ছহীহ্ ইবনুল হিব্বান-এ হযরত মুয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত:
عن معاذ بن جبل رضي الله عنه، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال:
"إنَّ اللهَ يطَّلعُ في ليلةِ النِّصفِ مِن شعبان، فيغفرُ لجميعِ خلقِه، إلا لمُشرِكٍ أو مُشاحِنٍ."হযরত মুয়ায ইবনে জবল থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- 'আল্লাহ তা'আলা শাবানের মধ্য রজনীতে স্বীয় সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্ঠি দান করেন এবং সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন, শুধু মাত্র মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেষীকে ছাড়া।
আলোচ্য হাদীসটিঃ
ইবনে হিববানের সূত্রে এই হাদীছে দশজন বর্ণনাকারী রয়েছেনঃ
"তিনি নির্ভরযোগ্য, প্রচুর ছিক্কাহ রাবীগণ তাঁর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন, ক) আবু আলী আল হায়্যানী, খ) ইমাম যাহাবীপ্রমুখ তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।, গ) ইবনে হিব্বান কিতাবুছ ছিক্কাতে বলেন, কোন সমালোচনা আমার জানা নেই।"
(তাহরীরঃ খ-৪, পৃ-৩৯)
"তিনি সত্যবাদী, তাঁর বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য কেননা ক) আবু হাতিম, খ) দুহাইম, গ) আব্দুর রহমান বিন সালেহ আমর বিন আলী প্রমুখ এট ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন।. ঘ) ইবনে হিববান তাঁকে কিতাবুছ ছিকাতে উল্লেখ করেছেন। ঙ) শায়খে বোখারী আলী ইবনিল মাদীনী ইমাম আবু যুরআহ.চ) ইমাম আবু দাউদ আল আজলী, ছ) ইয়াকুব ইবনে শাহীন প্রমুখ তাঁর হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে " কোন অসুবিধা নেই " বলে মন্তব্য করেছেন।"
(দেখুন তাহরীরঃ পৃ. ২/ ৩১০১)
"নির্ভরযোগ্য তবে ইরসাল বেশি করতেন। "
(উস্তাদের নাম বিলুপ্ত করে তার উপরন্ত ব্যক্তি থেকে হাদীস বর্ণনা করাকে ইরসাল বলে।)
"তিনি হযরত মুআযের সঙ্গি, সাহাবী নন, নির্ভরযোগ্য।”
(দেখুন কাশিফঃ ১/২৮১)
এ হাদীস শরীফটি حسن لذاته (হাসান লিযাতিহী)
প্রথম অভিমতঃ হাফি্য নুরুদ্দীন আলী ইবনে আবু বকর আল হাইসামী (মঃ ৮০৭) তাঁর 'মাজমায়ুয যাওয়ায়িদ’ নামক গ্রন্থে বলেছেন,
উক্ত হাদীসটি তাবরানী তাঁর 'আল-মুজামুল কাবীর ' এবং 'আওসাত ' গ্রনে্থ বর্ণনা করেছেন । উভয় গ্রন্থে রাবী ছিকাহ তথা বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য ।
(মাজমায়ুয যাওয়ায়িদ খ-৮, পৃ-৬৫)
দ্বিতীয় অভিমতঃ হাফি্য ইবনে রজব আল হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মু'আয ইবনু জাবাল রাদি্বয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন,
ইবনু হিববান হাদীসটিকে সহীহ (বিশুদ্ধ) আখ্যা দিয়েছেন। আর নির্ভরযোগ্যতার জন্য এটিই যথেষ্ট ।
(লাতাইফ আল মারিফঃ ইবনে রজব, ১/২২৪)
হাদীস পর্যালোচক আদনান আবদুর রহমান বলেন,
উক্ত হাদীসটি ফাযাইলুল আওকাত অধ্যায়ে ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেছেন । আর তার সনদ হাসান।
তৃতীয় অভিমতঃ আলোচ্য হাদীস সম্পরে্ক তাবরানী রচিত المعجم الكبير (আল মু'জামুল কবীর) গ্রন্থের মুহাক্কিক এবং বিশিষ্ট হাদীস পর্যালোচক বলেনঃ
শবে বরাতের হাদীসটি বহু সূতে্র বরি্ণত আছে । যারা সূত্রগুলো সম্পরে্ক অবগত তাদের নিকট হাদীসটি নিঃসনে্দহে সহীহ বলে পরিগণিত । বিশেষ করে যখন তার কিছু সূত্র حسن لذاته (হাসান লিযাতিহী) তথা সহীহ, যেমন হযরত মুআয রাদি্বয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ও হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কর্তৃক বরি্ণত হাদীসের সূত্রগুলো।"
(আলমু'জামুল কবীরের টিকাঃ খঃ ২০, পৃঃ ১০৮)
উপরোক্ত মন্তব্যের সারমর্ম হলো মু'আয রাদি্বয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত শবে বরাতের হাদীসটি মতনের দিক দিয়ে সহীহ, তবে তার সনদটি হাসান লিযাতিহী ।
চতুর্থ অভিমতঃ আলোচ্য হাদীসটির সূত্র পর্যালোচনা করে ওহাবী-লা মাযহাবীদের কট্টরপন্থী হাদীস পর্যালোচক নাসিরউদ্দীন আলবানী মন্তব্য করেন এভাবেঃ
حديث صحيح, روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا و هم : معاذ ابن جبل و أبو ثعلبة الخشني و عبد الله بن عمرو و أبي موسى الأشعري و أبي هريرة و أبي بكر الصديق و عوف ابن مالك و عائشة
হাদীসটি মূল মতনের (মূল বক্তব্য) দিক দিয়ে সহীহ। সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় জামাআত থেকে বিভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত। যা পরস্পরকে শক্তিশালী করে তোলে। যে সকল সাহাবী থেকে হাদীসটি বর্ণিত তাঁরা হচ্ছেন: ১. মুআ'য ইবনে জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ২. আবু ছা'লাবাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ৩. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ৪. আবু মূসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ৫. আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ৬. আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ৭. হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা।"
(সিলসিলাতুল আহাদিসা সহীহাঃ খ-৩, পৃ-১৩৮)
উপরে বর্ণিত সবকটি বর্ণনাকারীর হাদীস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-
و جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منها عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث, فما نقله الشيخ القاسمي في " إصلاح المساجد " ( ص ۱۰۷ ) عن أهل التعديل و التجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح, فليس مما ينبغي الاعتماد عليه ولئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل التسرع و عدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك. و الله تعالى هو الموفق.
السلسلة الصحيحة: 135 / 3
"সারকথা, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়খ কাসেমী থেকে তার প্রণিত "ইসলাহুল মাসাজিদ" গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তাদীল ইমামদের থেকে যে, "শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদীসনেই মর্মে" সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঘারতেড়া স্বভাবের, আর তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম।
(সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠা)
কট্টরপন্থী হাদীস পর্যালোচক নাসির উদ্দীন আলবানীর শিষ্য শুয়াইব আল আরনাউত্ব সহীহ ইবনে হিব্বান গ্রন্থের টীকায় এ হাদীস সম্পর্কে, বলেন-
قال الشيخ شعيب الأرناؤوط: حديث صحيح بشواهده
হাদিসটি অন্যান্য হাদিস সমর্থনে সহীহ এবং তার সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য
সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ১২/৪৮১
সঙ্গত কারণে আলবানী মূল হাদীসের ব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণার পর এভাবে মন্তব্য করেনঃ
وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب والصحة تثبت بأقل منها عدداً ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث
(السلسلة الصحيحة 135 / 3)
নির্যাস কথা হলো, এ হাদীসটি তার সকল সূত্রগুলোর বিবেচনায় নিঃসন্দেহে সহীহ বলে সাব্যস্ত হয়। এর তুলনায় কম সংখ্যক সূত্র দ্বারাও হাদীস সহীহ বলে সাব্যস্ত হয়। যদি কঠিন দুর্বলতা থেকে নিরাপদ থাকে। যেমনটি এ হাদীসের বেলায় রয়েছে।
সিলসিলাতুল আহাদিসাস সহীহাঃ খ-৩, পৃ-১৩৮
মোদ্দা কথাঃ মুআ'য বিন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত আলোচ্য হাদীস টির মূল বক্তব্য متن (মতন) নিঃসন্দেহে সহীহ এর অন্তর্ভুক্ত এবং হাদীস টির বিভিন্ন সূত্র حسن لذاته হাসান লিযাতিহী যা সহীহের অন্তর্ভুক্ত বটে। যেমনটি মন্তব্য করলেনঃ ইমাম হায়ছামী, ইমাম তাবরানী, ইমাম ইবনে হিব্বান, আদনান আব্দুর রহমান প্রমূখ মনীষী।
অনেক বড় বড় মুহাদ্দিসরাই এই হাদীসের তাহকীক করেছেন এবং একে সহীহ বলেছেন। অন্যদিকে হাদীসের তাহকিক তথা বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ওহাবী-লা-মাযহাবীরা যার সবচেয়ে বেশি ভক্ত, যার কিতবাদি অনুবাদ করে প্রচার করে থাকে, সেই নাসিরউদ্দীন আলবানীও শবে বরাতের এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। আবার তারই শিষ্য শুয়াইব আল আরনাউত্বও এই হাদীসটিকে সহীহ এবং তার সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য বলেছেন। তাই আপনাদের কাছে প্রশ্ন, তাহলে কেন আপনারা বার বার বলেন যে, শবে বরাতের ফযীলত নিয়ে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত নেই? উপরন্ত আপনাদের জ্ঞাতার্থে আরও বলছি, আপনাদের সবচেয়ে বড় গণ্যমান্য ইমাম আজম! ইবনে তাইমিয়্যাও শবে বরাতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীস গুলোকে তাহকীক করেছনে এবং এর ফযীলতকে স্বীকার করেছেন। ইবনে তাইমিয়্যা তার "ইক্তিদাউস-সিরাত আল মুস্তাকীম" নামক কিতাবে বলেনঃ
ومن هذا الباب ليلة النصف من شعبان فقد روى في فضلها من الأحاديث المرفوعة والآثار ما يقتضي أنها ليلة مفضلة وأن من السلف من كان يخصها بالصلاة فيها وصوم شهر شعبان قد جاءت فيه أحاديث صحيحة. لكن الذي عليه كثير من أهل العلم أو أكثرهم من أصحابنا وغيرهم على تفضيلها وعليه يدل نص أحمد لتعدد الأحاديث الواردة فيها وما يصدق ذلك من الآثار السلفية وقد روى بعض فضائلها في المسانيد والسنن وإن كان قد وضع فيها أشياء أخر (۷۸)
اقتضاء الصراط المستقيم: ج. ٢، ص. ١٣٦–١٣٧، اختيارات البعلي: ص. ٦٥
এ রাতের ফযীলতে বেশ কিছু মারফু হাদীস এবং আছার বর্ণিত আছে যা প্রমাণ করে যে এ রাতটি ফযীলতপূর্ণ। পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এ রাতে বিশেষভাবে সালাত আদায় করতেন। যে মতের উপর আমাদের মাযহাবের বা অন্যান্য মাযহাবের বহু সংখ্যক বরং বেশিরভাগ আলেম রয়েছেন তা হলো এই রাতটি অন্যান্য রাতের উপর ফযীলত রাখে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর স্পষ্ট কথার মাধ্যমে এটি জানা যায়। আর যেহেতু এ বিষয়ে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং পূর্ববর্তীদের আমল সেসকল হাদীসকে সত্যায়ন করে, এই রাতের কিছু ফযীলত সুনান ও মুসনাদ গ্রন্থসমূহতে উল্লেখিত রয়েছে তবে এ রাত সম্পর্কে কিছু জাল হাদীসও রয়েছে।
ইক্তিদাউস-সিরাত আল মুস্তাকীম: ০২/১৩৬-১৩৭
ইবনে তাইমিয়্যার এ উক্তি দ্বারা স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়, তাবেঈন, তবে তাবেঈন সহ সলফে সালেহীনের অনেকেই এ রাতকে ফযীলতপূর্ণ হিসেবে রায় দিয়েছেন এবং এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করেছেন।
তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “তুহফাতুল আহওয়াযী" তে মুবারকপুরী বলেন,
اعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أن لها أصلا فمنه.
জেনে নাও শাবান মাসের মাঝ রাত সম্পর্কে প্রচুর হাদীস এসেছে যা একত্রে প্রমাণ করে যে বিষয়টির শরয়ী ভিত্তি রয়েছে।
পরে তিনি একের পর এক বিভিন্ন রেওয়ায়েত উল্লেখ করে শেষে বলেনঃ
فهذه الأحاديث بمجموعها حجة على من زعم أنه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شيء والله تعالى أعلم (۸۰)
تحفة الأحوذي: ج ٣ ص ٣٦٦
অতএব এই সমস্ত হাদীস একত্রে তার বিরুদ্ধে দলীল যে দাবী করে শাবান মাসের মাঝ রাতের ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদীস প্রমাণিত হয়নি আর আল্লাহই ভাল জানেন।
তুহফাতুল আহওয়াযী: ০৩/৩৬৬
আপনারা ইবনে তাইমিয়্যা, আলবানী এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া (মৃ. ৭২৮ হিঃ) এর ইক্তিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (মৃ. ৭৯৫) এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীল নির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না ইবনে বায এর মত অন্তর ও বাহির উভয় দিক থেকে অন্ধ ব্যক্তির অন্ধ মত অনুসরণযোগ্য?
শেষ কথাঃ যদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন হাদীস নাও থাকত, তবে এই হাদীসটিই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। যদি অন্যান্য রাতের উপর এ রাতের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই থাকত, তবে বিশেষভাবে এই রাতের কথা উল্লেখ করারই বা কি প্রয়োজন? শুধু এই রাতকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মাধ্যমেই অন্যান্য রাতের উপর এর বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়।
উপরোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্টতই এটা প্রমাণিত হয় যে, এ রাত্রে আল্লাহ পাক তাঁর বিপুল সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করেন। যে রাত্রে আল্লাহ বিশেষভাবে ক্ষমার ওয়াদা করেছেন, সেই রাতে কাকুতি মিনতি করে তাঁর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া অনেক হাদীসেই নফল নামায পড়ে দোয়া করা, কোরআন তিলাওয়াত করে দোয়া করা, যিকির-আযকার ও দুরূদ শরীফ পাঠ করে দোয়া করা, ইত্যাদির প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং মধ্য শাবানের এই রাতে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার মাধ্যমে সালাত, যিকির, কোরআন তিলাওয়াত ও দুরূদ শরীফ পাঠ করাও প্রমাণিত হয়।
এজন্যই বহু ইমামগণই এ রাতের নফল ইবাদত করাকে মুস্তাহাব বলেছেন এবং নিজেরাও বেশি বেশি ইবাদতে লিপ্ত ছিলেন। যেমনঃ ইমাম শাফিঈ, ইমাম নববী, ইমাম বাযযার, ইমাম উকায়লী, ইমাম তিরমিযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হিমসহ আরও অনেকে।
অতএব, যারা এ কথা বলে থাকেন যে, শবে বরাতের কোন ভিত্তি নেই, এর ফযীলত নিয়ে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত নেই, তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের নামে মিথ্যাচার করেন এবং উম্মতকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও নেক আমল থেকে দূরে সরে রাখাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাদের এই হীন চক্রান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই ।