একঃ নবী করিম (দঃ) কে আল্লাহ তায়ালা গায়েবী ধন ভান্ডারের মালিক বানিয়েছেন। স্রষ্টার সম্মানে নবী করিম (দঃ) উপাদান ছাড়া কোন কিছু করতেন না। কোন সামান্য বস্তু বা দ্রব্যকে উপলক্ষ করে তিনি তাতে গায়েবীভাবে প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতেন। যেমন হযরত জাবের (রাঃ)-এর সামান্য খাসি ও রুটি দিয়ে তিনি দেড় হাজার সাহাবীকে পেট ভর্তি করে খানা খাওয়ায়ে জাবেরের মূল বকরী ও রুটি ফেরত দিয়েছিলেন। হযরত সালমান ফারছি (রাঃ) ৪০ উকিয়া স্বর্ণমুদ্রা আদায় করার শর্তে তাঁর মনিবের সাথে মুক্তিপণ নির্ধারণ করেছিলেন। নবী করিম (দঃ) কবুতরের ডিমের ন্যায় ছোট একখন্ড স্বর্ণ সংগ্রহ করে উক্ত ৪০ উকিয়া বা ১৬০০ (ষোল শত) দীনার আদায় করে দিলেন। উক্ত সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ ওজন করা হলে ষোলশত স্বর্ণমুদ্রার সমান হয়ে গেলো। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) কর্তৃক জঙ্গে তাবুকের সময় সংগৃহীত ২১টি খুরমা দিয়ে নবী করিম (দঃ) তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ত্রিশ হাজার লোককে খাওয়ানোর পর উক্ত ২১টি খুরমা আবু হোরায়রা (রাঃ) কে ফেরত দিয়ে বললেন-
"থলের মুখ না খুলে দু-হাত দিয়ে প্রয়োজনীয় খুরমা বের করে খাবে এবং বন্ধু-বান্ধব ও ফকির-মিছকিনকে খাওয়াবে"।
নবীজীর কথামত হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) উক্ত খুরমা ৯ হিজরী থেকে ৩৫ হিজরী পর্যন্ত নিজে খেয়েছেন এবং বন্ধু-বান্ধব ও ফকির-মিছকিনকে বিলিয়েছেন। হযরত ওসমান (রাঃ) যেদিন শহীদ হন, সেদিন উক্ত থলেটি লুট হয়ে যায়। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন,
আমি উক্ত ২৬ বৎসরে আনুমানিক বারশত মন খুরমা নিজে খেয়েছি এবং তিনশত মন আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি।
এই যে খুরমা তিনি খেলেন এবং খাওয়ালেন- এগুলো কোন্ বৃক্ষের খেজুর? নবী করিম (দঃ)- এর পবিত্র হাতের ছোঁয়ায়ই আল্লাহ তায়ালা গায়েবীভাবে উক্ত খেজুরে বরকত দিয়েছেন। (তরজুমানুস সুন্নাহ ও যিকরে জামিল গ্রন্থদ্বয় দ্রষ্টব্য)। উম্মে মা'বাদ- এর ছাগী ও রাখালের ছাগ-পালের শুক্রো বাঁটে দুধের নহর প্রবাহিত হওয়াও অনুরূপ মো'জেযা। নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেছেনঃ
أوتيت مفاتيح خزائن الأرض
"আমাকে জমিনের যাবতীয় ধন ভান্ডারের চাবি প্রদান করা হয়েছে"।
(মিশকাত)
ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহঃ) লিখেছেন-
ها ته جس طرف اٹھا غنی کردیا + موج بحر سخاوت په لاکهون سلام
অর্থ-"হুযুর (দঃ) -এর পবিত্র হাত যে দিকেই উঠেছে- তাকে ধনী বানিয়ে দিয়েছে। বদান্যতা সমুদ্রের তরঙ্গ সদৃশ এমন হাতের প্রতি লক্ষ লক্ষ সালাম"।
(হাদায়েকে বখশিষ)
[সুরাকার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহর এই জমিন নবী করিম (দঃ)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি জমিনকে যখন যে হুকুম করেন, জমিন তা পালন করে। শুধু জমিন কেন- আকাশের চাঁদ হুযুরের ইশারায় এদিক-সেদিক হেলে দুলে তাঁর সাথে খেলাধূলা করতো এবং কথা বলতো। গ্রন্থের শুরুতে হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর এ সম্পর্কীত রেওয়ায়াত বর্ণনা করা হয়েছে। মক্কায় আবু জাহল কর্তৃক আকাশের চাঁদ বিদীর্ণ করার চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় নবী করিম (দঃ) চাঁদকে দু'টুকরো করে দেখিয়েছেন। ৭ম হিজরীতে খায়বরের যুদ্ধ হতে ফেরত আসার সময় পথিমধ্যে সাহবা নামক স্থানে আকাশের ডুবন্ত সূর্য্যকে পুনরায় ফিরিয়ে এনে হযরত আলী (রাঃ) কে আসরের নামায আদায় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ), হযরত আনাছ (রাঃ) ও হযরত আস্থা বিন্তে ওমায়েছ (রাঃ) কর্তৃক উক্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে! সাল্ল্তানাতে মোস্তফা নামক গ্রন্থে মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রঃ) বিস্তারিতভাবে নবীজীর বিভিন্ন কর্তৃত্বের ঘটনা লিখেছেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৫২) জমিন কর্তৃক সুরাকার ঘোড়ার পা গ্রাস | (০৫৪) মদিনায় আনন্দ মিছিল |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |