জানাজার নামাজ পড়া ফরজে কেফায়া। কয়েকজন লোক অথবা এক ব্যক্তি অথবা পুরুষের অভাবে স্ত্রীলোক জানাজা পড়লে ফরজে কেফায়া আদায় হয়ে যাবে। কেউ যদি জানাজা না পড়ে তবে সকলেই গোনাহগার হবে ।
১। একমাত্র মুছলমানেরই জানাজা পড়ুন।
২। যদি কোন বাচ্চা ভূমিষ্টহওয়ার পরে মারা যায় তাহলে তারও জানাজা পড়ুন।
৩। ভূমিষ্ট হওয়ার আগে মারা গেলে জানাজা পড়বেন না ।
৪ । বিদ্রোহী বা ডাকাতের জানাজা পড়বেন না ।
৫। পিতা-মাতা হত্যাকারীরও জানাজা পড়বেন না ।
৬। ভুলে নিজেকে মেরে ফেললে বা আত্মহত্যা করলে তার জানাজা পড়ুন ।
৭। অপরাধের জন্য ফাঁসী দিলে বা রজম করলে তার গোসল দিন ও জানাজা পড়ুন।
৮। মৃত ব্যক্তি জানাজার জন্য অছিয়ত করলে সে অছিয়ত বাতিল হবে।
৯। মৃত ব্যক্তির অলী বা নিকটতম আত্মীয় জানাজা পড়াবার বেশী হকদার।
১০। যদি অলী জানাজা পড়ে তবে আর কারো জানাজা পড়ানো জায়েজ নেই।
১১। যদি একই স্তরের একাধিক অলী থাকে এবং একজনে জানাজা পড়ায় তবে অন্য সকলের পূনরায় পড়ার এখতিয়ার থাকে না।
সাত ব্যক্তি হলে ইমাম বাদে তিন কাতার করুন। ইমাম আগে দাড়ান। তিনজন তার পিছনে, দুইজন তাদের পিছনে ও একজন তাদের পিছনে দাড়ান। মাইয়েত পুরুষ হোক কিংবা মহিলা হোক ইমাম সব সময় মাইয়েতের বুক বরাবর দাড়ান ।
মনে রাখুনঃ জানাজার নামাজে চার তাকবীর। যদি এর এক তাকবীর বাদ যায় তবে জানাজা শুদ্ধ হবে না ।
১। প্রথমে শুরুর তাকবীর বলুন। তাকবীরের জন্যে হাত উঠিয়ে নাভীর নীচে বাধুন ।
২। এরপর ছানা পড়ুন। ছানার মধ্যে ‘অতাআ'লা জাদ্দুকা'-এর পরে ‘অযাল্লা ছানাউকা’ শব্দ পড়ুন ।
৩। তারপর ইমাম জোরে দ্বিতীয় তাকবীর বলুন । তাকবীর বলার সময় হাত উঠাবেন না ।
৪ । এবার দুরুদে ইবরাহীমী পড়ুন। (১৯০ পৃষ্ঠায় দেখুন।)
৫। অতঃপর ইমাম জোরে তৃতীয় তাকবীর বলুন । (মোকতাদীগণ সব তাকবীর আস্তে বলুন।)
৬। তৃতীয় তাকবীরের পরে মাইয়েত ও মুছলমানদের জন্য দোয়া করুন। এ জন্য নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তবে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন বলে বর্ণিত আছে ।
আল্লাহুম্মা
হে আল্লাহ
গ-ফির
তুমি মাফ করো
লিহায়্যিনা
আমাদের জীবিতদের,
অ-মায়্যিতিনা
আমাদের মৃতদের,
অশাহিদিনা
আমাদের উপস্থিত ব্যক্তিদের,
অগায়িবিনা
আমাদের অনুপস্থিত ব্যক্তিদের,
অছগীরিনা
আমাদের ছোটদের,
অকাবীরিনা
আমাদের বড়দের,
অযাকারিনা
আমাদের পুরুষদের,
অ উনছানা
এবং আমাদের নারীদের।
আল্লাহুম্মা
হে আল্লাহ
মান
যাকে
আহইয়াইতাহু
তুমি জীবিত রাখবে
মিন্না
আমাদের মধ্য থেকে,
ফাআহয়িহি
তাকে জীবিত রাখো
আলাল ইছলাম
ইছলামের সাথে
অ-মান
আর যাকে
তাওয়াফফাইতাহু
তুমি মৃত্যুদান করো
মিন্না
আমাদের মধ্য হতে,
ফাতাওয়াফফাহু
তাকে মৃত্যু দাও
আলাল ঈমান
ঈমানের সাথে।
যদি মাইয়েত বাচ্চা ছেলে হয় তবে ইমাম আবু হানিফা রাদিআল্লাহু আনহু-এর মতে নিম্নের দোয়া পড়ুনঃ
আল্লাহুম্মা
হে আল্লাহ
জ-আলহু
এ শিশুকে করো
লানা
আমাদের জন্যে
ফারতাঁ
অগ্রগামী ব্যবস্থাপক
ও- অজআলহু
একে করো
লানা
আমাদের জন্যে
আজরা
পুরস্কারের অছিলা
ওঁ-অজুখরা
ও সম্পদ
ওঁ অজআলহু
একে করো
লানা
আমাদের জন্যে
শাফিয়া
সুপারিশকারী
ওঁ-অমুশাফফা আ'
এবং আল্লাহ পাকের তরফ থেকে যাদের সুপারিশ কবুল করা হয়েছে।
ক) ইমাম যদি ভুলে পাঁচ তাকবীর বলে তবে মোকতাদীগণ তা বলবেন না।
খ) মোকতাদীগণ চুপ করে থাকবেন এবং ইমামের সঙ্গে ছালাম ফিরাবেন ।
গ) ইমাম যদি ভুলে তিন তাকবীর দিয়ে ছালাম ফিরায় তবে মোকতাদীগণ চতুর্থ তাকবীর দিয়ে ছালাম ফিরাবে।
ঘ) যদি জানাজার পূর্বে দাফন করা হয় এবং ধারণা করা হয় যে মাইয়েতের দেহ পচে বা ফেটে যায়নি তবে কবরের উপর জানাজা পড়া যেতে পারে।
ঙ) ফেটে বা পঁচে যাওয়ার ধারণা হলে কবরের উপর জানাজা পড়া যাবে না ।
চ) তিনদিন পর্যন্ত জানাজা পড়া যায় বলে যে ধারণা করা হয় তা সঠিক নয়।
ছ) বিনা ওজরে মছজিদে, ঈদগাহে বা ঘরের মধ্যে জানাজা পড়া মাকরুহ।
জ) মাইয়েতের জানাজা না পড়ে কেউ ফিরে যাবেন না। জানাজার পর দাফনের পূর্বে যাওয়ার প্রয়োজন হলে আহলে জানাজা অর্থাৎ মাইয়েতের আত্নীয় স্বজনের অনুমতি নিয়ে যেতে পারেন।
১০। জানাজায় হাজির হয়ে প্রথম তাকবীর না পেলে অপেক্ষা করে ইমামের দ্বিতীয় তাকবীরের সাথে নিয়েত বাধুন ।
ইমামের ছালাম ফিরানোর পরে লাশ উঠানোর আগেই দোয়া পড়ুন। দোয়া পড়ার আগে মাটি থেকে লাশ উঠালে দোয়া না পড়ে শুধু তাকবীর বলেই ছালাম ফিরান ।