকাশ হতে একজন ঘোষক বলেন, "এ লোক মিথ্যা বলছে, তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে আগুনের পোশাক পরিধান করাও, তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও।" অতঃপর জাহান্নামের দিকে দরজা খুলে দেয়া হলে সে দরজা পথে তার কবরে জাহান্নামের তপ্ত লু হাওয়া প্রবাহিত হতে থাকে। অতঃপর তার কবরকে এত সংকুচিত করা হয় যে, মাটির চাপে তার উভয় পাঁজরে হাড় পরস্পর বিপরীত দিকে বের হয়ে পড়ে। তারপর একে সর্বদা শাস্তি দেয়ার জন্য এমন একজন ফেরেশতা মোতায়েন করা হয়, যে অন্ধ ও বধির। তার হাতে থাকে বিরাট এক লোহার গদা। যার প্রকৃতি এমন যে, যদি তা দিয়ে পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয়, তবে পাহাড়ও মাটির সাথে মিশে যাবে। এ গদা দ্বারা একবার আঘাত করলে মানুষ ও জ্বিন ছাড়া পূর্ব পশ্চিমের সমস্ত প্রাণী তার চিৎকারের শব্দ শুনতে পায়। আর একবার আঘাত করলে কাফের ব্যক্তি মাটির সাথে মিশে যায়। অতঃপর তাকে পূনরায় জীবিত করা হয়।"
-আহমদ, আবু দাউদ।
বোখারী ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত এক হাদীসে বলা হয়েছে, এ লোহার গদা দ্বারা আঘাত করলে কাফের ব্যক্তি এমন জোরে চিৎকার দেয়, যার শব্দ তার নিকটবর্তী মানুষ ও জ্বিন ছাড়া প্রতিটি বস্তু শুনতে পায়।
-মেশকাত।
এখানে এ জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয় যে, মৃতকে মারার এবং তার চিৎকার দেয়ার শব্দ মানুষ ও জ্বিনদেরকে কেন শোনান হয় না?
এর জওয়াবে বলা হয়, মানুষ ও জ্বিনদের সাথে আলমে বরযখের একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। তাদেরকে যদি কবর আযাব দেখানো হয়, অথবা তারা যদি সেখানে বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পায়, তাহলে তারা আল্লাহ তাআ'লার পতি ঈমান আনবে এবং পুণ্যময় কাজ করবে। কিন্তু কথা হল আল্লাহ তাআ'লা গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন, সেরূপ ঈমানই তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য। শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা শুনে তা বুঝে আসুক বা না আসুক, তা সঠিক বলে বিশ্বাস করাকেই ঈমান বলা হয়। কোরআন মজীদে আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন-
إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرُ
যারা স্বীয় প্রতিপালককে না দেখে অদৃশ্যভাবে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান।
-সূরা মূলক, ১ম রুকু।
জান্নাত-জাহান্নাম ও কবরের অবস্থা ও দৃশ্য যদি অবলোকন করান হয়, তাহলে ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা হয় না। আল্লাহ' তাআ'লার কাছে চাক্ষুষ দেখে ঈমান গ্রহণ কবুল হয় না। এজন্য মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে মুমীন হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তখন তো আযাবের ফেরেশতাকে দেখতে পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন:
فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ إِيْمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْ بَأْسَنَا
তারা যখন আমার শাস্তি অবলোকন করে, তখন তাদের ঈমান আনায় কোন উপকার হবে না।
-সূরা মুমিন- শেষ রুকু।
কেয়ামতের দিন কবর থেকে উঠে জান্নাত-জাহান্নাম অবলোকন করার পর সবা-ই ঈমান আনবে এবং নবী-রাসূলগণকে সত্য মানাবে, কিন্তু সে সময়ে বিশ্বাস স্থাপনে কোন ফল লাভ হবে না। তখনকার ঈমান আল্লাহ তাআ'লার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
মানুষকে কবর আযাব না দেখান এবং কবরে মৃত ব্যক্তির চিৎকার না শোনানোর মধ্যে এ কল্যাণও নিহিত রয়েছে যে, তারা তা দেখলে ও শুনলে সহ্য করতে পারত না, তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারাবে, কোনক্রমেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না।
হযরত আবু সাঈদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ "মানুষ যখন কাফেরের কফিন বহন করে চলে, তখন মৃত ব্যক্তি বলে: হায়! আমার দুর্গতি, তোমরা আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? তার একথা মানুষ ছাড়া সমস্ত প্রাণীই শুনতে পায়। এ কথা যদি কোন মানুষ শুনতে পেত, তবে তৎক্ষনাত সে অচেতন হয়ে পড়ত।
-বোখারী, মেশকাত।
অবশ্য আল্লাহ তাআ'লা তাঁর রাসূল (সঃ)-কে কবরের অবস্থা সম্পর্কে শুধু অবহিতই করেননি বরং তা দেখিয়েছেনও। কেননা, তাঁর এসব শাস্তি অবলোকন করে সহ্য করার ক্ষমতা ছিল। এমনকি জাহান্নামের দৃশ্য দেখার পর কান্না সম্বরণ এবং স্বীয় সাহাবাদের সাথে চলাফেরা এবং পানাহার করণে তাঁর কোনো ব্যাঘাতই সৃষ্টি হয়নি।
হযরত আবু আইউব (রা) বলেছেন, রাসূল করীম (সঃ) কোন এক সময় মদীনায় থাকাকালে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর শহরের বাইরে গেলেন। এমন সময় তিনি এক বিরাট বিকট শব্দ শুনে বললেন, ইহুদীগণকে তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
-বোখারী, মুসলিম।
হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোন এক সময় স্বীয় 'খচ্চরের পিঠে আরোহণ করে বনু নাজ্জারের বাগানে যেতে ছিলেন। আমিও তাঁর সাথে ছিলাম। হঠাৎ নবী করীম (সঃ)-এর খচ্চরটি লাফ দিয়ে উঠল। এমন লাফ দিল যে নবী করীম (সঃ) স্বীয় খচ্চরের পিঠ হতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলেন। সেখানে পাঁচ অথবা ছ'টি কবর ছিল। নবী করীম (সঃ) সমাহিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন: "এদেরকে কি তোমরা চিনতে?" এক লোক বলল, আমি তাদেরকে চিনতাম। নবী করীম (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন : "এরা কখন মারা গেছে?" সে বলল, এরা শেরিকী যমানায় মরেছে। তখন নবী করীম (সঃ) বললেন: "এদেরকে কবরে কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তোমরা মৃত ব্যক্তিদের দাফন পরিত্যাগ করার আশংকা না হলে, আমি আল্লাহ তাআ'লার কাছে এ দোয়া করতাম, তোমাদেরকেও যেন এ কবরের শাস্তির কিছু অংশ শুনান- যা আমি এখন শুনছি।
-মুসলিম।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৭) কবরে বিষধর সাপের দংশন | (০১৯) চোগলখোরী ও পেশাবের ছিটা হতে আত্মরক্ষা না করায় কবর আযাব |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |