রোযা সহীহ হওয়ার জন্য নিয়্যত করা শর্ত। নিয়্যত হল, অন্তর দিয়ে কোন কাজের সংকল্প করা। রোযার ক্ষেত্রে এরূপ সংকল্প করা যে 'আমি রোযা রাখছি'। মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। প্রত্যেক দিনের রোযার জন্য নিয়্যত করা আবশ্যক।
শায়খ নাজমুদ্দীন নসফী (র.)-এর মতে রামাযানে সাহরী খাওয়ার দ্বারা নিয়্যত আদায় হয়ে যায়। অন্য রোযার ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
আরবীতে নিয়্যত করা জরুরী নয়। তবে কেউ যদি আরবী শব্দে নিয়্যত করতে চায় তাহলে বলবেঃ
نَوَيْتُ أَنْ أَصُومَ غَدًا مِّنْ شَهْرٍ رَمَضَانَ
আমি রামাযান মাসের আগামী দিনের রোযা রাখার নিয়্যত করছি।
কেউ যদি বলে, আল্লাহ চাহে তো আগামীকাল রোযা রাখব। তবুও তার নিয়্যত সহীহ্ হবে। চান্দ্র মাসের ক্ষেত্রে রাত আগে আসে এবং দিন পরে আসে। রোযার নিয়্যত করার সময় সূর্যাস্তের পর থেকে আরম্ভ হয় এবং তা 'যুহওয়াতুল কুব্রা'র পূর্ব পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। 'যুহওয়াতুল কুরা' বলা হয় সুবহি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মোট সময়ের মধ্যবর্তী সময়কে। সুতরাং সূর্যাস্তের পূর্বে রোযার নিয়্যত করা জায়িয নয়। সূর্যাস্তের পূর্বে নিয়্যত করা জায়িয 'যুহওয়াতুল কুরা'র পূর্বে নিয়্যত করা তখনই জায়িয হবে যদি সুবহে সাদিকের পর থেকে এর পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পানাহার বা স্ত্রী সহবাস না করা হয়। যদি এ সময়ের মধ্যে পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করে থাকে তবে সুবহে সাদিকের পরবর্তী নিয়্যত গ্রহণযোগ্য হবেনা। যদি রামাযান মাসে নির্দিষ্টভাবে রামাযানের রোযা বা ফরয রোযার নিয়্যত না করে শুধু এতটুকু বলে যে আমি আজ রোযা রাখব অথবা রাত্রে মনে মনে বলে যে, আগামীকাল আমি রোযা রাখব তবে এতেও রামাযানের রোযা সহীহ হয়ে যাবে।
যদি কেউ রামাযান মাসে রামাযানের রোযা না রেখে নফল রোযার নিয়্যত করে এবং একথা মনে করে যে রামাযানের রোযা পরে কাযা করে নিব তবে এ অবস্থায়ও রামাযানের ফরয রোযা আদায় হয়ে যাবে। নফল রোযার নিয়্যত সহীহ হবে না। এক রামাযানে কেউ যদি অপর রামাযানের কাযা রোযার নিয়্যত করে তবুও রামাযানের ফরয রোযাই আদায় হবে। কাযার নিয়্যত সহীহ হবেনা। রামাযানের পর কাযা আদায় করবে। কেউ যদি রামাযানের রোযার নিয়্যত না করে মানতের ওয়াজিব রোযা আদায় করার নিয়্যত করে তবুও রামাযানের রোযাই আদায় হবে। মানতের রোযা আদায় হবে না। পরবর্তী সময় মানতের রোযা আদায় করতে হবে। মোটকথা রামাযান মাসে যে কোন রোযারই নিয়্যত করুক না কেন তাতে রামাযানের রোযাই আদায় হয়ে যাবে। অন্য কোন রোযার নিয়্যত সহীহ্ হবে না।
মুসাফির এবং রুগ্ন ব্যক্তি যদি নির্দিষ্টভাবে রামাযানের রোযার নিয়্যত না করে শুধু এতটুকু বলে যে, আমি আজ রোযা রাখব তবে এতেও রামাযানের রোযা আদায় হবে। দিনের বেলা রোযার নিয়্যত করলে এভাবে নিয়্যত করবে যে, 'যখন হতে দিন শুরু হয়েছে তখন থেকে আমি রোযা রাখার নিয়্যত করেছি' যদি এরূপ বলে যে, 'এখন থেকে আমি রোযা রাখার নিয়্যত করলাম' তবে এ নিয়্যত সহীহ্ হবে না এবং উক্ত ব্যক্তি রোযাদার হিসাবে গণ্য হবে না (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
কেউ যদি রামাযান মাসে রাত বা দিনে বেহুশ হয়ে যায় আর দ্বিপ্রহরের পূর্বে তার হুশ ফিরে আসে এবং এর মধ্যে যদি রোযা ভঙ্গের কোন কারণ না ঘটে ও এ অবস্থায় যদি রোযার নিয়্যত করে নেয় তবে তার রোযা সহীহ্ হবে। পাগলের বেলায়ও হুকুম অনুরূপ। দিনের প্রথম ভাগে কোন মুসলমান মুরতাদ হয়ে যদি পুনঃ ইসলামগ্রহণ করে এবং দ্বিপ্রহরের পূর্বে রোযার নিয়্যত করে তবে তার রোযা সহীহ্ হবে। নিয়্যতের ক্ষেত্রে উত্তম হল রাতে নিয়্যত করা এবং নির্দিষ্টভাবে নিয়্যত করা। কাযা ও কাফ্ফার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে রোযার নিয়্যত রাতেই করতে হবে। কোন মহিলা যদি হায়িযের অবস্থায় রোযার নিয়্যত করে এবং সুবহে সাদিকের পূর্বে সে পবিত্র হয়ে যায় তবে তার রোযা সহীহ্ হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১২) রোযা সহীহ হওয়ার শর্ত | (০১৪) রোযার ফরয |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |