হুজুর আকরম (সঃ) এর কদম মুবারকের বর্ণনায় এসেছে, উভয় কদম মুবারক বড় ও মাংশল ছিলো। যেমন হাত মুবারকের বর্ণনায় এসেছে, দুহাতের পাঞ্জা নরোম ও মাংশল ছিলো। মাওয়াহেব গ্রন্থে এসেছে [আরবী] ‘গেলাফুল আসবে' (পায়ের আঙ্গুল সমূহ পুরু ছিলো)। মাশারেক গ্রন্থে [আরবী] শাশন ও গেলায উভয় শব্দের অর্থ করা হয়েছে মোটা এবং মাংশল। এক বর্ণনায় [আরবী] 'খেমসানুল আখমাসাইন' এসেছে। 'খাস' পায়ের তলার ঐ অংশকে বলা হয় যা পদচারণার সময় মাটির সঙ্গে মিলিত হয় । সাররাহ গ্রন্থে অর্থ করা হয়েছে পায়ের তলার চিকন দিক। [আরবী] খেমসান শব্দটির [আরবী] খ বর্ণে পেশ সহযোগে এটা [আরবী] 'খুমস' শব্দের দ্বিবচন। যার পা যমীন থেকে অনেক উচুঁতে থাকে তাকে 'আখমাস' বলা হয়। হুজুর পাক (সঃ) এর কদম মুবারকের ক্ষেত্রে এরূপ বিশেষণ অবশ্য আধিক্যের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে। অর্থাৎ পা হালকা ও পাতলা না বুঝানোর জন্য । ইবনুল আছীর থেকে এরূপ সংকলিত হয়েছে। এক বর্ণনায় এসেছে, তাঁর উভয় কদম মুবারক সমান্তরাল ছিলো। এতে বাহুল্য বা ভঙ্গুরতা কিছুই ছিলোনা । পা দুখানা মসৃণ ও পবিত্র হওয়ার কারণে তাতে পানি ঢেলে দিলে তরিৎ গতিতে প্রবাহিত হয়ে পড়ে যেতো । ইবন আলী (রাঃ) এর হাদীছেও এরকম বর্ণনা করা হয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছে আছে, তিনি যখন যমীনে পা রেখে চলতেন তখন সমস্ত পা ফেলেই চলতেন, পায়ের কোনো স্থান স্ফীত ছিলোনা। বায়হাকী শরীফে হজরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা করা হয়েছে যে, হুজুর আকরম (সঃ) এর কদম মুবারক স্ফীত ছিলোনা, তিনি যখন হাটতেন তখন পুরা পা ফেলে হাঁটতেন। এটি বর্ণনা করেছেন ইবন আসাফের। [আরবী] ‘মাসিহুল কাদামাইন' এর অর্থও এটাই। কথিত আছে যে, হজরত ঈসা (আঃ) কে একারণে মসীহ বলা হতো। যেহেতু তাঁর পায়েও কোনোরূপ স্ফীতি ছিলোনা। আল্লাহতায়ালা সর্বাধিক জ্ঞাত। তাঁর মতে, ‘(দুপা দিয়ে পানি তরিৎগতিতে প্রবাহিত হয়ে পড়ে যেতো) –এ বিশেষণটি অন্যতম। এটি মাসিহুল কাদামাইন এর বিশেষণের অন্তভুক্ত নয়। এই বর্ণনা উপরোক্ত বর্ণনার পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়। তবে আসল কথা সেটাই যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দুটি বর্ণনার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা অবশ্য সম্ভব। এবং তা এই ভাবে, আখমাস এর অর্থ দাঁড়ায় পরিমাণমত স্ফীত ছিলো । পায়ের নীচের অংশ সমান্তরাল ছিলো না, আবার খুব উঁচুও ছিলোনা ।
হজরত আবদুল্লাহ্ ইবন বুরায়দা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) পায়ের সৌন্দর্যের দিক দিয়েও সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। তাঁর পায়ের গোড়ালী সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, তাঁর গোড়ালীতে গোশত কম ছিলো। [আরবী] ‘মানহুস’ শব্দটিকে কেউ বর্ণনা করেছেন সীন বর্ণ দিয়ে। ‘বাহরাইন' ও ‘ইবনুল আছীর' এর গ্রন্থকার একে সীন ও শীন উভয় বর্ণ দিয়ে বর্ণনা করেছেন। ‘শারেক’, গ্রন্থেও এরূপ উভয়প্রকার বর্ণনা রয়েছে। তবে কেউ কেউ আবার একে শীন বর্ণ দিয়ে মানহুস বর্ণনা করেছেন। যার অর্থ স্ফীত গোড়ালী। সাররাহ গ্রন্থে বর্ণনা এসেছে—কম গোশতবিশিষ্ট । এই কিতাবের লিখক শায়খ মুহাক্কেক শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী (রঃ) বলেন, আমার পীর ও মুর্শিদ শায়খ মুসা পাক শহীদ মুলতানী জীলানী (রঃ) এর পায়ের গোড়ালী এতো পরিষ্কার ও মসৃণ ছিলো যে, কোনো সুন্দর গন্ডদেশও এরকম হতে পারেনা। হুজুর পাক (সঃ) সৌন্দর্যের সাথে অনেকটা সাদৃশ্য এতে পাওয়া যায় ।
মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে সাইয়েদা মায়মুনা বিনতি ফারযাম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, আমি রসূলে খোদা (সঃ) কে দেখেছি । আমি তাঁর কদম মুবারকের তর্জনী আঙ্গুলের লম্বতা কখনও ভুলতে পারিনা তাঁর পায়ের তর্জনী আঙ্গুল পায়ের সমস্ত আঙ্গুলের চেয়ে লম্বা ছিলো । আহমদ ও তিরমিযী এরকম বর্ণনা করেছেন। হজরত জাবির ইবন সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ (সঃ) এর পায়ের তর্জনী আঙ্গুল অন্যান্য আঙ্গুলের তুলনায় দৃশ্যমান ছিলো। মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে, হুজুর পাক (সঃ) এর হাতের শাহাদাত আঙ্গুল অন্যান্য আঙ্গুলের তুলনায় লম্বা ছিলো। উক্ত বর্ণনাটি সম্পর্কে হজরত ইবন হাজার মক্কী (রঃ) বলেন, এ ধরনের কথা যদি কেউ বলে তাহলে তা সম্পূর্ণ ভুল। অবশ্য পায়ের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে তর্জনী আঙ্গুল অধিকতর লম্বা ছিলো। ‘মাকাসেদে হাসানা' গ্রন্থে উল্লেখ আছে, হজরত মায়মুনা বিনতি ফারযাম (রাঃ) এর নিছক বর্ণনার উপর যদি কেউ চিন্তা ভাবনা ব্যতীত নির্ভর করে বসে, তাহলে ভুল হবে। তবে তর্জনী আঙ্গুল লম্বা হওয়া পায়ের বেলায় সীমাবদ্ধ বলে ‘মসনদে ইমাম আহমদ' এ বর্ণনা করা হয়েছে। বায়হাকীর বর্ণনাও এরকমই।
এই কিতাবের লিখক শায়খ আবদুল হক মুহদ্দিছে দেহলভী (রঃ) বলেন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে—হুজুর পাক (সঃ) একদা শাহাদাত ও মধ্যমাঙ্গুলী মিলিত করে বললেন, আমার আবির্ভাব ও কিয়ামত এই দুই আঙ্গুলের ন্যায়। অর্থাৎ খুব কাছাকাছি সময়। তিনি কিয়ামতের পূর্বে তাঁর আবির্ভাবের ব্যাপারটা এভাবে বুঝালেন যেমন উক্ত দু আঙ্গুলের মধ্যে ব্যবধান। আবার কেউ কেউ এই হাদীছের ব্যাখ্যা এরূপ করেছেন যে, তাঁর আবির্ভাব ও কিয়ামত এ দুটি যে খুব লাগালাগি তার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। নতুবা দু আঙ্গুল মুবারক একত্রিত করার প্রয়োজন কি? এর উত্তর হচ্ছে এইযে, দু আঙ্গুলকে মিলিত করা দ্বারা অগ্রপশ্চাত হওয়ার ব্যবধান প্রকাশ পায়। কেউ বলেন, শাহাদাত ও মধ্যমাঙ্গুলী সমান সমান ছিলো । আবার একদল এরূপ বলেন, দুটি লাগালাগি থাকা ও তার আধিক্য প্রকাশার্থে ঐ সময় হুজুর পাক (সঃ) এর উক্ত দুই আঙ্গুল মুবারক মোজেজা স্বরূপ সমান সমান হয়ে গিয়েছিলো। ওয়াল্লাহু আলীম ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০২৬) পবিত্র বাহুদ্বয় | (০২৮) পায়ের গোছা মুবারক |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |