নবীগণ যে নিষ্পাপ, তা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত, বিশুদ্ধ হাদীছসমূহ, উম্মতের ঐক্যমত ও আকলী দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত আছে। একমাত্র সে অস্বীকার করতে পারে, যে মন মানসিকতার দিক দিয়ে অন্ধ।
إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ
-‘‘ওহে ইবলীস, আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই।’’
¶ সূরা হিজর, আয়াত নং-৪২।
وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (৩৯) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
-‘‘হে মওলা, তোমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত বাকী সবাইকে বিপথগামী করবো।’’
¶ সূরা হিজর, আয়াত নং- ৩৯-৪০।
এতে বোঝা গেল যে নবীগণ পর্যন্ত শয়তান যেতে পারে না। তাই সে তাঁদেরকে না পারে বিপথগামী করতে, না পারে কুপথে পরিচালনা করতে। তাহলে তাঁদের থেকে গুনাহ কি ভাবে প্রকাশ পেতে পারে? আশ্চর্যের বিষয় নবীদেরকে মাসুম স্বীকার করে শয়তান তাদেরকে বিপথগামী করার থেকে নিজের অপারগতা স্বীকার করছে। অথচ এ যুগের ধর্মদ্রোহীরা তাদেরকে গুনাহগার মনে করছে। বাস্তবিকই এরা শয়তান থেকেও নিকৃষ্ট।
مَا كَانَ لَنَا أَنْ نُشْرِكَ بِاللَّهِ مِنْ شَيْءٍ
-আমরা নবী সম্প্রদায়ের পক্ষে খোদার সাথে র্শিক করাটা অশোভনীয়।’’
¶ সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৩৮।
وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ
-‘‘যেটা তোমাদের নিষেধ করি, সেটা নিজের করবো, এ ধরনের ধারণা আমি করি না।’’
¶ সূরা হুদ, আয়াত নং-৮৮।
বোঝা গেল যে নবীগণ র্শিক ও গুনাহ করার ধারণাও কখনো করেন না। এটাই হচ্ছে নিঙ্কলুষতার হাকীকাত।
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي
-‘‘আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ। তবে যার প্রতি আল্লাহর দয়া রয়েছে।’’
¶ সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৫৩।
এখানে এ রকম বলা হয়নি যে, আমার আত্মা মন্দকর্মপ্রবণ, বরং বলেছেন- সাধারণ আত্মা জনসাধারণকে মন্দকর্মে অনুপ্রাণিত করে। কেবল ওসব আত্মাকে বিপথগামী করতে পারে না, যে গুলোর প্রতি খোদার বিশেষ রহমত রয়েছে। এ গুলো হচ্ছে নবীগণের আত্মা। তাঁদের আত্মা তাঁদেরকে ধোঁকা দিতে পারে না।
إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ
-‘‘আদমকে, নুহকে, ইব্রাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে আল্লাহ তা’আলা বিশ্বজগতে প্রাধান্য দিয়েছেন।’’
¶ সূরা আলে-ইমরান, আয়াত নং-৩৩।
এতে বোঝা গেল সমস্ত জগতের মধ্যে নবীগণ শ্রেষ্ঠ। জগতের মধ্যে নিষ্পাপ ফিরিশতাগণও রয়েছেন। আর ফিরিশতাদের বৈশিষ্ট হচ্ছে-
لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ
তাঁরা কখনও নাফরমানী করেন না।’’
¶ সূরা তাহরীম, আয়াত নং-৬।
যদি নবীগণ গুণাহগার হন, তাহলে ফিরিশতাগণ নিশ্চয়ই নবীদের উর্ধ্বে স্থান পেতেন।
لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ
-‘‘আমার প্রতিশ্রুত নবুয়তের সিলসিলা জালিমদের অর্থাৎ ফাসিকদের সাথে সংমিশ্রিত হবে না।’’
¶ সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১২৪।
এতে বোঝা গেল অনাচার ও নবুয়াত একত্রিত হতে পারে না। কুরআন করীম নবীদের উক্তি উদ্ধৃত করে ইরশাদ করেছেন-
قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِي ضَلَالَةٌ وَلَكِنِّي رَسُولٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ
-‘‘হে আমার কউম, আমার কাছে গুমরাহী বলতে কিছু নেই, আমি আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ।’’
¶ সূরা আ’রাফ, আয়াত নং-৬১।
এ আয়াতে لَكِنِّي শব্দ থেকে বোঝা গেল যে, গুমরাহী ও নবুয়াত একত্রিত করা যায় না। কেননা নবুয়াত হচ্ছে নূর আলো আর গুমরাহী অন্ধকার। আলো-অন্ধকারের একত্রিকরণ অসম্ভব।
এ হাদীছদ্বয় থেকে জানা গেল যে উল্লেখিত নবীদ্বয় শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত।
এতে বোঝা গেল হুযূর (ﷺ) এর আত্মা শয়তানী প্রভাব থেকে পবিত্র।
এতে বোঝা গেল, যাঁর প্রতি নবীদের সুদৃষ্টি রয়েছে, তিনিও শয়তান থেকে নিরাপদ থাকেন। তাই নবীদের প্রশ্নই আসে না।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৪৯) নবীরা নিষ্পাপ- যে অস্বীকার করে, খোদার গজব- জেনো তার উপরে | (০৫১) উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |