হযরত শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলবী (র.) তাঁর বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ 'হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগায়' লিখেছেন, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মুবারক যমানায় 'ফিকহ্' শাস্ত্রে যথারীতি সংকলিত হয় নি। হযরত সাহাবায়ে কিরাম (রা.) রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে যে কাজ যেরূপভাবে করতে দেখতেন, তাঁর অনুসরণ করাকেই তাঁরা দীন দুনিয়ার সৌভাগ্য হিসেবে মেনে নিতেন। তাঁদের কাছে এ ধরনের কোন প্রশ্নই ছিল না যে হযরতের কোন কাজ কি মর্যাদার। কোন্ কাজ তিনি 'আদত' (স্বভাব) হিসেবে করেছেন এবং কোন্ কাজ তিনি ইবাদত হিসেবে করেছেন। এসব কাজ করা যরুরী, না কি তার আবশ্যকতা নেই। যা কিছু তিনি যেভাবে করতেন, তাঁরা তাই করতেন। হযরতের অনুসরণে এ ধরণটি তাঁদের নিকট নিজেদের জানের চেয়েও বেশী প্রিয় ছিল।
যদি এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি হতো, যে বিষয়ে হযরতের কোন কাজ বা আদেশ খুঁজে পাওয়া যেতো না তখন যিনি অধিকতর জ্ঞানী, তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করে তা সম্পাদন করতেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'তোমরা যদি না জানো, তবে জ্ঞানীগণের নিকট থেকে জেনে নাও।' পবিত্র কুরআনের এ বিধান মোতাবেক জ্ঞানীগণের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা কুরআন মজীদ ও হাদীসের সরাসরি বিধানের সাথে তা মিলিয়ে উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন।
সাহাবায়ে কিরামের পরে তাবিঈনে ইযামের যুগ। তাঁরা কুরআনের ইল্ম হাদীস, সাহাবায়ে কিরামের কথা ও কাজের আদর্শ সরাসরি সাহাবায়ে কিরামের নিকট থেকেই সংগ্রহ করেছেন। প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বুঝে তাঁরাও সাহাবায়ে কিরামের ন্যায় গবেষণা, চিন্তা ও অনুসন্ধানের দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন। 'হুজ্জাতুল্লাহিল্ বালিগায়' উল্লেখিত হয়েছে যে, হযরত সাঈদ ইব্ন্ন মুসায়্যিব ও ইব্রাহীম ইবন ইয়াযীদ নাঈ (র.) প্রমূখ আলিমগণ ফিকহ্ মাসাইলের কতগুলো অধ্যায় সংকলন করেছিলেন। এ কাজের সুবিধার জন্য তাঁরা কতিপয় উসূলের (মৌলিক নীতির) অনুসরণ করেছেন, যা তাঁরা সাহাবায়ে কিরামের নিকট থেকে সংগ্রহ করেছিলেন।
তাবৃঙ্গ তাবিঈনের যুগে এসে হযরত রাসূলে করীম (সা.) সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈনে ইযামের পবিত্র জীবন ও আদর্শের আলোকে যাবতীয় সমস্যা ও উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গভীর গবেষণা, বুদ্ধি ও চেতনা এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত এ পথেই সাফল্য আসে ও ফিকহ্ শাস্ত্রের সংকলন শুরু হয়।